ইসলামিক বিষয়াদিইসলাম

মুতা বিবাহ জায়েজ না হারাম?

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুতা ও সাময়িক বিয়ের অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে অসংখ্য সহীহ হাদীসে এটাকে হারাম ঘোষণা করা হয়। 

 

যেমন এক হাদীসে এসেছে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধের কালে মুত’আ বিয়ে ও গৃহপালিত গাধার গোস্ত হারাম করেছেন। [বুখারী ৫১১৫, ৫৫২৩; আরও দেখুন বুখারীঃ ৪২১৬, মুসলিমঃ ১৪০৬, ১৪০৭]

 

কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, এরপর মক্কা বিজয়ের বছর সেটাকে আবার বৈধ করা হয়েছিল। কিন্তু সহীহ হাদীসে এসেছে যে, মক্কা থেকে বের হওয়ার আগেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এ জাতীয় বিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত হারাম করে দেয়া হয়েছে। [মুসলিম: ১৪০৬] 

 

এ হিসেবে মুত’আ বিবাহ প্রথমে খায়বারের যুদ্ধে হারাম করা হয়। এরপর মক্কা বিজয়ের সময় হালাল করা হয়, অথবা কোন কোন সাহাবী রাসূলের অগোচরেই না জানা অবস্থায় সেটা করেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের বছর আওতাসের পর্যন্ত হারাম করে দেয়া হয়। [যাদুল মা’আদ]

 

★যেহেতু স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ নিষেধ করেছেন,সুতরাং তারপর আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর যামানা,উমর ফারুক রাঃ এর যামান সহ কোনো যামানাতেই আর এটির আর অনুমতি ছিলোনা।

এর পরেও যারা করেছে,তারা হারাম কাজ করেছে। 

 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন, 

সুরা নিসার ২৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 

وَّ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ۚ کِتٰبَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ ۚ وَ اُحِلَّ لَکُمۡ مَّا وَرَآءَ ذٰلِکُمۡ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا بِاَمۡوَالِکُمۡ مُّحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ ؕ فَمَا اسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِہٖ مِنۡہُنَّ فَاٰتُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ فَرِیۡضَۃً ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا تَرٰضَیۡتُمۡ بِہٖ مِنۡۢ بَعۡدِ الۡفَرِیۡضَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۲۴﴾ 

 

আর নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এগুলো আল্লাহর বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ছাড়া অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিয়ে করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমর সম্ভোগ করেছ তাদের নির্ধারিত মাহর অর্পণ করবে। মাহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই।নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

 

এই আয়াতের অর্থ নিয়ে মুফাসসিরিনে কেরামগনদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।      

اخْتَلَفُوا فِي مَعْنَاهُ : فَقَالَ الْحَسَنُ وَمُجَاهِدٌ: أَرَادَ مَا انْتَفَعْتُمْ وَتَلَذَّذْتُمْ بِالْجِمَاعِ مِنَ النِّسَاءِ، بِالنِّكَاحِ الصَّحِيحِ، فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ أَيْ: مُهُورُهُنَّ .

 

وَقَالَ آخَرُونَ: هُوَ نِكَاحُ الْمُتْعَةِ ، وَهُوَ أَنْ يَنْكِحَ امْرَأَةً إِلَى مُدَّةٍ، فَإِذَا انْقَضَتْ تِلْكَ الْمُدَّةُ بَانَتْ مِنْهُ بِلَا طَلَاقٍ، وَتَسْتَبْرِئُ رَحِمهَا وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا مِيرَاثٌ، وَكَانَ ذَلِكَ مُبَاحًا فِي ابْتِدَاءِ الْإِسْلَامِ، ثُمَّ نَهَى عَنْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ…

وَإِلَى هَذَا ذَهَبَ عَامَّةُ أَهْلِ الْعِلْمِ: أَنَّ نِكَاحَ الْمُتْعَةِ حَرَامٌ، وَالْآيَةُ مَنْسُوخَةٌ “. انتهى

সারমর্মঃ

হাসান রহঃ এবং মুজাহিদ রহঃ বলেছেন যে এখানে উদ্দেশ্য হলো ছহীহ বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে সহবাস করার ক্ষেত্রে মোহরানা আদায় করা।

 

তবে কিছু মুফাসসিরিনে কেরামগন বলেছেন যে এখানে নিকাহে মুত’আ উদ্দেশ্য। তবে সেটি সম্পর্কে পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাঃ নিষেধ করে দিয়েছেন।

উক্ত আয়াতটি মানসুখ তথা রহিত।     

 

والذي عليه المحققون من أهل العلم: أن هذه الآية لا تدل على نكاح المتعة بوجه من الوجوه ، وإنما هي في عقد النكاح الصحيح ، وأن المقصود بالاستمتاع هنا مطلق التلذذ ، وأن الأجر هو الصداق ، وهذا قول الطبري في “تفسيره” (6/588) ، والمازري في “المعلم بفوائد مسلم” (2/131) ، والكاساني في “بدائع الصنائع” (2/273) ، والكيا الهراسي في “أحكام القرآن” (2/413) ، والجصاص في “أحكام القرآن” (2/186) ، وشيخ الإسلام ابن تيمية في “منهاج السنة النبوية” (4/188) ، والشنقيطي في “أضواء البيان” (1/236) .

সারমর্মঃ

মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামদের মতে এই আয়াত কোনোক্রমেই নিকাহে মুত’আর উপর বুঝায়না।

এটি বিবাহে ছহীহ এর উপরে বুঝায়।

বিনিময় দ্বারা  এখানে মোহরানা উদ্দেশ্য।  

 

 قال القرطبي في “الجامع لأحكام القرآن” (5/129) :” قَالَ ابْنُ خُوَيْزِ مَنْدَادُ: وَلَا يَجُوزُ أَنْ تُحْمَلَ الْآيَةُ عَلَى جَوَازِ الْمُتْعَةِ ، لِأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ نِكَاحِ الْمُتْعَةِ وَحَرَّمَهُ ، وَلِأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: (فَانْكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ)، وَمَعْلُومٌ أَنَّ النِّكَاحَ بِإِذْنِ الْأَهْلِينَ هُوَ النِّكَاحُ الشَّرْعِيُّ بِوَلِيٍّ وَشَاهِدَيْنِ ، وَنِكَاحُ الْمُتْعَةِ لَيْسَ كَذَلِكَ “. انتهى .

সারমর্মঃ

ইমাম কুরতুবি রহঃ বলেছেন এই আয়াতকে নিকাহে মুত’আর উপর হামল করে সেটাকে জায়েজ আখ্যা দেওয়া জায়েজ নেই।

কেননা রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজে নিকাহে মুত’আ করা থেকে নিষেধ করেছেন।

 

وقال الكاساني في “بدائع الصنائع” (2/273) :” وَأَمَّا الْآيَةُ الْكَرِيمَةُ فَمَعْنَى قَوْلِهِ: فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ النساء/24، أَيْ: فِي النِّكَاحِ ؛ لِأَنَّ الْمَذْكُورَ فِي أَوَّلِ الْآيَةِ وَآخِرِهَا: هُوَ النِّكَاحُ؛ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى ذَكَرَ أَجْنَاسًا مِنْ الْمُحَرَّمَاتِ فِي أَوَّلِ الْآيَةِ فِي النِّكَاحِ ، وَأَبَاحَ مَا وَرَاءَهَا بِالنِّكَاحِ، بِقَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ: وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْالنساء/24، أَيْ: بِالنِّكَاحِ، وقَوْله تَعَالَى: مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ أَيْ: مُتَنَاكِحِينَ، غَيْرَ زَانِينَ.

وَقَالَ تَعَالَى فِي سِيَاقِ الْآيَةِ الْكَرِيمَةِ: وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ مِنْكُمْ طَوْلا أَنْ يَنْكِحَ الْمُحْصَنَاتِ النساء/25 ذَكَرَ النِّكَاحَ، لَا الْإِجَارَةَ وَالْمُتْعَةَ ، فَيُصْرَفُ قَوْله تَعَالَى: فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ إلَى الِاسْتِمْتَاعِ بِالنِّكَاحِ “.

সারমর্মঃ

এই আয়াতের শুরু শেষ সব ক্ষেত্রেই বিবাহের আলোচনা চলছে।

কেননা এখানে মহান রব্বুল আলামিন যাদেরকে বিবাহ করা হারাম,সেই সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন।

সুতরাং এখানে  নিকাহে মুত’আ নয়  বিবাহই উদ্দেশ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link