ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

লুঙ্গি পড়ে নামাজ হবে কি?

আরব দেশের সর্বাধিক প্রচলিত পোশাক ছিল ‘ইজার ও রিদা’। একটি চাদর শরীরের নিম্নাংশে জড়ানো এবং একটি চাদর শরীরের ওপরাংশে কাঁধের ওপর জড়ানো। বতর্মান যুগে এই প্রাচীন আরবীয় পোশাক প্রায় অবলুপ্ত হয়েছে। শুধু হজের সময় আমরা এই পোশাক দেখতে পাই।

হজের সময় পুরুষ হাজি সাহেবরা শরীরের নিম্নাংশে যে চাদর বা সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করেন তাকে ইজার বলা হয়। সাধারণভাবে আমরা ইজার বলতে সেলাইবিহীন লুঙ্গি বা খোলা লুঙ্গি বলতে পারি।

মহানবী (সা.) বিভিন্ন পোশাক পরিধান করতেন। তিনি জামা (কামিস) পছন্দ করতেন।

তবে অগণিত হাদিসের আলোকে দেখা যায়, ব্যবহারের আধিক্যের দিক থেকে ইজার ও রিদা বা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদরই তিনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন।

লুঙ্গির আয়তন

মহানবী (সা.)-এর লুঙ্গি পরিধানের কথা অগণিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ব্যবহৃত লুঙ্গির আয়তন সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনাগুলোর সূত্র নিয়ে কারো কারো আপত্তি আছে।

তবে সব বর্ণনা একত্র করা হলে সেখান থেকে আমরা বিশেষ বিধান পাই।

এ বিষয়ে ইমাম ওয়াকিদি (রহ.) দুর্বল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গি ছিল চার হাত এক বিঘত লম্বা ও এক হাত এক বিঘত চওড়া। তিনি জুমা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য তা পরিধান করতেন।’ এতে প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের ব্যবহৃত লুঙ্গি আমাদের লুঙ্গির মতোই বা তার চেয়ে একটু কম লম্বা ছিল এবং তা আমাদের দেশে প্রচলিত লুঙ্গির চেয়ে অনেক কম চওড়া ছিল।

লুঙ্গি পরিধানের পদ্ধতি

হাদিস শরিফের ভাষ্য থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) লুঙ্গির ওপরের প্রান্ত কোমরে বাঁধতেন।

  এক হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী (সা.) নাভির নিচে লুঙ্গি পরতেন। ফলে নাভি লুঙ্গির ওপরে থাকত এবং দেখা যেত। মুহাম্মাদ ইবনে সাদ হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি দেখেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) নাভির নিচে লুঙ্গি বেঁধেছেন এবং তাঁর নাভি বেরিয়ে রয়েছে। আর আমি ওমর (রা)-কে দেখেছি, তিনি নাভির ওপরে লুঙ্গি পরিধান করেছেন। আলী (রা.) নাভির ওপরে লুঙ্গি বাঁধতেন বলে বর্ণিত হয়েছে।’ (আল জামেউস সহিহ)

তবে হানাফি মাজহাব অনুসারে বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী নাভি সতরের অন্তর্ভুক্ত। তাই নাভি খোলা রাখা যাবে না। তবে মনে রাখতে হবে, কিছুতেই টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরিধান করা যাবে না। এ বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গির নিম্নপ্রান্ত ‘নিসফ সাক’ বা পায়ের নলার মাঝামাঝি থাকত। সাহাবিরা তাঁর অনুকরণে লুঙ্গি পরিধান করতেন। উসমান (রা.) গোড়ালি ও হাঁটুর মাঝামাঝি (নিসফে সাক) পর্যন্ত ঝুলিয়ে লুঙ্গি পরিধান করতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)

এভাবে লুঙ্গি পরিধান করতেন। আর হজরত ইবনে আব্বাস (রা) তাঁর সামনের দিক থেকে লুঙ্গির প্রান্ত নামিয়ে দিতেন, যাতে লুঙ্গির প্রান্ত পায়ের ওপর পড়ে যেত আর পেছন থেকে তা উঠিয়ে উঁচু করে পরতেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এভাবে লুঙ্গি পরিধান করতে দেখেছি।

এখানে লক্ষণীয় যে সাধারণভাবে লুঙ্গির সঙ্গে চাদর পরাই ছিল আরবদের সাধারণ পোশাক। এ জন্য লুঙ্গির দায়িত্ব ছিল শরীরের নিম্নাংশ আবৃত করা। তবে পোশাকের স্বল্পতার কারণে কখনো কখনো রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং অনেক সময় সাহাবিরা একটিমাত্র লুঙ্গি পরিধান করেই চলাফেরা করতেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ইজার দিয়েই শরীরের উপরিভাগের কিছু অংশ আবৃত করার চেষ্টা করতেন। এ ক্ষেত্রে ইজারের পরিধানপদ্ধতি ও তার উপরিভাগ ও নিম্নপ্রান্ত অবস্থানে কিছু হেরফের হতো।

লুঙ্গি ছোট হলে তাঁরা ওপরে বর্ণিত নিয়মে কোমরে লুঙ্গি বাঁধতেন এবং শরীরের উপরিভাগ সম্পূর্ণ অনাবৃত রেখে চলাফেরা করতেন। আর লুঙ্গির প্রস্থ বা আকার একটু বড় হলে তা তাঁরা কাঁধের ওপর দিয়ে জড়িয়ে পরতেন। এতে একটি লুঙ্গিতেই তাঁদের কাঁধ থেকে হাঁটুর নিম্ন পর্যন্ত আবৃত হয়ে যেত। এখানে উল্লেখ্য যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন রঙের লুঙ্গি পরিধান করেছেন। লাল, কালো, সাদা, সবুজ, হলুদ ও ডোরাকাটা বা মিশ্রিত রঙের লুঙ্গি তিনি পরিধান করেছেন।

 

শাইবান ইবনু ফাররূখ (রহ.) আবু বুরদাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাযি.) এর কাছে গেলে তিনি আমাদের সম্মুখে ইয়েমেনের প্রস্তুত করা মোটা কাপড়ের একটি লুঙ্গি ও মুলাববাদাহ্ নামক একটি চাদর বের করলেন। 

তিনি বলেন, অতঃপর তিনি (আয়েশা) আল্লাহর কসম করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দুটি বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর: ৫৩৩৫

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link