সিগারেট খাওয়া কোন যুক্তিতে হারাম?

Smocking । Haram। Halal। Quran । Hadith। Muslim। Islam। Allah। Order। Sariah। 

 

ধূমপান শব্দটি কোরআনে সরাসরি নেই, হাদিসেও সরাসরি নেই। আল্লাহ্‌র নবীর যুগে কেও বিড়ি/সিগারেট খায়নি, তখন এটা ছিলইনা, এর ব্যপারে হুকুম আমাদেরকে বের করতে হবে ইসলামের মৌলিক নীতিমালা দিয়ে। ইসলামি শরীয়ার মৌলিক নীতিমালা দিয়ে আমরা দেখবো যে, ধূম্পানের ব্যাপারে হুকুম কি। এখানে বিভিন্ন স্কলারদের ঐক্যমতকেই আমরা তুলে ধরবো ।

ধূমপান মাকরুহ না হারামঃ উক্ত প্রশ্নটি ডঃ জাকির নায়েক কে করা হলে তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা নিচে তুলে ধরা হল-

উত্তরঃ ইসলামে ধূমপান অনুমোদিত কিনা এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন ফতোয়া দিয়েছেন। পূর্ববর্তী আলেমরা সে সময়ের জ্ঞানের আলোকে বলেছিলেন, এটা মাকরূহ। এখন বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে বিশেষজ্ঞদের মতামতটাও পরিবর্তিত হয়েছে।

কেননা সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

“….وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ….”

অর্থঃ “……তোমরা তোমাদের নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না।…..”

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায় ধূমপানের কারণে। যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায়, তাদের মধ্যে ৯০% হল ধুমপানের কারণে। যারা ব্রংকাইটিসে মারা যায় তার ৭০%, হৃদরোগের কারণে যারা মারা যায় তার ২০%-এর কারণ ধূমপান। এ ধুমপান ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। সিগারেটের মধ্যে থাকে ক্ষতিকর ‘নিকোটিন’ ও ‘টরে’। সিগারেট শুধু ধূমপায়ীরই ক্ষতি করে না বরং তার প্রতিবেশীরও ক্ষতি করে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, চেইন স্মোকারদের স্ত্রীদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা বেশি। কারণ, একটিভ স্মোকিং তো ক্ষতিকর বটেই, প্যাসিভ স্মোকিং আরও বেশি ক্ষতিকর কেননা প্যাসিভ স্মোকিং-এ ধূমপায়ীর ধোঁয়াটা আরেকজনের ফুসফুসে প্রবেশ করে। ধূমপান করলে ধূমপায়ীর ঠোঁট, দাতের মাড়ি, আঙ্গুল কালো হয়ে যাবে। গলায় ঘা হবে, পেপটিক আলসার হবে, কোষ্ঠকাঠিন্য হবে, যৌনশক্তি কমে যাবে, ক্ষুধা কমে যাবে, স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে। এমনকি স্মৃতি শক্তিও কমে যাবে।

এসব গবেষনার ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে আলেমরা ৪০০-এর বেশি ফতোয়া দিয়েছেন যে, ধূমপান করা হারাম। তাই এটা কারও ভালো লাগুক বা না লাগুক, ইসলামে এটার অনুমতি নেই। আর পান খাওয়ার ব্যাপারে কথা হল, পানে তামাক থাকলে তা হারাম এবং তামাক না থাকলে খাওয়ার অনুমতি আছে। অর্থাৎ ইসলামে যেকোনভাবে তামাক নেয়াটাই নিষিদ্ধ।

সূত্রঃ

public Lecture about “Dress Code”

Dr. Jakir Naik

 

শরীয়ার দিক থেকে ধূমপান সম্পূর্ণ হারাম, এটা অনেকেই না বোঝে বলে মাকরুহ !হারাম হওয়ার কারণ সমূহ আমরা নিচে বিস্তারিত ভাবে দেখবো-

১। আল্লাহর অধিকার খর্ব করাঃ আপনার হাত, পা, দেহ যা আপনি আপনার ভাবছেন তা কি সত্যই আপনার? আল্লাহ আপনাকে কিছু দিনের জন্য এই সম্পত্তি গুলো দিয়েছেন, এবং এদের সম্পর্কে করাই গণ্ডায় হিসেব আপনাকে আল্লাহর কাছে দিতে হবে? আপনার নিজের দেহকে সুস্থ সঠিক ভাবে দেখে রাখা আপনার দায়িত্ব। আর আল্লাহর সম্পত্তিকে দেখে রাখা এটা আপনার কাছে আল্লাহর অধিকার। আপনি যদি ধূমপায়ী হোন তাহলে লক্ষ্য করুন কিভাবে আপনি আল্লাহর অধিকার খর্ব করছেনঃ

ক। ধূমপান করা হারাম কারণ সিগারেট একটি আত্মস্বীকৃত ক্ষতিকারক বস্তু। সিগারেটের গায়ে লিখা থাকে ‘ধূমপানে মৃত্যু ঘটে’ ‘ধূমপান শাস্ত্যের জন্য ক্ষতিকর’। আল্লাহ তা আলা বলছেন :”আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু”। {সুরা নিসা ২৯} । আল্লাহ দয়া করে একটি দেহ দিয়েছেন, একে ধ্বংস করা হারাম করে দিয়েছেন। আত্মহত্যা সে জন্য হারাম। দেহের ক্ষতি করা যেহেতু হারাম সে জন্য ধূমপান করা হারাম। আল্লাহ আরও বলেন-

“তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন”। {সুরা বাকারা ১৯৫}।কাজেই এটা সরাসরি আল্লাহ্‌র নির্দেশ তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না ধূমপানকারী নিজের জীবনকে মৃত্যুর দিখে ঠেলে দিচ্ছে এটা সরাসরি আল্লাহ্‌র হুকুমের লঙ্গন অতএব এটা হারাম।

খ। ধূমপানের কারনে ধূমপায়ীর ঠোঁটের সৃষ্টিগত রূপের বিকৃতি হয়, আর কোন অঙ্গ ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করা হারাম এবং তা শয়তানের কাজ। শয়তান আপনাকে দিয়ে এটি করাবে বলে আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছে এভাবেঃ

“আর অবশ্যয় আমি তাদের পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দিব এবং অবশ্যয় তাদেরকে আদেশ দিব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যয় তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যয় তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবক রুপে গ্রহন করে তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল”। (সুরা নিসাঃ ১১৯)।

গ। আল্লাহ আপনাকে যে সম্পত্তি দিয়েছেন তা আপনার নিকট আল্লাহর আমানত। কি করে আপনি আল্লহর আমানত ধংস করতে সাহস পান? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সম্পদ বিনষ্ট করা হারাম করেছেন।’ – (বুখারী ও মুসলিম) । আর ধূমপান সম্পদ ধ্বংসকারী যা আল্লাহ তা’য়ালা পছন্দ করেন না। আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন, “তোমরা অপব্যয় অপচয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী লোকেরা শয়তানের ভাই।” (সূরা বনী ইসরাইলঃ আয়াত ২৬-২৭) আর ধূমপান করার অর্থই হচ্ছে অপচয় (খরচ), যা শয়তানী কাজের অন্তর্গত। শইতান চায় আপনি যেন তার ভাই হয়ে শইতানের দল ভারি করেন এবং জাহান্নামে নিজের নাম লিখে নেন, তাই শইতানের প্ররোচনায় আপনি অপচয় করছেন।

আপনি কি ভেবেছেন সে সময়ের কথা যখন আপনার অঙ্গগুলো কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, সেদিন আপনি কি করবেন? আল্লাহ বলেন,

“যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুণ্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে। এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে যে আল্লাহ সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।তোমরা দুনিয়ার অপরাধ যখন লুকাতে ছিলে, তখন তোমাদের এই চিন্তা ছিল না যে, কোন এক সময় তোমাদের নিজেদেরই কান, তোমাদের চোখ এবং তোমাদের দেহের চামড়া তোমাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। বরং তোমরা তো মনে করেছিলে যে, তোমাদের অনেক কাজ সম্পর্কে আল্লাহও খবর রাখেন না। ( সুরা- হা মীম আস-সাজদাঃ ১৯-২২)

২। আল্লাহর বান্দার (মানুষের) অধিকার খর্ব করাঃ আল্লাহকে ভয় করুন কারণ সেদিন বেশি দূরে নয় যে দিন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, আর সবাই আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে যে ও আল্লাহ এই ব্যাক্তিকে তুমি শাস্তি দাও কারণ পৃথিবীতে সে আমাদের কষ্ট দিয়েছে, অত্যাচার করেছে, আমাদের ক্ষতি সাধন করেছে। আপনি ধূমপান করে কিভাবে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন, তথা মানুষের অধিকার খর্ব করছেন টা নিচে তুলে ধরা হলো-

ক। কোন মানুষকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আর আপনি অহরহ এই হারাম কাজটি করছেন আপনার পাশের ভাইটিকে কষ্ট দিয়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না এবং অপরের ক্ষতি সাধন করো না।’ (মুসনাদ আহমদ)। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ো আখিরাতে বিশ্বাস করে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (সহিহ বোখারী)। আর ধূমপান এমনই একটা বস্তু যা নিজের ক্ষতির সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী লোকের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায় এবং ধন-সম্পদেরও অপচয় হয়। দুর্গন্ধের কথা বিবেচনা করে পিয়াজ রসূন(কাঁচা) খেয়ে মসজিদে আসা নিষেধ আছে। যাবের ইবন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলছেন যে ব্যাক্তি এই সবজিটি খায় সে যেন আমাদের মসজিদের কাছেও না আসে নিশ্চই ফেরেশতাঁরা কষ্ট পায় সে জিনিষ এ যে জিনিষ এ মানুষ কষ্ট পায় (সহিহ মুসলিম)। ধূমপান কারীর কাছে অধূমপায়ীরা যেমন কষ্ট পায় ফেরেশতারাও কষ্ট পায় তাহলে ধূমপান কারীর কাছে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতারা আসবে না। এজন্য ধূমপান কারী বে-ঈমান হয়ে মারা যাবার আশঙ্কা খুব বেশি কারণ তাদের কাছে মৃত্যুর সময় রহমতের ফেরেশতা নাও আসতে পারেনা। আপনি জানেন না কখন আপনি মারা যাবেন, এমনও তো হতে পারে যে ধূমপান করা অবস্থায় আপনি মারা গেলেন। তখন আপনার কাছে রহমতের ফেরেস্তারা থাকবেনা, শইতান আপনাকে গ্রাস করে নিবে। আপনি কি বে-ঈমান হয়ে মারা যেতে চান? নিজেকে প্রশ্ন করুন।

গ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ “আমার উম্মতের সবাইকে মাফ করা হবে কিন্তু পাপকার্য প্রচারকারীকে মাফ করা হবে না”।

আর ধূমপানকারী হচ্ছে গুনাহকে প্রকাশকারী অতএব তার ক্ষমা নেই। আপনাকে দেখে আপনার সন্তান, বন্ধু, প্রতিবেশী ধূমপায়ী হচ্ছে। আপনি ভাবুন তো একবার, আপনি নিজ হাতে নিজ সন্তানকে পাপের কাজ দেখিয়ে দিচ্ছেন, তাকে পথ দেখাচ্ছেন জাহান্নামের লেলিহান শিখার দিকে, আপনি কি সত্যই একজন বাবা? একই ভাবে আপনি কি সত্যই একজন বন্ধু, ভাল প্রতিবেশী, সর্বোপরি একজন মুসলিম? তাহলে কি করে অন্য মুসলিমকে জাহান্নামের পথ দেখাচ্ছেন? মদ্যপানের ক্ষতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “এর গুনাহ, লাভের (উপকারের) চেয়ে অনেক বড়।” (সূরা আল-বাকারাঃ আয়াত ২১৯) তেমনি ধূমপানের মধ্যেও উপকার পাওয়া তো দূরের কথা বরং এর পুরোটাই ক্ষতিকারক।

সেদিন আপনি কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবে আপনার স্মার্টনেস, মিথ্যা ভাব, অহংকার। আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তাহলে খুব বেশি দেরি নয়, অল্প কয়েকদিন পরই আপনি আল্লাহর সামনে অধূমপায়ী ভাইদের দ্বারা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হবেন। আপনি কি প্রস্তুত?

৩। আরও কিছু কারনঃ

ক। রাসুল সাঃ বলছেন, যে ব্যাক্তি যার সঙেগ মিল রাখে, সাদৃশ্যতা রাখে কিয়ামতে সে তার সাথেই উঠবে (সুনানে আবু দাওদ)। ধূমপান কারীর নাক মুখ দিয়ে ধূয়া বের হয় আর নাক মুখ দিয়ে ধূয়া বের হবে দোজখে যারা যাবে, জাহান্নামীদের । আর যে ব্যাক্তি দুনিয়েতে বসে জাহান্নামীদের সঙেগ সাদৃশ্যতা পালন করলো, তার স্থান জাহান্নামেই হবে।

খ। ধূমপায়ীর অভ্যন্তরে ধূমপানের জন্য ধোঁয়া প্রবেশ করে, আর ধোঁয়া তৈরি হয় আগুন থেকে, আগুন ভক্ষন করা হারাম। নিশ্চয় আল্লাহ তা’লা আমাদের খাবারের জন্য আগুন ও ধোঁয়া তৈরি করেন নাই।

গ। ধূমপায়ী বাথরুমেও ধূমপান করেন। বাথরুম মলমুত্র ত্যাগ করার জায়গা, খাওয়ার জায়গা নয়। ধূমপানের নেশা কতটুকু তীব্র তা এ থেকেই বঝা যায় যে, বাথরুমের দুর্গন্ধও ধূমপায়ীকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে পারেনা। রাসুল (সা) টয়লেটে যাওয়ার পূর্বে দোয়া করতেন যে ( আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ’যুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ- ও আল্লাহ শইতান ও শইতানের খারাপ কাজ থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)। আর কি করে সেখানে একজন মুসলিম বাথরুমে গিয়ে ধূমপান করে? নিঃসন্দেহে ধূমপান একটি নেশা, যারা নেশা হিসেবে স্বীকার করতে চান না তারা সে সকল মদ্যপায়ীর মতো যারা বলেন, আমি মদ পান করি কিন্তু আমার নেশা হয়না।

হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াককাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘যে বস্ত্ত অধিক পরিমাণে গ্রহণ নেশা সৃষ্টি করে তা সামান্য পরিমাণে গ্রহণও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন’।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৫৬০৮, ৫৬০৯, সহীহ ইবনে হিববান হাদীস : ৫৩৭০।

আর নেশা সম্পর্কে হাদিস যা বলে তা হলো-

كل مسكر حرام

‘সকল নেশাসৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম’

এটি একটি ‘মুতাওয়াতির’ হাদীস। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় মুতাওয়াতির ঐ সকল হাদীসকে বলে, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। (দ্র. ফতহুল বারী ৩/৭৩)

 

ধূমপান যেহেতু নেশা তৈরি করে তাই চেইন স্মোকার, নন চেইন স্মোকার সকলের জন্য কম/ বেশি সকল ধরনের ধূমপানই হারাম। আর ভাবুন তো যদি ধূমপান নেশাই না হয় তাহলে কুফল থাকার পরেও আপনি কেন এটা ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না। আপনি ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না বা পারছেন না বলেই এটা আপনার জন্য নেশা।

শেষ কথাঃ কারো জন্য একটা হাদিস বা আয়াতই যথেষ্ট, আবার কারও জন্য হাজারটা প্রমানও যথেষ্ট নয়। কারন দ্বিতীয় দল ঠিক তাদের মতো যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন-

[ছুম্মুম, বুক্মুন, উমউন, ফাহুম লা- ইয়ারজিউন-{তারা বধির, মুক, অন্ধ; কাজেই তারা (হিদায়াতের দিকে) ফিরে আসবেনা}] (সুরা-আল বাকারাঃ ১৮)।

আপনি জানার পরও যদি বিশ্বাস না করেন,না মানেন তাহলে আপনার অন্তরকে আল্লাহ যে কোন সময় মোহর মেরে দিতে পারেন। আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয় যারা কুফরি করেছে তাদেরকে তুমি ভয় দেখাও আর না দেখাও উভয়টাই তাদের জন্য সমান, তারা ঈমান আনবেনা। আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানের উপর মোহর করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখে আছে আবরণ আর তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি”। (সুরা-আল বাকারাঃ৬-৭)।

আপনার অন্তর আল্লাহ কর্তৃক মোহর মেরে দেওয়ার পূর্বেই সতর্ক হয়ে যান।

অতএব, ধূমপান বর্জন করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চান, যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা করে, আল্লাহ তার সাহায্য করেন। আর ধৈর্য্য ধারণ করুন কেননা আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। রাতের অন্ধকারে এবং আযান ও নামাযের পরে এই বলে দু’আ করুনঃ হে আল্লাহ ! আমাদের অন্তরে ধূমপানের প্রতি ঘৃনা (বিতৃঞ্চা) সৃষ্টি করে দিন এবং এটা খারাপ মনে করে আমাদেরকে এ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক প্রদান করুন।(আমীন)। 

 

শরীয়তের বিধানের সকল কিছুর স্পষ্ট দলীল নেই। আর না থাকলে কোন জিনিস যে হালাল, তা নয়। শরীয়তের স্পষ্ট উক্তিসমুহ থেকে ফকীহগন এমন কিছু নীতি নির্ণয় করেন, যার দ্বারা বলা যায় কোনটা হালাল, আর কোনটা হারাম। যে সকল নীতির মাধ্যমে বিড়ি-সিগারেটকে হারাম করা হয়, তার কিছু নিম্নরুপঃ-

 

(ক) এতে রয়েছে অনর্থক অর্থ অপচয়। আর ইসলামে অপচয় হারাম।

(খ) এতে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি। আর যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম।

(গ) বেশি পরিমাণ পান করলে, তাতে জ্ঞানশূন্যতা আসতে পারে। আর যাতে নেশা, মাদকতা ও জ্ঞানশূন্যতা আসে, ইসলামে তা হারাম।

 

(ঘ) এতে দুর্গন্ধ আছে। এর দুর্গন্ধে অধূমপায়ীরা কষ্ট পায়। সুতরাং তা পবিত্র জিনিস নয়। আর ইসলাম পবিত্র জিনিস খাওয়াকে হালাল এবং অপবিত্র জিনিস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *