বমি: বমির পোশাক: শিশুর বমি কি নাপাক?
বমি ও এ জাতীয় কিছু জিনিস মৌলিক পবিত্রতা থেকে পরিবর্তন হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ প্রমাণ পাওয়া যায় নি, এ ব্যাপারে আম্মার (রাঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
« إِنَّمَا تَغْسِلُ ثَوْبَكَ مِنَ الْبَوْلِ وَالْغَائِطِ وَالْمَنِىِّ وَالدَّمِ وَالْقَىْءِ»
অর্থাৎ: তোমার কাপড়ে পেশাব, পায়খানা, বমি, রক্ত ও মনি লাগলে তা ধুয়ে ফেল। কিন্তু হাদীসটি যঈফ। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
সহীহ সূত্রে আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَاءَ فَأَفْطَرَ فَتَوَضَّأَ »
অর্থাৎ: একদা মহানাবী (ﷺ) বমি করার পর ইফতার করলেন, অতঃপর ওযূ করলেন।
[আবূ দাউদ, সনদ সহীহ হা/ ২৩৮১; তিরমিযী হা/ ৮৭; আহমাদ ২/৪৪৩ প্রভৃতি]
এ হাদীসে বমি নাপাক হওয়ার কোন প্রমাণ নেই। এ হাদীস এটাও প্রমাণ করে না যে, বমি করার ফলে ওযূ করা ওয়াজিব। এর দ্বারা ওযূ ভঙ্গেরও কোন প্রমাণ নেই। শুধু বমনের কারণে ওযূকে শরীয়াত সম্মত করা হয়েছে। কেননা শুধু মহানাবী (ﷺ) এর কর্মটিই কোন আমল ওয়াজিব হওয়ার উপর প্রমাণ করে না।
ব্যাপারটি এমন নয় যে, যে সব বস্ত্ত ওযূ ভঙ্গ করে তা নাপাক হিসেবে গণ্য হবে। এটা ইবনে হাযম (রাহি.) এর অভিমত এবং এটা শাইখুল ইসলাম তার ফাৎওয়ায় গ্রহণ করেছেন।
বমি লাগা পোশাকে সালাত হওয়া প্রসঙ্গে
উক্ত পোষাকে ছালাত হবে। অতএব মুছাল্লীর রুচি হ’লে তাতে ছালাত আদায় করবে নতুবা তা পরিবর্তন করবে। কারণ বমি নাপাক হওয়ার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ, আলবানী, শাওকানী, শায়খ বিন বায, উছায়মীন প্রমুখ বিদ্বান বমিকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে গণ্য না করে একে সাধারণভাবে পবিত্র বলেছেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/২২২ ; ইরওয়া ১/১৪৮; তামামুল মিন্নাহ ১/৫৪; আস-সায়লুল জার্রার ১/৩০; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/৩৫২)। অধিক পরিমাণে বমি হ’লে ছালাত ছেড়ে দিবে এবং পরিচ্ছন্ন হয়ে ছালাতে যোগদান করবে। আর ছালাতের বাইরে বমি হ’লে বমিযুক্ত কাপড় কেবল ধুয়ে নিবে। তবে শিশুদের বমি কাপড়ে লাগলে বার বার ধোয়া লাগবে না। কারণ শিশুদের বমির বিষয়টি ভিন্ন (ইবনুল ক্বাইয়িম, তোহফাতুল মাওদূদ ২১৮ পৃঃ)।
শিশুদের বমি নাপাক?
দুধের শিশুরা সাধারণত মুখে জমা করা দুধ ফেলে দেয় বা সামান্য বমি করে। এগুলো নাপাক নয়। এই বমি কাপড়ে লেগে গেলে কাপড় নাপাক হবে না। তা না ধুয়েও নামায পড়া যাবে। তবে মুখভরে বমি করলে তা নাপাক। এই বমি কাপড়ে বা শরীরে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে। তাই তা ধুয়ে নামায পড়তে হবে। অবশ্য কাপড়ে বা শরীরে এজাতীয় বমি খুব সামান্য পরিমাণ লাগলে (এক দিরহাম পরিমাণ অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতা সমপরিমাণ বা এর চেয়ে কম) সে কাপড়ে নামায পড়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও তা ধুয়ে নেওয়া উত্তম।
আলজামেউস সাগীর পৃ. ৬২; জামেউস সাদরিশ শাহীদ পৃ. ১১৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৩০; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৭
১.মানুষ ছোট হোক বা বড় হোক মুখ ভরে বমি করলে তা নাপাক আর মুখ ভরে বমি না হলে তা নাপাক নয়। (সুনানু দারাকুতনি : ১/২৩০; হাশিয়াতু ত্বাহত্বাবি আলা মারাকিল ফালাহ : ৮৯)
২. কুকুর ও যেসব পশুর গোশত খাওয়া হারাম সেসব পশুর বমি অল্প হলেও নাপাক। আর বাদুড় ও যেসব পাখি উড়ন্ত অবস্থায় মলত্যাগ করে সেগুলোর বমি কাপড়ে কিংবা শরীরে লাগলে তা নাপাক হবে না।
(মুসলিম : ১/২৩৪; মুসান্নাফু আব্দুর রাজ্জাক : ১/৩৭৬; ফতোয়ায়ে শামি : ১/৩৪৯)