কী এবং কেন?

এ যুগের মা বাবার যে ভুলে ধ্বংস হচ্ছে আগামী প্রজন্ম

আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, “এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর বিষয়টি কী?”

প্রশ্নটি আপনাদের করা হলে উত্তর অনেক কিছুই আসতে পারে। যেমন: পারমাণবিক বোমা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মধ্যপ্রাচ্য সংকট ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে, আমার মনে হয় পৃথিবীর সবথেকে বড় সমস্যার শুরু টা করেন আপনি নিজে, আপনার ঘরে।

উক্ত সমস্যা টি হলো: “নিজের বাচ্চার কান্না থামাতে কিংবা খাবার খাওয়ানোর সময় এন্ড্রোয়েড ফোন হাতে দেয়া”

দেখেন ভাই,

“প্যারেন্টিং” শব্দটির প্রবর্তক আপনাদের যুগে। আমাদের সময় খেতে না চাইলেও পেট ভরতো হয় জুতার নয় ঝাটার বাড়িতে। এখন, শাসনের মাত্রা ও প্রকারভেদ সব এই “প্যারেন্টিং” এর আন্ডারে। আমি নিজেও জানি না এটা নিয়ে বিস্তারিত তাই কিছু লেখলে বকা খাবো (ইতিমধ্যে খাচ্ছি হয়তো)।

 

যাহোক, এই সমস্যা কেন ভয়াবহ সেই তর্কে যাচ্ছি না তবে এই সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি আমার মতো করে দেয়ার চেষ্টা করছি:

 

*স্বাভাবিক প্রশ্ন সমূহ ও উত্তর:

 

– বাচ্চাকে ফোন দিলে কান্না থামে; তো কী করবো এখন?

 

= বাচ্চা কে একটু হেঁটে নিয়ে আসলেও বাচ্চার কান্না থামে।

আপনি মোবাইল ফোন এর সাথে পরিচয় ই যদি না করান, তাহলে ই দেখবেন বাচ্চা আর কাঁদবে না ফোন না দিলে।

 

-আমি কর্মজীবী, আমাকে কাজে যেতে হয়, সারাদিন কাজ সেড়ে আমার পক্ষে ওকে এত সময় নিয়ে খাওয়ানো সম্ভব না। আমার ও একটা পার্সোনাল লাইফ আছে!

 

= আপনার স্বামী আর বাচ্চা ও যদি আপনার পার্সোনাল লাইফের অংশ না হতে পারে তবে আপনার ডিকশনারির “পার্সোনাল লাইফ” শব্দটিতে হয়তো প্রিন্টিং মিসটেক আছে। আপনি কাজ শেষে বাসায় এসে বাচ্চা কে যন্ত্রমুক্ত বিনোদন দিন। তার হাসির সাথে হাসুন; তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান। 

বাচ্চাটাকে কয়েকটা দোয়া, হাদীস শিখান। অন্য ধর্মের হলে ভালো বাণী গুলোর ব্যাপারে পরিচয় করিয়ে দিন।

 

গাছ যেমন, ফল তেমন।

আপনি করবেন টিকটক আর আশা করবেন বাচ্চা হবে দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ; দয়া করে এসব ভ্রান্ত ধারণা বাদ দিবেন। 

 

-এগুলা বড় বুলি কপচানো খুব সোজা। সারাদিন বাচ্চার জন্য এত এত কাজ করে অনেক ক্লান্ত থাকি। তাই আর পারি না। ফলে বাধ্য হয়ে ই দিই স্মার্টফোন।

 

= আমরা ছোটবেলায় পাটিগণিতের অংক করতাম। তো দেখা যেত সব ঠিক আছে, শেষ লাইনের কোনো এক ঐকিক নিয়মের গুণের স্থলে ভাগ দিয়েছি। শেষ। আর নাম্বার পাই নাই।

বুদ্ধিমানের জন্য ইশারা যথেষ্ট যদিও, তবুও বলি: আপনি খাটতেছেন আপনার বাচ্চার ভবিষ্যৎ এর জন্য ই।

কিন্তু শেষে যেয়ে সেই পাটিগণিতের ভুল টি ই আবার করলেন না তো?

 

*ব্যক্তিগত আক্রমণ-ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর:

 

-তুমি নিজে তো বিয়ে করো নাই, বাবা হও না এখন ও; তাই বড় বড় কথা এসব। সময় আসুক। দেখবো নে, কী বানাও বাচ্চা কে!

 

=প্রথম কথা, সবকিছু আল্লাহ এর হাতে। আল্লাহ তা’য়ালা যা চাইবেন তা-ই হবে।

বাচ্চা পরে, বিয়েও না হইতে পারে। তাই বলে কি আপনাদের করা এই অস্বাভাবিক কাজ গুলোর ব্যাপারে বলা যাবে না? 

 

– নিজে তো থাকবা অফিসে। বাচ্চা তো সামলাবে বউ। তুমি তো বড় কথা বলে ই খালাস। বউ মানবে তো?

 

= বউ তখন ই মানে না যখন সে নিজেও মা হবার জন্য প্রস্তুত না। হাজার হাজার উদাহরণ আছে; যেখানে কোনো মা নিজের কাজে সফল এবং বাচ্চাকেও সফলতার মুখ দেখিয়েছেন।

তাদের হয়তো হাতে ফেসবুক স্ক্রলিং বারের তুলনায় কোনো শিক্ষণীয় বই ছিল।

 

-এসব বিষয় সেন্সেটিভ ইস্যু। এগুলো নিয়ে কথা না বলা ই ভালো। নিজের চরকার তেল দাও।

 

= নিজের চরকায় তেল দেয়ার জন্য ই আপনাদের বলছি বাচ্চাদের হাত থেকে এন্ড্রোয়েড গুলো সরান কারণ আমার তেল,চরকা আলহামদুলিল্লাহ ঠিক-ঠাক আছে। সময় পার হয়ে গেলে দেখবেন তেল ঠিক ই আছে কিন্তু চরকা ই নাই। 

শেষবয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাবার চেয়ে বোধহয় আগে থেকে ই বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা উচিত কারণ যারা নিজেদের বাবা-মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে তারা মূলত “মানসিক রোগী”। 

 

শেষকথা:

 

আমার অনেক নিকট আত্মীয় ই এই বদ-অভ্যাসের সাথে জড়িত। আমাকে মাফ করবেন। আপনারা গুরুজন। আমি শুধু সমস্যা টা চিহ্নিত করে দিয়ে গেলাম। বাচ্চাদের জন্য তৈরিকৃত ভিডিও/কার্টুন/এনিমেশনে খুব গভীর ডার্ক কন্টেন্ট থাকে; যা খালি চোখে ধরা যায় না। এগুলো খুব বাজেভাবে আপনার সন্তান কে স্লো-পয়জন এর মতো নষ্ট করে। 

সন্তানের জেদ কে এস্টাবলিশ করতে যেয়ে তার জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয়ার অনুরোধ রইল।

 

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সময় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। নাহলে হয়তো, আমাদেরও পড়ালেখা করতে হতো ফেস’বুকে’ আর ঘুরতে যেতে হতো ইন্সটা’গ্রামে’ ..

তাই আপনার সন্তানকে সময় দিন। তাদের খেয়াল রাখুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link