সহিহ্ পদ্ধতিতে রোজার নিয়ত

সাহরি হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমবাসীর ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি রমজান বা বছরের অন্যান্য যেকোনো দিন রোজা পালনের জন্য ফজরের নামাজের পূর্বে খাওয়া হয়। ইসলামের নিয়মানুযায়ী রমজান মাসে প্রতিটি সুস্থ-সবল মানুষের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।

ইসলামের নিয়মানুযায়ী ফজরের আগে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা শুরু করতে হয় এবং সন্ধ্যায় ইফতারের মাধ্যমে দিনের রোজার সমাপ্তি ঘটে। এই দুটি সময়ে কিন্তু নিয়ত এবং দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

রোজার নিয়ত কী ও কীভাবে

 

রোজা পালনে সাহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রোজার নিয়তও জরুরি। তবে এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত।

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি শরিফ: হাদিস নং ১৯০১)

 

রোজার নিয়ত

 

রমজানের রোজার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, ‘আমি আজ রোজা রাখবো’ অথবা দিনে আনুমানিক ১১টার পূর্বে মনে মনে নিয়ত করবে যে, আমি আজ রোযা রাখলাম। মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)

 

রোজার নিয়তের ক্ষেত্রে আরবি ভালোভাবে বলতে পারলে ও বুঝলে আরবিতে নিয়ত করা যাবে। অন্যথায় বাংলায় নিয়ত করাই ভালো।

 

রোজার নিয়ত: রোজা সহিহ হওয়ার জন্য নিয়ত করা শর্ত। নিয়ত হলো, অন্তর দিয়ে কোনো কাজের সংকল্প করা। 

 

রোজার ক্ষেত্রে এরূপ সংকল্প করা যে আমি রোজা রাখছি। এতটুকুই যথেষ্ট তবে মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। প্রত্যেক দিনের রোজার জন্য নিয়ত করা আবশ্যক।

 

শায়েখ নাজমুদ্দিন নসফি রহমতুল্লাহি আলাইহির মতে রমজানে সেহরি খাওয়ার দ্বারা নিয়ত আদায় হয়ে যায়। অন্য রোজার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য হবে। 

READ MORE:  ইমাম হাসান (রা:) : আশ্চর্যজনক জীবনী

 

আরবিতে নিয়ত করা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি আরবি শব্দে নিয়ত করতে চায় তাহলে বলবে- ‘নাওয়াইতু আন আছূমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানা’ অর্থাৎ আমি রমজান মাসের আগামী দিনের রোজা রাখার নিয়ত করছি। 

 

কেউ যদি বলে, আল্লাহ চাহে তো আগামীকাল রোজা রাখব। তবুও তার নিয়ত শুদ্ধ হবে। 

 

অনেকে বলেন, সমাজে যে আরবি নিয়ত প্রচলিত আছে তা বলতে হয়, নইলে কমপক্ষে মুখে এতটুকু বলতে হয় যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করছি।

 

এমন ধারণা সঠিক নয়। কারণ রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে রোজার সংকল্প করাই যথেষ্ট। এমনকি রোজার উদ্দেশ্যে সাহরি খেলেই রোজার নিয়ত হয়ে যায়।

 

বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)

 

রোজার যে নিয়ত প্রচলিত

 

বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ— যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। (তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।)

 

সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হয়, আবার ইফতারের আগে দোয়া করে ইফতার শুরু করতে হয়।

 

রোজার নিয়ত

 

সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হয়। 

 

রোজা রাখার আরবি নিয়ত: نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

 

এর বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।

READ MORE:  শুক্রবারের বিশেষ আমল

 

বাংলায় অর্থ: হে আল্লাহ, আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসে তোমার পক্ষ থেকে ফরজ করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

 

বাংলায় নিয়ত: হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের ফরজ রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার পক্ষ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত।

 

ইফতারের দোয়া

ইফতারের আগে ইফতার সামনে নিয়ে এই দোয়া পড়তে হয়: بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ

 

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

 

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি।

ইফতারের বাংলা নিয়ত: হে আল্লাহ, আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমজানের ফরজ রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনে রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার শুরু করছি। তারপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার করা।

আরও পড়ুন: সকল জেলার সেহরির শেষ সময়