ইসলাম বিড়াল নিয়ে কি বলে? বিড়াল নিয়ে হাদিস
পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে শান্তশিষ্ট প্রাণী বিড়াল। ইসলামে দিবস ঘিরে বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের নিয়ম না থাকলেও নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে-কেরামরা বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন অজু করতেন তখন নিজের অজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করাতেন। বিড়াল নিয়ে হাদিস
বাড়িতে বিড়াল পালনের বিধান
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, বিড়াল পালা বৈধ। তবে তাকে কোনো ধরনের কষ্ট দেয়া যাবে না। বিড়াল পুষতে চাইলে অবশ্যই তাকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে। বিড়ালের প্রতি যথাযথ দয়া-অনুগ্রহ দেখাতে হবে। মসজিদে হারাম কিংবা মসজিদে নববিতে প্রচুর বিড়াল ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। আগত মুসল্লিরাও তাদের পানি কিংবা খাবার দিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মহিলাকে বিড়ালের প্রতি অমানবিক আচরণের কারণে আজাব দেয়া হয়। সে বিড়ালকে বন্দি করে রাখে। এ অবস্থায় বিড়ালটি মারা যায়। এমনকি বন্দি করে রেখে পানি দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি। যাতে করে বিড়ালটি জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।’ (মুসলিম: ৫৭৪৫)
পরিষ্কার পাত্রে খাবার ও পানি
বিড়াল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। সেজন্য মাটিতে বা বালুতে গর্ত করে সেখানে মল ত্যাগ করে ঢেকে দেয়। এছাড়া উন্মুক্ত মল থেকে গন্ধ ছড়ায় এবং তা তার শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে উপস্থিতি জানিয়ে দিতে পারে।
বিড়াল পালন করা কঠিন কিছু নয়; বরং একটু যত্ন নিলে সে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। সে মূলত মাংসাশী প্রাণী। খাবারের পাশাপাশি বিড়ালকে পানি পান করানো খুবই জরুরি। আপনার ঘরবাড়ির আশপাশে কোনো একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি রেখে দিতে পারেন তাদের জন্য। বোবা প্রাণীগুলো মুখ ফুটে বলতে না পারলেও খাবার-পানি খুঁজে ঠিকই। মানুষের একটু ভালোবাসা পেলেই তারা কাছে আসতে চায়।
আপনার অপ্রয়োজনীয় খাবার ডাস্টবিনে না ফেলে বিড়ালকে খেতে দিন। পোষা পশুপাখিসহ আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে মহান আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দয়া করেন। অগণিত সওয়াবে ঋদ্ধ করেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দয়াবানদের ওপর দয়াময় আল্লাহও দয়া করেন। তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো। তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)
বিড়ালের স্পর্শের বিধান
মক্কাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে বিড়ালের অবাধ অনুপ্রবেশ। এরা প্রত্যেক ইবাদতকারীর পাশেই ঘুমায়। গা ঘেঁষে বসে থাকে যত্রতত্র। মানুষের আদর-ভালোবাসায় লাই দিয়ে গড়া অদ্ভুত এই বিলাসপ্রবণ প্রাণী। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিড়ালের প্রস্রাব নাপাক। যদি কাপড়ে বা জায়নামাজে এক দেরহাম বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বিড়ালের প্রস্রাব লেগে যায়, তাহলে সেই জায়নামাজ বা কাপড়ে নামাজ আদায় করা নাজায়েজ। তবে যদি বিড়ালের প্রস্রাব না লাগে তাহলে শুধুমাত্র বিড়ালের বসার দ্বারা কোনো জায়নামাজ বা কাপড় নাপাক হয় না; কিন্তু বিড়ালের শরীরে ভেজা অপবিত্র কিছু লেগে থাকা নিশ্চিত হয়, তাহলে শরীর ও জায়নামাজ অপবিত্র হবে। (রদ্দুল মুহতার: ১/২০৪)
বিড়াল কেনা-বেচা
বিড়াল ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। বিড়াল এমন একটি প্রাণী— যার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না এবং একে খাঁচাবন্দি করাও নাজায়েজ। এজন্য বিড়াল ব্যবসায়ী পণ্য নয়। কারণ, বিড়াল মানুষের পাশেই ঘোরাঘুরি করে। রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ধমক দিয়েছেন। আবু জুবাইর (রহ.) বলেন, ‘আমি জাবের (রা.)-এর কাছে কুকুর ও বিড়াল কেনা-বেচা করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নবী (সা.) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ১৫৬৯)
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কুকুর ও বিড়ালের বিক্রয় মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৪৭৯)