ইসলামে নাম ব্যঙ্গ করার পরিনাম কি?
Islami rules about saying bad names to someone.
Quran। Hadis। Sunnah। Hadith।
Jannah। Jahannam।
মানুষের এ নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা যাবে কি? এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা মারাত্মক গোনাহ। একজন মানুষের কাছে একটি সুন্দর নাম হীরার চেয়েও দামি। কিন্তু এ নাম নিয়ে বর্তমান সমাজে প্রায়ই ব্যঙ্গ (ট্রল) করতে দেখা যায়।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ পরিচিত ও বন্ধু মহলে একে অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকে। নাম বিকৃতি তথা ব্যঙ্গ করার এ প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসলামি শরিয়তে এভাবে মানুষের নামকে বিকৃত করে কিংবা অপমানমূলক ব্যঙ্গ করে ডাকা গোনাহের কাজ। আমরা অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, অড্ডা-কিংবা মজারছলে আসর জমাতে গিয়েও অন্যকে বিকৃত নামে ডেকে কথা বলে, যা ইসলামে জঘন্য অন্যায় ও গর্হিত কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডাকবে না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবাহ না করে তারাই অত্যাচারী।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১১)
সুতরাং প্রতিটি মানুষের উচিত একে অপরকে সুন্দর নামে ডাকা এবং কারো নামকে বিকৃত করে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না ফেলা। অর্থাৎ ব্যঙ্গ ও তুচ্ছজ্ঞান করে এমন নামে না ডাকা অথবা এমন খেতাব বের না করা; যা সে অপছন্দ করে।
নাম বিকৃত করে অথবা মন্দ নাম বা খেতাবে ডাকা অথবা ইসলাম গ্রহণ বা তওবাহ করার পর তাকে অতিত ধর্ম বা পাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে সম্বোধন করাও ব্যঙ্গ করার শামিল। যেমন এভাবে ডাকা- এ কাফের! এই ইয়াহুদি! ও হিন্দু! ওই লম্পট! হে মাতাল! ইত্যাদি শব্দ কিংবা মন্দ সম্বোধন করে ডাকা মারাত্মক জঘন্য অন্যায় ও গর্হিত কাজ।
সমাজবদ্ধ জীবনে অন্যের মনোকষ্টের কারণ হয়, এমন যে কোনো কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। অন্যকে ছোট মনে করা, উপহাস করা ইসলামে সরাসরি নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলিম; যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ। আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী৷’ (বুখারি)
লক্ষণীয় বিষয় হলো
বর্তমানে সমাজে একটা বিষয় ব্যাপকভাবে লক্ষ্যনীয়; তাহলে- মহান আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোও এ ব্যঙ্গ কিংবা ট্রল থেকে মুক্ত নয়। মনের অজান্তেই অনেকে এ নামগুলো নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। যা মারাত্মক গোনাহ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এগুলো বেশি দেখা যায়। মজার ছলে কেউ কেউ এভাবে কমেন্টস করছে- ‘কসকি মোমিন’, বলিস কি কুদ্দুস ইত্যাদি। অথচ মুমিন ও কুদ্দুস মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণবাচক নাম।
ইসলামের বিধান হলো- কোনো ব্যক্তি নিজের কিংবা সন্তানের নাম হিসেবে আল্লাহ গুণবাচক নাম রাখে; তবে তাকে নামের আগে অবশ্যই আবদুন (عَبْدٌ) শব্দটি যোগ করতে হবে। আর আবদুন শব্দের অর্থ হলো- বান্দা বা গোলাম। সেক্ষেত্রে রহমান শব্দের অর্থ হলো- দয়ালু। আর আব্দুর রহমান রাখলে এর অর্থ হবে- রহমানের বান্দা বা দয়ালু বান্দা। এ কারণে কোনো ব্যক্তিকে শুধু গুণবাচক নামেও ডাকা যাবে না। ডাকলে তাতেও গোনাহ হবে।
আবার অনেক সময় দেখা যায়
কেউ কেউ নাম রাখেন- ‘রাব্বি’। আমরা কি জানি- এ রাব্বি মানে কি? রাব্বি শব্দের অর্থ হলো- আমার রব বা আমার প্রভু। আবার কেউ কেউ নাম রাখেন, মাওলা- অভিভাবক। আর অর্থ না বুঝে তাদের ডাকতে থাকেন, রাব্বি কিংবা মাওলা।
সুতরাং রাব্বি কিংবা মাওলা নামে না ডেকে বরং নামের আগে ‘গোলাম’ কিংবা ‘ফজলে’ শব্দ দুটি যোগ করে ‘গোলাম রাব্বি’ ফজলে রাব্বি ও ‘গোলাম মাওলা’ নামে ডাকা যাবে। আর তাতে গোনাহ থেকে বেচে যাবে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের মানুষ।
তাই সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রেও বাবা-মা এ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। আল্লাহর গুণবাচক নামে সন্তানের নাম রাখা কল্যাণের। তবে তা শুরু থেকে যেভাবে ডাকার নিয়ম, তা মেনে ডাকতে হবে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে সবচায়তে প্রিয় নাম হলো আব্দুল্লাহ এবং আবদুর রহমান।’ (মুসলিম)
যেহেতু একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হচ্ছে তার নাম। তাই নাম বিকৃতি বা ব্যঙ্গ নয়; নাম ডাকতে হবে সম্মানের সঙ্গে। কেননা নাম বিকৃত বা ব্যঙ্গ মানুষের জন্য অপমান এবং মারাত্মক কষ্টের।
গরিব, কাজের লোক, শত্রু কিংবা মিত্র যে-ই হোক না কেন; নাম ব্যঙ্গ, বিকৃতি বা ট্রল করে তাকে ছোট করে না করা। মানুষের নামকে নিয়ে ব্যঙ্গ করার মতো হীন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখাই ঈমানের একান্ত দাবি।