গোক্ষুরা ব্যবহারে হবে জীবন রক্ষা
গোক্ষুরা একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা আমাদের জন্য জীবন পরিবর্তনকারী। গোক্ষুরার শিকড় ও ফল আমাদের অনেক কাজে লাগে চিকিৎসায়। প্রাচীন কাল থেকেই গোক্ষুরা জনপ্রিয়।
গোক্ষুরা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য:
বৈজ্ঞানিক নাম: ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস
পরিবার: জাইগোফিলিয়েসি
- সাধারণ নাম: গোখরু, গোকশুর, চটগোখরু
- ব্যবহৃত অংশ: মূল এবং ফল ঔষধ ব্যবহৃত হয়।
আদি উৎপত্তি এবং ভৌগলিক বিতরণ: এই ঔষধি উদ্ভিদ ভারতে উদ্ভূত। এটি ব্যাপকভাবে ভারত ও আফ্রিকা জুড়ে পাওয়া গেলেও এশিয়ার কিছু অংশ, মধ্য প্রাচ্য এবং ইউরোপেও পাওয়া যায়।
গোক্ষুরা এর উপকারিতা
এটি বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরা ব্রণের সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করে, যা বেশিরভাগ অল্পবয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, ত্বকে জ্বালা, ত্বকে ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদির চিকিৎসায়ও উপকারী।
এই ঔষধি নিয়মিত খেলে অকাল বার্ধক্যের প্রতিরোধ হয়, ফলে আপনাকে অনেক অল্প বয়সী মনে হবে। এটি বলিরেখা প্রতিরোধ করে, , শরীরের চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং পেশী নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এছাড়াও, গোক্ষুরার বীজ দিয়ে লেই তৈরি করে তা প্রয়োগ করলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে।
এই আয়ুর্বেদীয় ঔষধি এছাড়াও মাথাব্যথা এবং আধ কপালে ব্যথার উপশম করে।
- প্রদাহ বিরোধী গুণের কারণে, এটি ফিস্টুলা এবং অর্শ রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে, চোখের সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গোক্ষুরা ব্যবহার হচ্ছে।
গোক্ষুরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণের জন্য মধুমেহর লক্ষণগুলির ব্যবস্থাপনায় সহায়ক এবং মধুমেহ সম্পর্কিত জটিলতাগুলি এড়াতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও গোক্ষুরা যেসব ক্ষেত্রে উপকারী –
মূত্রনালির সংক্রমণ ও গোক্ষুরা – Gokshura for urinary tract infections (UTIs) in Bengali
গবেষণা অনুযায়ী মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎস্যয় গোক্ষুরা সফল ভাবে ব্যবহার করে যেতে পারে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর মূত্রবর্ধক গুণ থাকায় গোক্ষুরা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলিকে প্রস্রাবের সাথে বার করে দিয়ে মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে পারে ।
বিশ্বাস করা হয় যে গোক্ষুরার পুনর্জন্ম দেওয়ার মত বৈশিষ্ট্য আছে। গোক্ষুরা খেলে দেহের টক্সিন হ্রাস পায় এবং মূত্রনালির এবং ব্লাডারের সংক্রমণ হ্রাস করে। যেহেতু গোক্ষুরাকে নিরাপদ মনে করা হয়, এটি অ্যান্টি বায়োটিকের ভাল বিকল্প হতে পারে।
বৃক্কের পাথর ও গোক্ষুরা – Gokshura for kidney stones in Bengali
বিভিন্ন দেশে বৃক্কের পাথর নানা কারণে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে উঠেছে। একটি গবেষণা দেখাচ্ছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার 12% মানুষ বৃক্কের পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, এবং একবার নিরাময় হয়ে যাওয়ার পর আবার এই সমস্যা ফিরে আসার হার হল 50% থেকে ৪০%। দেখা গিয়েছে যে গোক্ষুরা বিভিন্ন উপায়ে বৃকের পাথর হওয়া হ্রাস করতে পারে।
গোক্ষুরা রক্তের ক্যালসিয়াম’ এর মাত্রা হ্রাস করাতে পারে, ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
গোক্ষুরা একটি মূত্রবর্ধক। মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেহের অতিরিক্ত খনিজ পদার্থগুলিকে বাইরে নিক্ষেপ করে। ফলে বৃক্কে পাথর জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আবার গোক্ষুরার অ্যান্ট-অক্সিডেন্ট গুণ বৃক্কের পাথর তৈরি বন্ধ করতে পারে এবং সাথে সাথে বৃক্কের কর্মক্ষমতারও বৃদ্ধি হয় ৷
মহিলাদের কামোত্তেজনার জন্য গোক্ষুরা – Gokshura for low libido in women in Bengali
ঐতিহ্যগত ভাবে গোক্ষুরা কামোত্তেজ ঔষধি মহিলাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি করতে গোক্ষুরার প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে, যে মহিলাদের কামোত্তেজনা কম তাদের যদি চার সপ্তাহ ধরে দৈনিক 7.5 মিলিগ্রাম গোক্ষুরার নির্যাস খেতে দেওয়া হয় তাহলে তাদের কামোত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
রজোবন্ধের আগে এবং পরের অবস্থার মহিলাদের নিয়ে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে তাদের উত্তেজনা এবং যৌনতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হল তাদের রক্তে টেস্টোস্টেরণ’এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
উদ্বেগ ও অবসাদে গোক্ষুরা – Gokshura for anxiety and depression in Bengali
উদ্বেগ ও অবসাদ বর্তমান কালে খুবই প্রচলিত সমস্যা। লিঙ্গ নির্বিশেষ সব বয়সের মানুষই এই দুইয়ের প্রভাবে আসতে পারে। প্রি-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গোক্ষুরা একটি কার্যকরী উদ্বেগ ও অবসাদ বিরোধী ওষুধ হতে পারে, যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। উদ্বেগ ও অবসাদের চিকিৎসায় একে ব্যবহার করে যেতে
পারে।
আরও পরীক্ষা দেখাচ্ছে গোক্ষুরার এই অবসাদ বিরোধী চরিত্রের কারণ হল এতে স্যাপোনিনস আছে, যা সিরাম কর্টিসল’এর পরিমাণ হ্রাস করে।
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গোক্ষুরা – Gokshura for
heart health in Bengali
গবেষণা অনুসারে, ট্রিবুলাস টেরেস্ট্রিস অথবা গোক্ষুরাতে আন্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এর কার্ডিয়ো-প্রোটেকটিভ ধর্ম আছে। ইংরাজি ‘ইনফারাক্ট’ শব্দটির অর্থ হল ‘রক্তের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মৃত টিস্যুদের অঞ্চল’। গোক্ষুরা এই ইনফারাক্ট’এর অঞ্চলকে আকারে ছোট করে দিতে পারে। দেহে এটিপি’র মাত্রা বৃদ্ধি করে গোক্ষুরা হৃদপিণ্ডে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে নিয়মিত ভাবে গোক্ষুরা সেবন করলে উল্লেখযোগ্য অ্যান্টি হাইপারটেন্সিভ প্রভাব পড়ে এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে অল্প থেকে মাঝারি মাত্রার রক্তচাপের রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে গোক্ষুরা দিয়ে নিরাপদ ভাবে চিকিৎসা করা যায়।
শরীরে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে গোক্ষুরা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও লিপিডের পার অক্সিডেশান প্রতিরোধ করে।
গোক্ষুরা এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া – Gokshura side effects in Bengali
এলার্জির প্রতিক্রিয়া: কোন কোন ব্যক্তির পেটের গোলমাল বা ফুসকুড়ির মত এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- গুরুতর শল্য চিকিৎসার ইতিহাস: যদি শল্য চিকিৎসা হয়ে থাকে তাহলে নির্ধারিত মাত্রায় গোক্ষুরা সেবন করা যায়।
বর্তমান অসুস্থতা: যদি আপনি বর্তমানে ওষুধ নিতে থাকেন বা আপনার কোন গুরুতর অসুস্থতা থাকে তাহলে গোক্ষুরা সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যে সব মহিলাদের জরায়ু বা স্তনের কর্কট রোগ হয়েছে, তারা গোক্ষুরা সেবন করবেন না। পুরুষদের ক্ষেত্রে যাদের প্রোস্টেটে কর্কট রোগ হয়েছে, তারাও গোক্ষুরা এড়িয়ে যাবেন।
মধুমেহ: রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে গোক্ষুরা একে নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যদি মধুমেহর রোগী হন এবং ওষুধ নিতে থাকেন, তাহলে আপনার চিকিৎসকের কাছে গোক্ষুরার সঠিক মাত্রা জেনে নিন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী: যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গোক্ষুরা নেবেন, কারণ এটি একটি প্রমাণিত রক্তচাপ হ্রাস করার ঔষধি।
শিশু: শিশুরা সংবেদনশীল হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পর দেওয়া উচিৎ নয়।