স্বাস্থ্য

কাটা স্থানে Hexisol ব্যবহার করা উচিত কি না?

আমরা অনেকেই আমাদের কেটে যাওয়া অংশে Hexisol ব্যবহার করি। কেটে যাওয়া অংশে Hexisol ব্যবহার করা কি উচিত? 

 

Hexisol কী?

 

Hexisol হচ্ছে এক ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এটা মূলত অ্যালকোহলের দ্রবণ, এতে ৭০% Isopropyl Alcohol এবং ০.৫ % Chlorhexidine Gluconate থাকে। Chlorhexidine ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী।

 

হেক্সিসল কিংবা এই টাইপের স্যানিটাইজার জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে থাকা অ্যালকোহল এই কাজটি করে থাকে।

 

এখন কেউ চাইলে কি এই ধরনের স্যানিটাইজার কেটে যাওয়া স্থানে ব্যবহার করতে পারে?

 

না, এটা ব্যবহার করা উচিত না। জীবাণু মারার সাথে এটা দেহের কোষকেও মেরে ফেলে টিস্যু ড্যামেজ করে দিতে পারে এবং ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হতে পারে। তাছাড়া তীব্র জ্বালাপোড়া তো আছেই সাথে!

 

এছাড়া হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড আছে এরকম স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যাবে না। এটা টিস্যু ড্যামেজ করতে পারে।

 

একটু বাড়তি আলাপ করি। দরকারী জিনিস অবশ্য।

 

অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে কী হতে পারে?

 

১.ত্বক শুষ্ক এবং টাচ সেন্সেটিভ হয়ে যেতে পারে। আমেরিকার ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশন বলছে শুষ্ক ত্বক জীবাণু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

২. একজিমা বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

৩. হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অনেক সময় triclosan নামের উপাদান থাকে যা হরমোনের স্বাভাবিক সাইকেল প্রভাবিত করে। বেশ কয়েকটি দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

 

৪. অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে।

 

আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যদি স্যানিটাইজার খেয়ে ফেলে তাহলে কী হবে?

 

যেহেতু এটা শুধু বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য সুতরাং এটা গিলে ফেলা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। অ্যালকোহল পয়জনিং হতে পারে। বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

আর চোখে গেলে কী হবে?

 

চোখে গেলে চোখের উপরের স্তর বার্ন হতে পারে। চোখের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে তবে সেটা ভালো হয়ে যাবে। যেমন : চোখে ঘোলা দেখা, ব্যাথা করা এবং লাল হয়ে যাওয়া।

READ MORE:  হার্নিয়া কে হারানোর পন্থা

 

তাহলে কোথাও কেটে গেলে কী করবেন?

 

[অভিজ্ঞ কেউ না থাকলে এবং ছোট ধরনের ক্ষত না হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত]

 

১.প্রথমে পরিচর্যাকারীর হাত স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

 

২.পরিষ্কার কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ব্লিডিং বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মৃদু চেপে ধরে রাখুন।

 

৩.ছোটখাটো ক্ষত হলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুতে হবে। পাঁচ থেকে দশ মিনিট ধরে পানি প্রবাহিত করা উচিত। আকারে বড় হলে সেখানে স্যালাইন দ্রবণ ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্ষতস্থানের আশেপাশে সাবান ব্যবহার করে ধুয়ে নিতে পারেন। কোনোভাবেই এন্টিসেপ্টিক ব্যবহার করা উচিত নয়। এসবে অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রফেশনালদের শরণাপন্ন হওয়া ভালো।

 

৪. ক্ষতস্থানে অ্যান্টিবায়োটিক বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।

 

৫. পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে কেটে ক্ষতস্থান বেধে নিন। এটাকে আমরা ড্রেসিং বলে থাকি।

 

এটা নিয়ে অনেকের ধারণা কাটা ঘা ওপেন থাকলে তাড়াতাড়ি শুকায়। এটা ভুল ধারণা, এরকম করা যাবে না।

 

৬. ক্ষতস্থানের ড্রেসিং এ নজর রাখুন৷ ভিজে গেলে চেঞ্জ করে ফেলুন।

 

৭. ক্ষতস্থান যদি গভীর হয় এবং ভালোভাবে পরিষ্কার করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে টিটেনাস নিয়ে নিন। তবে গত পাঁচ বছরের নিলে আর লাগবে না।

 

এখন ক্ষত দ্রুত শুকানোর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় বলি।

 

১. মোটামুটি গরম পানি দিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দিয়ে ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে বেধে নিবেন।

 

২. অ্যালো ভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন বা জেলে কাপড় ভিজিয়ে ড্রেসিং করতে পারেন।

 

৩. নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষতস্থানে আলতো করে লেপে দিবেন। এতে ক্ষত দ্রুত শুকায় এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।

 

যদি দেখেন রোগীর জ্বর উঠেছে এবং ক্ষতস্থানে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে তাহলে ইনফেকশন হয়েছে বলে ধরে নিবেন। তাছাড়া ক্ষতস্থানের আশেপাশের চামড়া লাল হয়ে ফুলে গিয়ে গরম অনুভূত হয়, পরিষ্কার তরল বা পুঁজ জমা হয় এবং ফোস্কা দেখা যায় তাহলেও বুঝতে হবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

READ MORE:  জন্মবিরতিকরণ এর প্রণালী শিখে নিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *