মনের ক্যান্সার ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন কি? – What is depression in Bengali?   

 

 ডিপ্রেশন কে বলা হয় মনের ক্যাম্সার। যদি আমরা ডিপ্রেশনের খুব কাছাকাছি বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজতে চাই, সবার আগে আসবে ‘অবসাদ’ শব্দটি। অবসাদ – এই শব্দটির সাথে যে দুঃখ বা বিষাদ লেগে থাকে, সর্বনাশা রোগটিও ঠিক সেইরকমই। ডাক্তারী মতে যা ডিপ্রেশন বলে পরিচিত, তার পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে মনখারাপ আর ভাল না লাগা। ডিপ্রেশন সর্দি-কাশির মতো এক এক করে প্রায় সব মানুষকে আক্রমণ করে ফেলছে। ফলে, রোগ ও রোগাক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। 

 

ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, অনিদ্রা, ব্লাড প্রেশার, ক্যানসারসহ বহু জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশন থেকে যেমন মারাত্মক ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, তেমনই অনেক অনৈতিক কাজও করা হচ্ছে। আরেকটা জিনিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো নেশার যে এত রমরমা অবস্থা তার কারণও ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা বুঝতে হলে বেশি কিছু করার দরকার নেই, শুধু নিম্নের কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে, ডিপ্রেশন কীভাবে নিজের অজান্তেই সর্বব্যাপী হয়ে গেছে।

 

ডিপ্রেশন এর কারণ- Cause of depression in Bengali 

 

ডিপ্রেশন এর প্রকৃত কারণ অজানা থাকলেও রােগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা গেছে। তা নিম্নে আলােচিত হলাে

| জেনেটিক কারণ: এর মধ্যে জেনেটিক কারণ প্রধান। | পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্নীয় পরিজনের মধ্যে এ সমস্যা থাকলে এ রােগ হতে পারে। বায়ােকেমিক্যাল কারণ: মস্তিস্কের সেরাটোনিন ও নরএড্রানালিন এর ঘাটতি এবং অনিয়ন্ত্রিত কর্টিসল হরমােন বৃদ্ধিকে ডিপ্রেশন সৃষ্টির রাসায়নিক ভিত্তি | হিসেবে ধরা হয়। ব্যক্তিত্ব: উদ্বেগপ্রবণ, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তি, অল্পকিছুকে বড় করে দেখা, নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া-এসব সমস্যা ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দেয়। স্নেহবঞ্চিত ও অবহেলা: যে সব শিশু মা-বাবার স্নেহবঞ্চিত, পারিবারিক কোন্দলের মধ্যে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রা বেশি থাকে।

READ MORE:  চোখ উঠা : কারন : করনীয়

রােগব্যাধি ও ঔষুধ: কিছু স্নায়বিক ও হরমােনের রােগ। এবং কিছু ঔষুধ যেমন: স্টেরয়েড ও জন্মনিরােধক পিল মস্তিস্ককে প্রভাবিত করে ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে।

অন্যান্য: গর্ভাবস্থায় ও অনেক দিন যাবৎ নিদ্রাহীনতাও | ডিপ্রেশন বাড়াতে পারে। আবার বৈবাহিক জীবনে অসুখী, কর্মস্থলের সমস্যা, একাকীত্ব ইত্যাদি সমস্যার কারণেও ডিপ্রেশন হয়।।

 

ডিপ্রেশন এর লক্ষ্মণ

Symptoms of Depression in Bengali

 

 অবসাদের অনেকগুলি লক্ষণ আছে যা দেখে এক জন আরেক জনের বা নিজের রােগ নির্ণয় করতে পারেন। অবশ্য, এই লক্ষণগুলির কয়েকটি থাকলেই যে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে অবসাদ আছে, তা কিন্তু নয়। এই লক্ষণগুলি বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন তীব্রতায় থাকতে পারে।

 

আচরণগত লক্ষণ:

  • নিজের শখের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • দৈনন্দিন কাজ কর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। 
  • সমাজের বিভিন্ন মানুষদের সাথে, এমন কি নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথেও সামাজিক যােগাযােগ হ্রাস পাওয়া।
  • মনঃসংযােগ করতে অসুবিধা।
  • অবিরাম অস্থিরতা বা কোনও একটি কাজ শেষ

করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা।

  • একলা থাকতে চাওয়া
  • ভুলে যাওয়া।
  • ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধা।
  • অত্যধিক ঘুম।

 

শারীরিক উপসর্গ:

 

  • কাজ করার শক্তি কমে যাওয়া।
  • অবিরাম ক্লান্তি।
  • কথা বলা কমে যাওয়া বা ধীরে ধীরে কথা বলা।
  • ক্ষুধামান্দ্য।
  • অত্যধিক ঘুম। 
  • হঠাৎ ওজন হ্রাস (এটি সঠিক ভাবে না খাওয়ার নির্দেশক হতে পারে)। 
  • মাথাব্যথা। 
  • কোন কারণ ছাড়াই হজমের গােলমাল। • পেশীর সংকোচন বা শরীরের ব্যথা। 

– পেশীর সংকোচন)

 

 মানসিক লক্ষণ:

  • স্থায়ী দুঃখবােধ। 
  • অত্যধিক অপরাধ অনুভব।
  • উদ্বেগ।।
  • আশাহীন বা মূল্যহীন অনুভব করছি।
  • আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতির চিন্তা ভাবনা।
  • বিরক্ত বা উত্তেজিত বােধ। 
  • আনন্দদায়ক ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।

 

ডিপ্রেশন এর চিকিৎসা – Treatment of depression in Bengali 

 

১. রুটিনমাফিক চলা

 

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিনের জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজ-কর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায় তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

READ MORE:  কিছুদিন পরপরই মুখে ঘা হয়? লিখাটি পড়ুন

 

২. লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা

 

লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোন কাজ করতে ইচ্ছা করেনা তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

 

ধরা যাক, প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সেই কাজটা ঠিক মত করতে পারেন তবে পরের দিন আর একটু বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এক সময় ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

 

৩. নিয়মিত ব্যায়াম করা

 

প্রতিদিন অল্প কিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখবে। ব্যায়াম করা মানে, ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না, আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

 

৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ

 

সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড এবং ফলিক এসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।

 

৫. অনিদ্রা দূর করা

 

পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। তাই, প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই অনিদ্রা রোগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।

 

৬. ইতিবাচক চিন্তা করা

 

ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন, আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মত দুঃখ কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ- এই ধরণের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এই নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না কোনভাবেই।

READ MORE:  রিলেশনশিপ ওসিডি কি? এটিই কি ব্রেকআপ এর কারণ?

 

৭. আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো

 

নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোন কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার কোন বই পড়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।

 

৮. Psychiatrist ও সাইকোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ

 

ডিপ্রেশন পুরোপুরি না ভালো হওয়া পর্যন্ত পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।