ছোট গল্পসাহিত্য

 সুন্দর বনের মানুষখেকো – জোনাইদ হোসেন

মংলা থেকে পশুর নদী দিয়ে ট্রলারে করে রওয়ানা হলাম সুন্দরবন দর্শনে। নদীর দু’ধারে হরেক রকম গাছ গাছালি। নির্জন নিরবতায় ঘেরা পুরো এলাকা। ট্রলারে অনেক মানুষ। যে যার মত বন উপভোগ করছে। নদীর বুক চিরে আমরা এগিয়ে চলছি সম্মুখ পানে। 
মংলা থেকে করমজল পার হয়ে দুবলার চর। তারপর জামতলা ওয়াচ টাওয়ার, সেখান থেকে ডিঙ্গি নৌকায় কটকা খাল ঘুরবো আমরা।
 আমি ও বন্ধু আরিফ একসাথে এসেছি। ট্রলারের এক কোণে বসে আমি নিমগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি বনের দিকে। আরিফ ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমার ছোটবেলার বন্ধু সে।লম্বা দেহ, শ্যাম বর্ণের গাত্র।
  ঢাকা থেকে রাতে রওয়ানা দিয়ে ভোরেই পৌঁছে যাই মংলাতে। এখন  সুন্দরবনের ভেতরে যাচ্ছি। ট্রলার নদীর পাড় ঘেঁষে যাওয়ায় খুব কাছ থেকেই বন উপভোগ করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এক ঝাঁক চিত্রা হরিণের দেখা মিলল।
নদীর দু’ধারে গহীন বনের বড় বড় গাছের পাতাগুলো মাটি থেকে এক মানুষ সমান উঁচুতে। নিচের পাতাগুলো বোধহয় হরিণ খেয়ে ফেলে। পাতার নিচ থেকে মাটির ওপরের অংশের ভেতর দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ভয়ঙ্কর নির্জন বন দেখা যায়। শুধুই গাছ আর গাছ। বড় বড় গাছের পাতা হরিণ দু পা উঁচু করে টানটান হয়ে খায়। এক এক  দলে গোটা বিশ ত্রিশেক চিত্রা হরিণ। অপূর্ব সুন্দর, টানাটানা চোখ, মায়াবী চাহনি। মানুষের মন এক পলকে কেড়ে নেয়। লালচে বাদামী পিঠ জুড়ে সাদা সাদা গোল ফোটা চিত্রা হরিণের সৌন্দর্যকে অনুপম করে তুলেছে। সুন্দরবনের নদী বা খালে যাতায়াতের সময়, উচ্ছল প্রিয়দর্শন এই হরিণের চলাফেরার দৃশ্য হওয়ার হামেশাই চোখে পড়ে। হরিণের দল কিন্তু বড় ভীরু। আমাদের দেখে পাতা খাওয়া ফেলে মুখ তুলে একবার চাইল। একটু পরেই বনের মধ্যে সবাই চার পা তুলে দৌড়।
যতই সামনে এগুতে লাগলাম সুন্দরবনের মোহ ততই পেয়ে বসতে লাগলো। ইট পাথরের গোলমাল শহর ছেড়ে যেন নির্জন এই মুক্ত জঙ্গলে স্বাধীনতা আছে। এমন মুক্ত আকাশ, এমন নিস্তব্ধতা, নির্জনতা, দিগন্ত বিস্তৃত বনানীর রূপ একবার হলেও দেখা উচিত। এই সৌন্দর্যের সাথে যতদিন প্রত্যক্ষ পরিচয় না হয় ততদিন শুধু কানে শুনে বা পড়ালেখা করে তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এ বনের রূপ যে না দেখেছে খোদার এক অপূর্ব সৃষ্টি তার নিকট অপরিচিতই রয়ে গেল।
হঠাৎ দেখলাম বড়সড়ো এক কুমির নদীর পাড়ে বসে রোদ পোহাচ্ছে। পাশেই লম্বা ঠোঁট ওয়ালা বক ভাটায় আটকে থাকা মাছ ধরে খাচ্ছে। আমাদের আনাগোনা টের পেয়ে কুমির ঝাঁপ দেয় নদীতে, আর বক তার সাদা পাখনা মেলে উড়াল দেয় আকাশে। এ এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য।
আমরা ইতোমধ্যে দুবলার চর পার হয়ে জামতলা চলে এসেছি। এটি সুন্দরবনের ব্যস্ততম টুরিস্ট স্পট গুলোর একটি। ট্রলার থেকে নেমে ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। ওয়াচ টাওয়ার  থেকে বনের বিস্তৃত এলাকা দেখতে পেলাম। সামনের দিকে গভীর থেকে গভীরতম বনের মধ্যে দৃষ্টি চলে গিয়ে ঘননিবিড় শ্যামলতার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। পেছনের দিকে স্বচ্ছ পানির মধ্যে সুদুর বিসর্পী আকাশ যেন দিগন্ত রেখায় ডুবে গেছে। মাথার ওপর সুবিশাল আকাশ। আর নিচে নীলসাগর পাড়ে সবুজ বৃক্ষরাজির মেলা। গগণবিদীর্ণ অট্টালিকা বিহীন শ্যামল এ বনভূমিকে বড়ই আপন মনে হয়।
 আমাদের ট্রলার কিছু সময় জামতলাতে অপেক্ষা করবে। তারপরের গন্তব্য দুবলার চর। যদিও দুবলার চর পার হয়েই এখানে এসেছি। কিন্তু দুবলাতে আমরা রাত যাপন করব। সেজন্য আগেই জামতলা ভ্রমণ।
 ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে আমি ও বন্ধু আরিফ মিলে একটা ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করি।  ডিঙ্গি নৌকাতেই প্রকৃত সুন্দরবন উপভোগ করা যায়। উদ্দেশ্য কটকা খালের ধারে বাঘের দর্শন। সুন্দরবনে এলাম মুক্ত বাঘ দেখার জন্য। বনের সব জায়গাতে বাঘের দেখা মেলে না। কটকাতে প্রায়ই বাঘ দেখা যায়। আমাদের যাত্রাও তাই সেদিকে।
খালের দু’ধারে ঠাসা গোলপাতার বন। বাঘের অভয়াশ্রম।
 বই পুস্তকে গোলপাতা নাম পড়ে এই গাছের পাতাগুলো গোল আকৃতির হবে বলেই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম ভিন্ন ব্যাপার। গোলপাতা আসলে গোল নয়। নারকেল পাতার মতো লম্বা লম্বা। “গরিবের ঢেউটিন” নামে পরিচিত এই পাতা ঘরের চালের ছাউনির জন্য উপকূল সহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। যারা গোলপাতা সংগ্রহ করে তাদেরকে বলা হয় “বাওয়ালি”।
নৌকা এগিয়ে চলছে কটকা খাল দিয়ে। অনেকটা ভেতরে চলে এসেছি আমরা। চারপাশে গভীর নিস্তব্ধতা। চারদিকে শুধুই গহীন বন। বনের বুক চিরে আঁকাবাঁকা  সরু  এ খাল। পুরো সুন্দরবন জুড়েই রয়েছে এমন সর্পিল সরু খাল। এরইমধ্যে মাঝির সাথে সখ্যতা তৈরি হয়ে গেল। মধ্যবয়সী লোকটির নাম আব্দুল করিম। গোলগাল চেহারায় অসম্ভব সাহসের ছাপ। কথাবার্তা অতি মার্জিত। 
মাথার ওপর থেকে সূর্য কিছুটা পূর্ব দিকে হেলে পড়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের স্নিগ্ধতা বিরাজমান।
 হঠাৎ কিসের শব্দ যেন কান সজাগ হয়ে গেল। নৌকা থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। পাশের বনের মধ্যে কিসের জন্য সম্মিলিত পায়ের শব্দ। কারা যেন দৌড়াচ্ছে। গাছপালা শুকনো ডালপালা মটমট শব্দে ভেঙ্গে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে।
করিম মাঝিকে জিজ্ঞেস করলাম: বনের ভেতর এ কিসের শব্দ?
 মাঝি বলল: ও কিছু না , হরিণ বা শূকরের দল দৌড়াচ্ছে। 
জিজ্ঞেস করলামঃ এ সময় এমন দৌড় দেওয়ার কারণ কি?
 মাঝি আশ্বাসের সুরে বললঃ হয়তো কোন বাঘ তাড়া করে থাকবে। এ ছাড়া আর কি!
 যে নৌকায় বসে আছি তা সরু একটা খালের ওপর ভাসছে।  বাঘের মতো ক্ষিপ্র প্রাণি এক লাফেই নৌকায় চলে আসতে পারবে।
২.
এমন ঘটনার পর করিম মাঝি  নৌকা নিয়ে দ্রুত খাল থেকে পুনরায় জামতলার দিকে রওয়ানা দেয়।
 যেতে যেতে বললঃ ভাই, সুন্দরবন হলো ভয়ংকর ও অনিশ্চিত জায়গা। পুরো বন ভয়ংকর বাঘের শিকারস্থল। মানুষের রাজত্ব এখানে চলে না। 
আমি তখন বললামঃ এ ভয়ংকর ডোরাকাটা প্রাণীটা দেখার জন্যই তো দূর দূরান্ত থেকে  ছুটে আসি আমরা। খাঁচার বাঘ থেকে মুক্ত বাঘের চলাফেরা মুগ্ধ করে সবাইকে। 
করিম মাঝি হেসে বললঃ  মুক্তবাঘ সুন্দর ততক্ষণ যতক্ষণ নিরাপদ দূরত্বে থাকে। যদি কোন সময় বাঘের সামনা সামনি হওয়া যায়, তখনই বোঝা যায় প্রাণীটির এই সুন্দরের বিপরীতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মমতা ও নৃশংস হিংস্রতা। কল্পনা করুন বাঘ আর আপনার মাঝে কোন বেড়া নেই। একজোড়া সোনালী জ্বলজ্বল চোখ তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। সে চাহনির কি যে মহিমা তা বাঘের রাজ্যে বাস করা আমরাই বুঝতে পারি। 
আরিফ তখন বলে উঠলোঃ বাঘ সাধারণত মানুষ খায় না। তবে যে বাঘ একবার মানুষের রক্তের স্বাদ পায় সে বাঘ মানুষ ছাড়া আর কিছু খেতে চায় না।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ থাকলেও সুন্দরবনের বাঘ  বেশি মানুষ খেকো হয়।  সুন্দরবনের বাওয়ালি, মৌয়াল আর জেলেদের প্রায়ই বাঘের আক্রমণের শিকার হওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় পড়েছি। তা আপনার  এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে নাকি?..
করিম মাঝি  বৈঠা  বাইতে বাইতে বনের দিকে এক পলক তাকালো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললঃ আমার বাবা আর চাচার কবরটুকুও দিতে পারি নাই। বাঘের পেটেই হজম হয়ে গেছে।
– বাঘের পেটে হজম হয়ে গেছে মানে?। আমি জিজ্ঞেস করলাম।
করিম মাঝি বেদনাতুর চেহারায় বনের দিকে আবার তাকায়। তারপর বলেঃ আজ থেকে ১২ বছর আগে আমার বয়স তখন ১৯ কি ২০ হবে। বনে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম বাবার সাথে। সেদিন আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা গেল বাঘের পেটে আর তার আগের বছর মধু কাটতে গিয়ে চাচাকেও বাঘে খেলো। 
এই বলে করিম মাঝি চুপ হয়ে নৌকা বাইতে লাগল। এক পলকে তাকিয়ে রইল দূর বনে। এ চাহনি যেন কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
নির্জন নিরব বন। মানুষের কোন বসতি নেই, সাড়া নেই শব্দ নেই। যেন অন্য কোন অজানা গ্রহের মধ্যে নির্জন বনপথের সরু এক খালে ছোট একটি ডিঙ্গি নৌকায় আমরা তিনজন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছি জামতলার দিকে। করিম মাঝির মন কিছুটা খারাপ।
 আমি নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলামঃ বাঘ কিভাবে পেলো আপনার বাবাকে?
– সে এক বিরাট ঘটনা । আমার বাবা তার জান কোরবান করে বাঘের কাছ থেকে আমার জান ভিক্ষা নিয়েছে। চোখের সামনে থেকে বিরাট এক বাঘ তাকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
 করিম মাঝি বলে যাচ্ছে… 
ভাই, আমাদের জীবন সুন্দরবনের উপরই নির্ভরশীল। এখানকার নদী খালে মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চালাতো আমার বাবা। চরপাটা জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় আমিও সাথে থাকতাম। বনে বাঘের ভয় থাকলেও শত শত জেলে জীবনের  ঝুঁকি নিয়েই মাছ ধরে। মানুষ খেকো বাঘ বড়ই ধুর্ত  হয়। তাই সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু এর মাঝেও যখন যাকে নেবে অতর্কিতেই নেবে। কাঁধে রাইফেল থাকলেও তাঁক করার সুযোগ দেবে না।
মাঝিঃ  সে বছর হাঁড়ভাঙ্গা শীত পড়েছিল। কুয়াশায় কাছের জিনিসও ভালো করে দেখা যায়না। রাতে চরপাটা জাল ফেলে ভোরে ভাটায় মাছ ধরতে চরে নামি আমরা পাঁচজন। আমি মাঝে, বাবা সহ দুজন পেছনে, আর আমার সামনে ছিল দুজন। আমরা মাছ ধরতে ধরতে সামনে এগুতে থাকি। 
হঠাৎ পরিবেশটা কেমন জানি থমকে গেল। আমার শরীর বিদ্যুৎ খেলে গেল। ঝোপের মধ্যে বাঘ আমার জন্য ওঁত পেতে বসে নেই তো? অনেক সময় এমন হয় যে বাঘ খালের পাশে ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে অনেকদূর পর্যন্ত নিঃশব্দে তার শিকারের অনুসরণ করে। নির্জন স্থানে সুবিধা বুঝে তার ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পড়ে। 
এমন সময় ঝোপের মধ্যে কি একটা নড়লো।
আমি পাশের ঝোপে তাকিয়ে দেখি বাঘ আমার দিকে ওঁত পেতে আছে। বাঘ কোন সময় কাছে চলে এসেছে টের পাইনি। আমি নড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। একটু যে সরে যাব কিংবা সাইড নেব এমন ক্ষমতাও ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ানক গর্জনে যেই না আমার উপর লাফিয়ে পড়বে, পেছন থেকে বাবা আমার সামনে চলে আসে। বাঘ বাবাকে তার শিকার মনে করে ঘাড়ে কামড় দিয়ে চিৎ করে ফেলে দেয়। আমাদের সামনেই দু’পা বাবার  বুকের দু পাশে দিয়ে তার গায়ের উপর উঠে বসে।
 বাঘের শরীরের নিচ থেকে বাবা জেলেদের উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেঃ আমার ছেলেটারে তোরা দেখে রাখিস।  জেলেরা যেইনা বাবাকে ছাড়াতে গেল, সাথে সাথেই বাঘ বাবার ঘাড়ে শক্ত করে কামড়ে ধরে চোখের পলকে বনের ভেতর নিয়ে গেল।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি তাকে। বাবার সন্ধানে সেদিন  বন বিভাগের লোকজনসহ আশেপাশের অনেক জেলে আসে। এত বড় বাঘের থাবা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণেই লাঠি হাতে টিন পেটাতে পেটাতে বনের নানা স্থানে অনুসন্ধান করতে লাগলো। অনেক সময় বাঘ মানুষ খেয়ে হাঁড়গোড় ফেলে যায়। সেগুলো উদ্ধার করে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু বাবার রক্তের দাগ অনুসরণ করে বহুদূর পর্যন্ত গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাঘের পেটেই তার কবর হলো।
৩.
খাল পেরুতে পেরুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। টকটকে লাল সূর্য পানিতে ডুবে গেল। বনের মাথায় উদিত হলো নতুন চাঁদ। চাঁদের আলোয় গোটা সুন্দরবনের রূপ যেন মোহনীয় হয়ে উঠলো। পুরো বন এলাকায় এক মায়াবী স্নিগ্ধতা বিরাজমান। ভরা জ্যোৎস্নায় পুরো বন সেজেছে অপরূপ সাজে। 
সন্ধ্যার বাতাসে বন্য ফুলের ও তৃণলতার সুঘ্রান। প্রতিটি ঝোপ পাখপাখালীর কলকাকলিতে মুখর। বিস্তীর্ণ সাগর পাড়ে এক শ্যামল বনভূমির মেলা। কখনো যদি না আসতাম তবে কেউ বললেও বিশ্বাস করতাম না, বাংলাদেশে জনহীন এমন এক জায়গা আছে যার সৌন্দর্য আমাজন অপেক্ষাও কম নয়। দিনে কিংবা রাতে যেখানে বাঘের ভয়ে মানুষ পথ হাটে না।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এক অন্য রঙের সুন্দরবন বনের দেখা মিলে। এ সময় ঝড়ের মৌসুম। তাই পর্যটক কমতে থাকে। কিন্তু সুন্দরবন এ সময় সাজে নতুন এক সাজে। এ সময় পুরো বন হয়ে যায় লালচে হলুদ। বিশেষ করে গেওয়া ও গড়ান গাছের আধিক্য যে অঞ্চলে বেশি, সে অঞ্চলে এই রংটা বেশি চোখে পড়ে। গেওয়া পাতাগুলো লালচে আর গরান পাতাগুলো পড়ে হলুদ হয়। এই দুই গাছের পাতার মেলবন্ধনে সুন্দরবনকে করে তুলে খুবই আকর্ষণীয়। পুরো বন যেন লালচে হলুদ। তার মধ্য দিয়ে শত শত হরিণ দল বেধে যায়। 
ইতোমধ্যে আমরা জামতলা চলে আসি। করিম মাঝিকে তার পাওনা দিয়ে বিদায় দেই। বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে জিজ্ঞেস করিঃ বাঘ আপনার এত বড় ক্ষতি করল, মাঝে মাঝে কি মনে হয় না যে; সুন্দরবনে বাঘ না থাকলেই ভালো হতো। করিম মাঝি হেসে বলেঃ কি যে বলেন ভাই, বাঘ না থাকলে কি আর সুন্দরবন থাকবে? আর সুন্দরবন না থাকলে আমরা কিভাবে টিকে থাকবো? বাংলাদেশের কী হবে?জীবন-মৃত্যু খোদার হাতে। আব্বা আর চাচার মৃত্যু এভাবেই লেখা ছিল। তাই মন খারাপ হলেও আফসোস হয় না। লক্ষ লক্ষ জেলে, বাওয়ালদের এ বনে আসা-যাওয়া। বছরে দু একটা এমন ঘটনা ঘটে। সবই খোদার ইচ্ছা। সব সময় সতর্ক থাকলে খোদা রক্ষা করবেন।
 করিম মাঝির বিদায়ের পর ট্রলারের ছাদে এসে বসলাম। রাতের প্রাঞ্জল স্নিগ্ধ বায়ু শরীর মন জুড়িয়ে দিল। পুরো বন জোৎসনা মাখা। জোৎসনার আলোতে দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম আমরা।
লেখক,
জোনাইদ হোসেন
পেশাঃ সাংবাদিক
READ MORE:  শ্রদ্ধাঞ্জলী তোমাকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *