যে ৪টি ভুলে নষ্ট হচ্ছে আপনার কিডনি
কিডনির রোগ নিয়ে কি কেবল কিডনি রোগীরা সচেতন হবেন? নিশ্চয়ই নয়। কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। নীরবে কারও কিডনি বিকল হতে থাকলেও তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা অনুভব করা যায় না। যখন যায়, তখন হয়তো রোগটি জটিল অবস্থায় চলে গেছে। তাই যেকোনো সুস্থ মানুষকেও জানতে হবে কিডনি ভালো রাখার উপায়।
ধূমপান কিডনি অকেজো করে
মানব দেহের ২৫০ ভাগের একভাগ ওজন হলো কিডনি। কিডনিতে সারা দেহের চারভাগের একভাগ রক্ত প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ কিডনিতে রক্তনালী অনেক বেশি থাকে। ধূমপানের সাথে কিডনি অকেজো সরাসরি যুক্ত। ধূমপান সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে রক্তনালীর। এটি রক্তনালীকে অকেজো করে। ফলে হার্টের অসুখ হয়। হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ঝুঁকির কারণ ধূমপান। যখন ধূমপান করা হয় তখন হার্টের রক্তনালী অকেজো হয়ে সেই সঙ্গে কিডনির রক্তনালীও অকেজো হয়ে যায়। ধূমপান বদঅভ্যাস, এটি কিডনি, হার্টকে ধ্বংস করছে, ক্যান্সার হচ্ছে। অথচ চাইলে সহজে বাজে অভ্যাসটি ত্যাগ করা যায়।
অতিরিক্ত ওজন
অনেকে রেস্তুরেন্টে গিয়ে ফাস্টফুড খায়। এসব খাবারের মধ্যে মাখন, ক্রিম ও চর্বিযুক্ত মাংস ভরপুর থাকে। ফলে মানুষ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। কারণ, রেস্তুরেন্ট থেকে বাসায় ফিরে কম্পিউটার ও মোবাইল টিপে সময় পার করেন, কোনো ব্যায়াম করেন না, এতে ওজন বেড়ে যায়। ওজন সরাসরি কিডনিকে অকার্যকর করে। ওজনের কারণে কিডনির যে ছাকনি থাকে সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ওজন বেশি হলে শরীরের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়, শরীরের ব্যথা করে। শুরু হয় ব্যথার ওষুধ সেবন। ব্যথার ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি অকেজো হয়। এ ছাড়া ওজন বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়, প্রেসার বেড়ে যায়, হার্ট ডিজিজ হয়। ফলে কিডনি অকেজো হয়। হার্টের সঙ্গে কিডনির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, হার্টে অসুখ হলে কিডনিতে সরাসরি আক্রমণ হয়। ওজন এভাবে মানব দেহের ক্ষতি করে।
ব্যথার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ব্যথার ওষুধ খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকে যেকোনো ব্যথা হলেই ব্যথার ওষুধ খায়। যেমন: কোমরে, পেটে ও মাথা ব্যথা হলেই ব্যথার ওষুধ খায়। যাদের একটু বয়স হয়েছে এবং হাঁটু ও কোমরে ব্যথা আছে, তারা বছরের পর বছর ব্যথার ওষুধ খেতে থাকে। এ ব্যথার ওষুধ কিডনি অকেজো করে দেয়।
সময়মতো চিকিৎসা
কিডনিতে পাথর ধরা পড়লে সময়মত চিকিৎসা না করালে কিডনি অকেজো হয়ে যায়। বারবার কিডনিতে ইনফেকশন হচ্ছে অথচ সময়মতো চিকিৎসা করছেন না। এতে কিডনি অকেজো হয়ে যায়। আবার জন্মগ্রহণের সময় অনেক শিশু ছোট ছোট ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যেমন: প্রস্রাবের নালীতে একটি ভাল্ব থাকে। এ ভাল্ব থাকার কারণে শিশু প্রস্রাব করতে অনেক কষ্ট হয়। চাপ দিয়ে প্রস্রাব করতে হয়। প্রস্রাব সামনের দিকে না এসে থলি থেকে উল্টো কিডনিতে চলে যায়। এতে কিডনি আস্তে আস্তে বেলুনের মতো ফুলে যায়, ফলে কিডনি অকেজো হয়ে যায়। অথচ এটি অপারেশন করতে মাত্র ছয় মিনিট লাগে। যদি এটি অপারেশন করা হয় তাহলে কিডনির কোনো ক্ষতি হয় না। অনেক সময় শিশুদের কিডনি থেকে হার্টের নালী সরু হয়ে আসে। এর ফলে, কিডনি রোগ হয়। সময়মতো চিহিৃত করে চিকিৎসা করতে পারলে শিশুদের আর কিডনি নষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে মা-বাবাকে সচেতন হওয়া জরুরি। দেশে অসংক্রমক রোগের কারণে ৭০ ভাগের মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ নিয়মিত ব্যায়াম করলে এসব রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সচেতন হলে সংক্রমক রোগগুলোর ৮০ ভাগ প্রতিরোধ করা যায়। যেমন: খাবার পূর্বে ভাল করে হাত ধুয়ে নেওয়া, খাবার-দাবার ঢেকে রাখা, মাস্ক পরিধান করা।