পীর সম্পর্কে কি বলছে কুরআন হাদিস?
আমরা যাকে পীর মুরিদ করা বলে থাকি
মানে হল বায়াত করা এবং হওয়া এর বিধান
কি কোরআন হাদিসে কোথাও আছে?
হে রাসূল! যেসব লোক আপনার নিকট বাইয়াত
হচ্ছিল, তারা আসলে আল্লাহর নিকটই বাইয়াত হচ্ছিল।
তাদের হাতের উপর আল্লাহর কুদরতের হাত ছিল।হে রাসূল! আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নীচে আপনার নিকট বাইয়াত হচ্ছিল। (সূরা ফাতহ ঃ ১৮)
★ অপর আয়াতে আল্লাহ বাইয়াত বা প্রতিশুতি বদ্ধ হওয়ার পর তা রক্ষাকারী সম্পর্কে বলেন :-
ﻓَﻠْﻴُﻘَﺎﺗِﻞْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺸْﺮُﻭﻥَ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺑِﺎﻵﺧِﺮَﺓِ ﻭَﻣَﻦ
ﻳُﻘَﺎﺗِﻞْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻓَﻴُﻘْﺘَﻞْ ﺃَﻭ ﻳَﻐْﻠِﺐْ ﻓَﺴَﻮْﻑَ ﻧُﺆْﺗِﻴﻪِ ﺃَﺟْﺮًﺍ ﻋَﻈِﻴﻤًﺎ
যে ব্যক্তি তার ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ করবে এবং
তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করবে, সে আল্লাহ পাকের প্রিয়জন হবে। আর নিশ্চিতভাবে আল্লাহ পাক মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ৭৬)
★ সহিহ হাদীসে আছে :-
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ (ﺭﺽ ) ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲْ ( ﺻﻠﻌﻢ) ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﻓِﻲْ ﻋُﻨُﻘِﻪ
ﺑَﻴْﻊَُ’ ﻣَﺎﺕَ ﻣَﻴْﺘَﺔً ﺟَﺎﻫِﻠِﻴْﺔً ـ (ﻣﺴﻠﻢ )
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) রাসূলে পাক (সা) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (মুসলিম)
★ অপর হাদিসে আছে :-
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦْ ﺩِﻳْﻨَﺎﺭٍ (ﺭﺽ) ﺍَﻧَّﻪُ ﺳًﻤِﻊَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦْ ﻋُﻤَﺮَ (ﺭﺽ) ﻳُﻘَﻮْﻝُ ﻛُﻨَّﺎ
ﻧَﺒَﺎﻳِﻊْ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ( ﺻﻠﻌﻢ) ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊِ ﻭَﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔِ ﻳَﻘًُﻮْﻝُ ﻟََﻨَﺎ ﻓِﻴْﻬَﺎ
ﺍِﺳْﺘَﻄَﻴْﻌْﺘُﻢْ ـ (ﻣﺴﻠﻢ )
★ আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা রাসূল (সা) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতাম, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর এবং তিনি আমাদের সামর্থ্য উক্ত আমল করার অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম)
★★★ পীরে-মুর্শিদ বা ওলী ধরতে হবে, এ প্রসঙ্গে
পবিত্র কোরআন পাকে বহু নির্দেশ বা ইংগিত আছে ।
** তবে পীর শব্দটি পবিত্র কোরআন পাকে নেই। কারন পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে । যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারন উহা ফার্সি শব্দ, তবে এর প্রতিটি ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে, যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা- সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।
** আবার সালাত আরবি শব্দটি স্থান বিশেষ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ ভাবে পীর ফার্সি শব্দের প্রতিশব্দ পবিত্র কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করেছেন, যথাঃ ‘অলি’ বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ, ইমাম, বহুবচনে আইম্মা, হাদি, ছিদ্দিকিন, ইত্যাদি।
নিম্নে পবিত্র কোরআন শরিফের কিছু আয়াত অর্থসহ
পেশ করা হলঃ-
(১) হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের।
[সুরা ৪ নিসা: ৫৯]।
(উলিল আমর এর মানে হল ন্যায় বিচারক/ধর্মীয় নেতা/ ওলি-আউলিয়া/পীর-মুর্শিদ ইত্যাদি শব্দ ধরা যেতে পারে)
(২) স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক
সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) ধর্মীয় নেতা সহ আহ্বান করব।
[সুরা ১৭ বনী-ইসরাঈল: ৭১]
★ যারা তোমাদের ধর্ম মতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এজন্যে যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে, কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা।
(৩) নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। [সুরা ৩ ইমরান: ৭৩-৭৪] ।
(৪) অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। [সুরা ৩৬ ইয়া-সীন: ২১]।
(এখানে রাসুলের কথা বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা) এর
দ্বীন প্রচারের সিলসিলা কিয়ামত পর্যন্ত জারি
থাকবে আল্লাহর ওলীগন এ দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন যেমন ইন্দুস্থানে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি আজমিরি (রহ) ৯০ লক্ষ মুসলমান করেছিল। বাংলাদেশে কোন নবী আসে নি সাহাবীও না ওলীগন দ্বারা কোটি কোটি মুসলমান হয়েছে। তাদের কাছে মুসলমানগন বায়াত গ্রহন করেছিল মুরিদ হয়েছিল।)
(৫) যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সুরা ৩১ লুকমান: ১৫]।
(এখানে কামেল পীরের কাছে বায়াত গ্রহন করার ইংগীত হয়েছে শরীয়ত বিরোধী কোন নামধারী পীর এর কাছে নয়)
(৬) অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানেন তাদের নিকট হতে জেনে নাও। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ৭]।
★ কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।(আল-হাদিস)
তাই এমন কারো কাছ থেকে ইসলামকে জানার জন্য শিখার জন্য আল্লাহর হুকুম বা ইংগীত যাদের কাছে ইলমে লাদ্দুনি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে খাটি জ্ঞান রয়েছে আর ওলী তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর বন্ধু যাদের নিকট ইলমে লাদ্দুনি রয়েছে তাদেরকে না যারা নাকি শরীয়ত বিরোধী মুর্খ তাই এখানে বর্তমানে কামেল ওলীর চাইতে উত্তম আর কে হতে পারে যার কাছে সঠিক জ্ঞান পাবে কারন নবী-রাসুল- সাহাবাগন তো এখন নেই)
(৭) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
(ছাদেকিন) সত্যবাদীগণের সঙ্গী হয়ে যাও। [সুরা তাওবা: ১১৯]।
(কামেল পীর বা ওলী বুজুর্গ হওয়ার ১ম শর্ত সত্যবাদী বলা যায় আব্দুল কাদির জিলানী (রা) ছোট বেলায় ডাকাতের হামলার শিকার হয়েও মায়ের কথামত ওনার কাছে লুকানো স্বর্নের কথা গোপন করে নি ওনার সেই সত্য প্রকাশ করার পর ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে ভাল হয়ে ইমানদার হয়ে গেছিল। অন্য কারো এমন কারামত পাবেন না এটা পাওয়ার জন্য পীর-ফকির/ ওলী-দরবেশের কাছেই যেতে হবে)
(৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী । [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]।
(৯) আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তাঁর জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। [সুরা কা’হফ: ১৭]।
(সিদ্ধান্ত আপনার কাছে আল্লাহর কোন হেদায়াতপ্রাপ্ত ওলীর কাছে যাবেন তাদের অনুগত
থাকবেন নাকি জালিমের কাছে যাবেন)
(১০) সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য।
[সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।
(১১) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় বা ওয়াছিলা তালাশ কর।
[সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।
(বহু সহিহ হাদিসে আসছে যে সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ (সা) এর উসিলা দিতেন বা ওনারা একে অন্যের উসিলা দিতেন এখন আমরা নবী-রাসুল, সাহাবী, ইমাম, ওলী- আউলিয়ার উসিলা দেই)
(১২) “যে দয়াময় আ̂ল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ, সে ব্যাতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না”। [সুরা ১৯ মারঈয়াম: ৮৭]
– এখন জানতে হবে তাহলে কারা তারা যারা আমাদের জন্য শুপারিশ করবে?
তারা হলেন নবীজি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, শহীদগন এবং আল্লাহর প্রিয় অলীগণ এবং অন্যন্য কারো কিছু সম্প্রদায়। তাহলে ওহাবীদের যদি ওলীগনের শুপারিসকে তুচ্ছ মনে হয় তাদের দরকার নেই কিন্তু আমাদের দরকার আছে সবার সুপারিশ।