কী এবং কেন?

রহস্য সমাধানে সাহায্যকারী ৮টি প্রাণী

অনেক প্রাণী রয়েছে যারা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রহস্য সমাধানে সাহায্য করেছে। এই প্রকৃতির অনেক রহস্য আমাদের কাছে পূর্বে অজানা ছিল। এখনো অনেক বিষয় রয়েছে যা রহস্য আবৃত।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রাণী এই সকল রহস্য সমাধানে আমাদের সাহায্য করেছে। আজকে এমন ৮টি প্রাণীদের সম্পর্কে জানব যারা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন রহস্য সমাধানে সাহায্য করেছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ক্যান্সার, ভূমিকম্প এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের রহস্য সমাধানে বিভিন্ন প্রাণীর আমাদের সাহায্য করেছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীদের রহস্য সমাধানে সাহায্য করা ৮টি প্রাণী সম্পর্কে।

 

১। কাঠবিড়ালি নভোচারীদের সাহায্য করেছে

 

আপনি যদি নভোচারী হয় তাহলে আপনাকে ওজনহীন পরিবেশে থাকার অভ্যাস করতে হবে। ওজনহীনতা আমাদের শরীরের উপর একটি বিরাট প্রভাব ফেলে।

কারণ মহাকাশচারীদের ওজনহীন পরিবেশে থাকতে হয়। এই ওজনহীন পরিবেশ মহাকাশচারীদের হাড় ও পেশি বিভিন্ন ক্ষতির জন্য দায়ী।

মহাকাশচারীরা যখন পৃথিবীতে ফিরে আসেন তখন তাদের এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে অনেক দিন সময় লাগে।

এই সমস্যাটির সমাধান কিভাবে করা যায় তাও অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছিলো। পরবর্তীতে তারা কাঠবিড়ালি দের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান।

কাঠবিড়ালির তাদের হাড় ও মাংসপেশি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তারা কিভাবে এটি করছে তা বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

খুব দ্রুতই আমরা এর সমাধান বের করতে পারবো বলে আশা করি।

 

২। তিমিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপার বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছেন

 

বিজ্ঞানীরা জলজ পরিবেশের পরিবর্তন লক্ষ্য করার বিষয় তিমিদের সাহায্য নিচ্ছেন। তিমির একটি প্রজাতি রয়েছে যারা সাধারণত শীতল জলে থাকতে পছন্দ করে।

বিজ্ঞানীরা তাদের উপরে অনেকদিন যাবৎ লক্ষ্য রাখছিলেন। তারা হঠাৎ করে দেখতে পেলেন যে তিমিরা এতদিন যে জায়গায় ছিল এখন সেখান থেকে অন্য জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।

READ MORE:  বাংলাদেশ যেসব দিক থেকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে

তারা বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত হলেন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারলেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওই অঞ্চলের পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেছে।

যে কারণে তিমিরা তাদের পুরাতন বাসস্থান ছেড়ে নতুন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে।

 

৩। জেব্রাফিস ক্যান্সারের রহস্য উদঘাটন করার ব্যাপারে সাহায্য করছে

 

জেব্রাফিস একটি সামুদ্রিক প্রাণী। খুবই ছোট আকারের একটি মাছ। এদের দেহে জেব্রাদের মত ডোরাকাটা দাগ থাকে। মূলত এই কারণে এদের নাম হয়েছে জেব্রাফিস।

বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে এদের দেহের সাদাকালো দাগগুলি চলে যেতে পারে। পরবর্তীতে এরা এই কোষগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে জেব্রাফিস এবং মানুষের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জিন রয়েছে। ক্লোন ক্যান্সারের সাথে জড়িত একটি জিন মানুষ এবং জেব্রাফিস উভয়ের রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা কিভাবে জেব্রফিশ তাদের সাদাকালো ডোরাগুলোকে পূরণ করে তা জানার মাধ্যমে ক্লোন ক্যান্সার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন।

 

৪। ল্যান্ড মাইন খুঁজে বের করার জন্য ইঁদুরের ব্যবহার

 

বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে ল্যান্ডমাইন বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

যুদ্ধপরবর্তী সময়ে সে ল্যান্ড মাইনগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। কিন্তু সমস্যার ব্যাপার হচ্ছে সকল ল্যান্ডমাইন খুঁজে পাওয়া অত সহজ নয়।

 

তার উপরে ল্যান্ড মাইন খুঁজতে গিয়ে মানুষের জীবন ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মোজাম্বিক, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া সহ আরো অনেক দেশে এখনও প্রচুর পরিমানের ল্যান্ডমাইন লুকানো রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার একটি আশ্চর্য সমাধান বের করেছেন। তারা ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করার ইঁদুর ব্যবহার করছেন। ইঁদুর ব্যবহার করার একটি সুবিধা রয়েছে। ইঁদুরেরা ল্যান্ড মাইন খুঁজে বের করে ঠিকই কিন্তু এগুলোকে ট্রিগার করে না।

ফলে ওই ল্যান্ডমাইন গুলিকে সহজে অকার্যকরী করে ফেলা যায়। ল্যান্ডমাইন খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা ইঁদুরদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

 

৫। বন্যপ্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে

 

READ MORE:  কাতার গিয়ে বিশ্বকাপ দেখতে আপনার কত খরচ হবে?

বিভিন্ন ধরনের প্রাণী প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা পূর্বাভাস পেয়ে থাকে। তাদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে আমরাও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে যাব। পেরুর বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাণীদের আচরণের উপর গবেষণা করে ধারণায় পৌঁছেছেন।

২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর নিমার দক্ষিনে প্রায় ৯ মাত্রা একটি ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের বেশ কিছুদিন আগে থেকে বিভিন্ন প্রাণীরা বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসে।

যারা সাধারণত কখনোই বনাঞ্চল থেকে বেরোতো না। এতে কি প্রমাণিত হয় না যে বন্যপ্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বুঝতে পারে?

 

 

৬। জোকেরা কোন অঞ্চলের প্রাণীবৈচিত্র্য জানতে সাহায্য করে

 

শিরোনাম শুনে অবাক লাগলেও ঘটনা সত্য। বিজ্ঞানীরা জোকদের সাহায্যে ওই অঞ্চলের প্রাণীবৈচিত্র্য বুঝতে পারেন। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে জোক বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত খেয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীরা জোকের দেহ বিশ্লেষণ করে তাদের রক্ত খাওয়া প্রাণীদের সম্পর্কে জানতে পারে। জোকের দেহে তারা যে সমস্ত প্রাণী থেকে রক্ত খায় তার ডিএনএ পাওয়া যায়।

 

৭। তিমিরা আমাদের দীর্ঘায়ু লাভ করার সূত্র শেখায়

 

তিমিরা হল সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা শুধু মাত্র দৈহিক আকারে বড় নয়, এরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। গড়ে তিমিরা ২২০-২৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

বিজ্ঞানীরা তিমিদের এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য খুঁজতে গিয়ে দেখেন যে তিমিরা ক্যান্সারমুক্ত জীবন যাপন করে।

যদিও কোষীয় অবস্থানে আমাদের থেকে তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২০০০ গুণ বেশি। এই সম্ভাবনার নিয়ে কিভাবে তিমিরা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে তা নিয়ে গবেষণা চলছে।

অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমরা এখান থেকে অনেক নতুন তথ্য জানতে পাব। যা আমাদের দীর্ঘায়ু লাভ উঠতে সাহায্য করবে।

 

 

৮। ভেড়া এবং ছাগল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস দিতে পারে

 

আগেই বলেছি যে বিভিন্ন প্রাণীরা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে পারে।

একজন জার্মান বিজ্ঞানী ভেড়া ও ছাগলের আচরণ পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, তারা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পূর্বাভাস দিতে পারে।

READ MORE:  পৃথিবীর ১০টি অমীমাংসিত রহস্য

পাহাড়ি ছাগল ও ভেড়ারা অগ্ন্যুৎপাতের ৪-৫ ঘণ্টা আগে ওই অঞ্চল ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে আসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *