হোয়াইট হাউজ নিয়ে কিছু অজানা তথ্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অফিসিয়াল কর্মক্ষেত্র এবং নির্বাহী বাসভবন হিসেবে হোয়াইট হাউস বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত, গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বীকৃত ভবন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্যবাহী ধ্রুপদী অবয়বের পিছনে এটির নির্মাণ ঘটনাবলি এবং ইতিহাসের গল্পগাথা বহুল প্রচারিত নয়। তাই এ নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা কৌতূহল, নানা প্রশ্ন।
আজ এই দৃষ্টিনন্দন কাঠামো সম্পর্কে আমরা কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এবং বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবো।
আমেরিকার ক্রীতদাসরাই কি হোয়াইট হাউজ তৈরি করেছিল ?
না। হোয়াইট হাউজ পিরামিডের মতো ক্রীতদাসদের শ্রমে তৈরি হয়নি। ন্যাশনাল আর্কাইভ অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোন ক্রীতদাস ছিল না, কিন্তু তারা হোয়াইট হাউস নির্মাণে সাহায্য করার জন্য ক্রীতদাস মালিকদের বেতন দিত।
হোয়াইট হাউস হিস্টরিক্যাল এসোসিয়েশন অনুসারে, ওয়াশিংটন ডি.সি এর নগর কমিশনাররা মূলত নির্মাণের জন্য ইউরোপ থেকে শ্রমিক আনার পরিকল্পনা করেন, যা ১৭৯২ সালে শুরু হয়।
কিন্তু তাতে তারা যথেষ্ট সাড়া না পেয়ে স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক এবং কারিগরদের পাশাপাশি কাজ করার জন্য আফ্রিকান-আমেরিকানদের শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ভবনের জন্য স্থান নির্বাচন করেছিলেন। জেমস হোবান, একজন আইরিশ অভিবাসী স্থপতি যার করা নকশা একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই করা হয়।
তিনিই হোয়াইট হাইজের মূল ভবন নকশা প্রণয়নকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৮১২ সালের যুদ্ধে ব্রিটিশরা হোয়াইট হাউজে আগুন লাগানোর পর ১৮১৪ সালে হোবানের নেতৃত্বেই এর সংস্করণের কাজ শুরু হয়।
হোয়াইট হাউসের ঠিকানা কি ?
হোয়াইট হাউস ওয়াশিংটন ডি.সি অথবা সম্ভবত আমেরিকান জাতির কাছেই সবচেয়ে বিখ্যাত ঠিকানা।
এটি ১৬০০ পেনসিলভানিয়া এভিনিউতে অবস্থিত। ১৭৯০ সালের রেসিডেন্স অ্যাক্ট দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন পোটোম্যাক নদীর পূর্ব তীরে রাজধানী ভবনের কাছেই প্রেসিডেন্ট ভবনের জন্য স্থান নির্বাচন করেন।
বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী ভবন একাধিক সংস্করনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯০২ সালে থিওডোর রুজভেল্টের সাঁজসজ্জাজনিত ব্যাপক পরিবর্তন, যার মধ্যে ভবনে বৈদ্যুতিক ব্যাবহার শুরু করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১৯৪৮ সালে প্রকৌশলীরা ভবনটিকে কাঠামোগতভাবে এবং বাসস্থানের জন্য অনিরাপদ মনে করেন।
প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান ভবনটির অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ভিত্তি ভেঙ্গে ফেলে হোয়াইট হাউজকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সংস্কারের আদেশ দেন। ট্রুম্যান এবং তার পরিবার সংস্কারের পুরো সময় ব্লেয়ার হাউজে বাস করতেন।
হোয়াইট হাউজের প্রথম বাসিন্দা কোন প্রেসিডেন্ট দম্পতি ?
যদিও জর্জ ওয়াশিংটন হোয়াইট হাউজের অবস্থান এবং স্থপতি নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি কখনো হোয়াইট হাউজে বাস করেননি।
প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট বাসভবনে স্থানান্তরিত হন ১৮০০ সালে ভবনের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার আগে। তার পর থেকে, প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবার ১৬০০ পেনসিলভানিয়া এভিনিউতে বাস করেছেন।
হোয়াইট হাউজে থাকা অবস্থায় দুই জন প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন: ১৮৪১ সালে উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন এবং ১৮৫০ সালে জাকারিয়া টেইলর এবং তিনজন ফার্স্ট লেডি যারা হলেন লেটিয়া টাইলার, ক্যারোলিন হ্যারিসন এবং এলেন উইলসন।
হোয়াইট হাউজ কত রুমের বাসা ?
৫৫০০০ বর্গ ফুটের ছয় তলা হোয়াইট হাউস তার ১৩২ রুম (যার মধ্যে ১৬ টি পারিবারিক অতিথি কক্ষ), ৩৫ টি বাথরুম সঙ্গে নিয়ে গর্ব করে।
হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েব পেজ অনুসারে এটিতে ২৮টি ফায়ারপ্লেস, আটটি সিঁড়ি, তিনটি লিফট, ৪১২টি দরজা ও ১৪৭টি জানালা এবং ১৪০ জন অতিথির নৈশভোজের আয়োজনে সক্ষম একটি সজ্জিত রান্নাঘর রয়েছে।
প্রতি চার থেকে ছয় বছর অন্তর হোয়াইট হাউজে নতুন রং করা হয় যেখানে মাত্র ৫৭০ গ্যালন রং খরচ হয়।
এই ভবন এবং মাঠের মধ্যে রয়েছে একটি ইনডোর সুইমিং পুল যা ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং একটি আউটডোর পুল যা জেরাল্ড আর. ফোর্ড দ্বারা তৈরি করা হয়। অন্যান্য সকল আধুনিক সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে একটি টেনিস কোর্ট, এক লেনের বোলিং গলি, একটি ছোট সিনেমা থিয়েটার, গেম রুম ও জগিং ট্র্যাক ।
ভবনে গোপন কক্ষের গুজবও আছে, কিন্তু হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল এসোসিয়েশনের মতে ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে বোমা হামলার পর ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন পূর্ব উইং-এর অধীনে নির্মিত একটি জরুরী আশ্রয়স্থল ছিল।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার সময় এই কক্ষটি ব্যবহার।এই ভবনের নিচে অন্তত দুটি সুড়ঙ্গ বিদ্যমান: একটি ট্রেজারি ভবনের সাথে সংযুক্ত, এবং অন্যটি দক্ষিণ লনের দিকে নিয়ে যায়।
হোয়াইট হাউজ নামকরনের ইতিহাসঃ
ভবনের পাথরের বাইরের অংশ সর্বপ্রথম ১৭৯৪ সালে একটি চুনারঙের হোয়াইটওয়াশ করা হয়। প্রধানত এর লক্ষ্য ছিল ভবনের দেয়ালের সুরক্ষা এবং শীতের প্রকোপ কমানো।
হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল এসোসিয়েশনের মতে, “হোয়াইট হাউস” নামটি ১৮১২ সালে যুদ্ধের আগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
কিন্তু মূলত প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ১৯০১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের আনুষ্ঠানিক নাম হোয়াইট হাউস নামে মনোনীত করেন।
এর পূর্বে এই ভবনকে রাষ্ট্রপতি ভবন, নির্বাহী ভবন, পিপলস হাউস এসব নামেও ডাকা হতো।
ওয়েস্ট উইং!
থিওডোর রুজভেল্ট ১৯০২ সালে তার কর্মক্ষেত্র বাসভবন থেকে নবনির্মিত ভবন ওয়েস্ট উইং-এ স্থানান্তর করার পর থেকে, দোতলা ওয়েস্ট উইংকেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিস-বাড়ি ধরা হয়।
ওভাল অফিস ছাড়াও ওয়েস্ট উইং কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে সিচুয়েশন রুম, ক্যাবিনেট রুম, রুজভেল্ট রুম এবং প্রেস ব্রিফিং রুম।
ওভাল অফিস, যা ১৯০৯ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট এর সময় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হিসেবে ব্যাবহার হয়ে আসছে।
এটি আসলেই ওভাল আকৃতির এবং এখানে সেই বিখ্যাত ওক রেসোলিউট ডেস্ক রয়েছে, যা ১৮৮০ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক প্রেসিডেন্ট রাদারফোর্ড বি হেইস উপহার পেয়েছিলেন।
ডেস্কটি ব্রিটিশ জাহাজ এইচ.এম এস রেসোলিন বোর্ড থেকে তৈরি। লিন্ডন জনসন, রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ড ছাড়া প্রায় সব প্রেসিডেন্ট এটি ব্যবহার করেছেন।
সিচুয়েশন রুম- যেটি জন এফ কেনেডি কনফারেন্স রুম নামেও পরিচিত, ওয়েস্ট উইং বেজমেন্টে অবস্থিত। বেশ কয়েকটি বড় কক্ষ নিয়ে এটি গঠিত। ১৯৬১ সালে জেএফকে কর্তৃক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার হিসেবে ব্যাবহৃত হতো।
এটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জনসন ব্যবহার করেন এবং সএখানেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নেভি সিল’দের হাতে ওসামা বিন লাদেনের হত্যাকাণ্ড দেখেন।
ক্যাবিনেট রুম, নামেই বোঝা যায় এর কাজ কি। প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের সাথে এখানে মিটিং করেন। এছাড়াও রুজভেল্ট রুম, যেখানে থিওডোর রুজভেল্টের অফিস ছিল, এখন এটি ছোটোখাটো মিটিং এর কনফারেন্স রুম হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
ইস্ট উইং এ ফার্স্ট লেডি এবং তার কর্মচারীদের জন্য অফিস স্পেস আছে। বড় অনুষ্ঠানের সময় চমৎকার সজ্জিত গেট দিয়ে ভিআইপি অতিথিরা এখানে প্রবেশ করেন।