সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার কিভাবে ময়লা পরিষ্কার করে?
আমরা যে সমস্ত সাবান ব্যবহার করে থাকি, সেগুলো তৈরি হয় যথেষ্ট খাদ্যগুণ সম্পন্ন ভোজ্য তেল থেকে।পরিষ্কার করতে যে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় তাদের কোনোটার সাবানের গুণ আছে, আবার কোনোটার তা নেই।
সাবান চর্বি জাতীয় অ্যাসিডের সোডিয়াম অথবা পটাশিয়াম লবণ থেকে তৈরি হয়। অন্যদিকে ডিটারজেন্ট কৃত্রিম জিনিস।
সাধারণ সাবানে যে সব রাসায়নিক পদার্থ থাকে, বাজারে ডিটারজেন্ট হিসেবে যা চালু আছে, তাতে তা পাওয়া যায় না। জামা, কাপড় ইত্যাদির গায়ে ময়লা জমে সেখানে আটকে থাকতে পারে তিন ভাবে রাসায়নিক, যান্ত্রিক অথবা বৈদ্যুতিক বলের সাহায্যে যে জিনিসটা ময়লা আটকে রাখে সেটা প্রায়শই তে তেলে হয়। সেখানে পানি দিলে জায়গাটার ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যায়, কিন্তু ময়লাটা উঠতে চায় না। ডিটারজেন্টের কাজ হলো ময়লা আটকে থাকার বাঁধনকে আলগা করে দেওয়া।
বিজ্ঞানের যে নিয়ম অনুসারে এই ঘটনা ঘটে, তার নাম পৃষ্ঠটান। যে তরলের পৃষ্ঠটান যত বেশি হবে, ভিজিয়ে দেবার শক্তিও তার তত কমতে থাকবে। কাপড়–চোপড় পরিষ্কার করবার জন্য আমরা সাধারণত পানি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, পানির ভেজানোর ক্ষমতা খুব বেশি নয়। ডিটারজেন্ট দেওয়ার ফলে পানির পৃষ্ঠটান কমে যায়। ডিটারজেন্ট অণুর মধ্যে আছে একটা মাথা আর একটা লেজ। ডিটারজেন্ট অণুর মাথার অংশ পানি ভালোবাসে (পানিগ্রাহী), লেজ কিন্তু পানি মোটেই পছন্দ করে না। বরং উল্টো পানিকে দূরে ঠেলে দিতে চায়। এভাবে পানিবিন্দুর গোলাকার গঠন ভেঙ্গে গিয়ে পানির পৃষ্ঠটান কমে যায় এবং পানি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে
থাকে।
এই ঘটনা ঘটতে অবশ্য কিছুক্ষণ সময় লাগে, তাই কিছুসময় ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে রাখলে ময়লা তাড়াতাড়ি সরে যায়, তখন কাপড়–চোপড় পরিষ্কারও হয় বেশ দ্রুত।
আবার ঠাণ্ডা পানির চাইতে গরম পানিতে জামা–কাপড় কাচলে ওটা আরো তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়। কারণ তাপ দিয়ে পানি গরম করলে ওই পানির পৃষ্ঠটান কমে যায়। ময়লা একবার জামা–কাপড় থেকে আলগা হয়ে এলে সামান্য ঘষা দিলেই সরে আসে। তখন ডিটারজেন্ট অণুর দল ময়লা কণার চারদিকে একটা পাতলা ফিল্মের আবরণ সৃষ্টি করে। হাত দিয়ে ঘষে সাবানের যে ফেনা উৎপন্ন হয় সেই ফেনাই পাতলা ফিল্মের আবরণ।
ডিটারজেন্ট দিয়ে ঘষাঘষির ফলে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হয়। এই বিদ্যুৎআধানের জন্যেই ময়লার কণা আবার জামা–কাপড়ে গিয়ে জমতে পারে না।