গুড় এর উপকারিতা কতটুকু জানি?

গুড় হল এক ধরণের মিষ্টিকারক যা আখ থেকে তৈরি করা হয়। এটিকে চিনির একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ধরা হয় কারণ এটি অপরিশোধিত। যদিও মধু এবং গুড়ে সমপরিমাণ ক্যালোরি থাকে, গুড়কে তুলনামূলকভাবে বেশি ভাল মনে করা হয় কারণ এতে ভিন্ন প্রকারের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যেগুলি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বলে গণ্য হয়।

গুড় সাধারণত তিন ধরণের পাওয়া যায়-নিরেট, তরল এবং মিহি। তরল গুড় মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক অংশে খুবই জনপ্রিয়, আবার মিহি গুড় গ্রামীণ লোকজনের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। গুড় বিভিন্ন রঙের হয় এবং এটি সোনালী বাদামী থেকে গাঢ় বাদামী রঙের হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল যে গুড় যত গাঢ় হবে ততটাই সমৃদ্ধ এবং গভীর হবে এর স্বাদ।

দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গুড় খাওয়া হয়। গুড় ব্যাপকভাবে নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার স্থানীয় রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি ভারতীয় রন্ধনশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সাম্বার এবং রসম তৈরি করা সময় এক চিমটি গুড় ব্যবহার করা হয় এগুলির স্বাদ উন্নত করার জন্য। চিক্কি, যেটি ছোট এবং বড়দের মধ্যে সমান জনপ্রিয়, তৈরি হয় চীনাবাদাম এবং গুড় দিয়ে। গুড় ব্যবহার মিষ্টি, মদজাতীয় পানীয়, চকলেট, ক্যান্ডি, টনিক, সিরাপ, শরবত, কেক ইত্যাদি তৈরি করতে। মহারাষ্ট্র সারা বিশ্বে গুড়ের সবচেয়ে বড় উৎপাদক।

গুড়ের ব্যপারে কিছু মৌলিক তথ্যঃ

বোটানিক্যাল নামঃ গুড় হল আখের অর্থাৎ সাখারাম অফিসিনারাম-এর একটি উপজাত পণ্য।

পরিবারঃ পোয়াসি (আখের জন্য)

প্রচলিত নামঃ গুড়

সংস্কৃত নামঃ গুড়/শর্করা

স্থানীয় অঞ্চল এবং ভৌগোলিক বণ্টনঃ

কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে গুড়ের জন্ম পূর্ব ভারতে, আবার অন্য কিছু লোক বিশ্বাস করে যে পর্তুগিজরা এটি ভারতে প্রবর্তিত করেছিল। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা হল বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গুড় উৎপাদক।

READ MORE:  থ্যালাসেমিয়া থেকে সাবধান।

গুড়ের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

গুড় একটি দুর্দান্ত মিষ্টিকারক, যা প্রচুর স্বাস্থপকারিতাও যোগায়। আসুন দেখে নেওয়া যাক গুড়ের কিছু প্রমাণ ভিত্তিক স্বাস্থপকারিতা।

উচ্চ পরিমাণে খনিজ বস্তু

গুড় লোহা, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মত খনিজ বস্তুতে ঠাসা। অপুষ্ট লোকজনের মধ্যে গুড় হল সাদা চিনির একটি আদর্শ বিকল্প।

হিমোগ্লোবিন উন্নত করে

গুড় হল লোহার একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ উৎস এবং সেহেতু এটি একটি দুর্দান্ত খাদ্যাভ্যাসগত সম্পূরক যা হিমোগ্লোবিন উন্নত করে রক্তাল্পতা কবলিত ব্যক্তিদের হিমোগ্লোবিন বর্ধিত করে। মহিলা এবং কিশোরী মেয়েদের মধ্যে দৈনিক গুড়ের সেবন প্রস্তাবিত করা হয় রক্তাল্পতা রোধ করতে।

রক্তের শুদ্ধিকরণ

গুড়ের একটি বিষনাশক প্রভাব রয়েছে। এটি শরীরের বিষক্রিয়া দূর করে এবং যকৃৎ ও অগ্নাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে।

মস্তিষ্কের ক্রিয়া উন্নত করে

গুড়ে বেশ ভাল পরিমাণে ম্যাঙ্গানীজ পাওয়া যায়, যা মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত করার জন্য দায়ী। গুড় খেলে আপনার স্মৃতিশক্তি এবং চেতনা শক্তিশালী হয় এবং স্নায়বিক ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

আপনি যদি খানিকটা ওজন কমাতে চান, চিনির অত্যন্ত ভাল বিকল্প হতে পারে গুড়। চিনির বিপরীত ধর্মী হিসেবে, গুড়ে থাকা ক্যালোরি স্বাস্থ্যবর্ধক ভিটামিন এবং খনিজ বস্তু দিয়ে তৈরি এবং গুড় বিপাকীয় কার্যকলাপ উন্নত করে বলে দেখা গেছে, যার ফলে ওজন কমে।

মহিলাদের জন্য উপকারিতা

গুড় মহিলাদের মধ্যে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং মাসিকের সময় হওয়া সঙ্কুছন কমায়। লোহা এবং ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার দরুন এটি হাড়ের সংরক্ষণ করে এবং রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে।

মজাদার তথ্য-
গুড়কে প্রায়শই “সর্বোত্তম খাদ্য মিষ্টিকারক” হিসেবে উল্লিখিত হয়।