দৃষ্টিভঙ্গি – মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকী
ফাগুনের সকালে ঘুম থেকে উঠেই তোড়জোড় শুরু হলো-ঢাকায় যাওয়ার। বড় বোন রিয়া স্বামীর সাথে ঢাকা থাকে। এক সপ্তাহ হলো বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। আজ সে ঢাকায় ফিরবে, ইচ্ছা ছোট বোন দিয়াকে সাথে নিয়ে যাবে। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া শেষ, হঠাৎ করে দিয়া বলল, আমি যাব না। রিয়া বলল কেন যাবেনা কী হয়েছে?
দিয়া কেঁদে উঠলো,বললো আমার ভালো জামা মাত্র দুটি। আর যে গুলো আছে ,নোংরা হয়ে গেছে । আমি এমন জামা নিয়ে যাব না। রিয়া বলল দেখ তোমার তো দুটো ভালো জামা আছে, আর কিছু মানুষ এমন আছে, যাদের ভালো জামা তো দূরের কথা, পড়ার জামাও নেই। জামা থাকলেও তাও আবার ছেঁড়া। কিছু মানুষ তো ঠিকমত খেতেও পায়না । দিয়া বললো, এমন আবার হয় নাকি। একমাত্র আমারই ভালো কাপড় নেই। আমার বন্ধুদের সবারই তো কত্ত সুন্দর সুন্দর জামা ।তুমি আমাকে বোকা বানানোর জন্য মিথ্যা বলছো তাইনা। রিয়া বলল দূর পাগলি আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো কেন। আচ্ছা ঠিক আছে কাপড় নোংরা , এতেই সমস্যা আমি বাসায় গিয়ে তোমার সব জামা পরিষ্কার করে দিব।এবার চলো। অবশেষে দিয়া বলল ঠিক আছে চলো। তিন ঘণ্টা পর তারা ঢাকায় পৌঁছাল ।পৌঁছেই সব জামাকাপড় ধুয়ে দিল।পরের দিন সকালে রিয়া দিয়াকে বলল চলো , তোমাকে একটা জিনিস দেখাব। কী জিনিস আপু?
রিয়া বলল, আগে চলো তারপর সব জানতে পারবে। এই বলে তারা হাঁটতে লাগলো। অবশেষে তারা একটি ভাঙ্গা ঘরের সামনে পৌঁছালো।
রিয়া মারিয়া বলে ডাকল,ডাক শুনেই একটি চার বছরের বাচ্চা মেয়ে এলো। মেয়েটি অনেক রোগা,গায়ে তার ছেঁড়া জামা ।বললো কী হয়েছে খালামনি,তুমি বাড়ি থেকে কবে এলে।এসো,ঘরে এসো।না, ঘরে যাবো না।তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব, ভালোভাবে উত্তর দিও কেমন।আচ্ছা ঠিক আছে।তখন রিয়া মারিয়া কে বললো, তোমার বাবা মা কোথায়? মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল,আমার বাবা চোর,তাই পুলিশে নিয়ে গেছে।আর আমার মা আমাকে আর আমার বড় বোনকে ছেড়ে চলে গেছে। দিয়া বললো তাহলে তোমার বড় বোন কোথায়? মেয়েটি বলল লোকের বাসায় কাজ করতে গেছে, সন্ধ্যায় খাবার নিয়ে আসবে।দিয়া আবার জিজ্ঞেস করল তোমাদের দেখার মত আর কেউ নেই? মেয়েটি বলল না ,আমার দাদা- দাদি কেউ খোঁজ নেয় না ,আমরা একাই থাকি।তারপর রিয়া বলল আচ্ছা মারিয়া তোমার কয়টা নতুন জামা আছে, তোমার এই খালামনিকে একটু বলো। মেয়েটি বললো আমি চোরের মেয়ে ,ভালো জামা কোথায় পাবো। আমারতো একটাই জামা । আরেকটা জামা তুমি বানিয়ে দিবে বলেছিলে।আর কোনো জামা নেই ,সবসময় এটাই পরে থাকি।জামা খুলে গোসল করে আবার এই জামাটাই পড়ি। মেয়েটি বললো খালামনির তুমি এসব কথা কেন বলছো, তুমি তো সব জানো তাইনা। এমনিতেই বলছিলাম, বিকালে পড়তে এসো ,এবার আমি যাই। রাস্তায় রিয়া তার বোনকে বলল,দেখ দিয়া মানুষের ভালো থাকা,তার ভালো জামা কাপড়ের উপর নির্ভর করে না । নির্ভর করে তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর । তুমি যদি সবসময় সমাজের বিত্তবানদের কথা ভাবো , তাহলে তোমার মনে কষ্ট পাবে।মনে হবে ওদের থেকে তুমি গরীব।আর যদি তুমি সমাজের দরিদ্র-অসহায়দের কথা ভাবো তাহলে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে যাবে । নিজেকে অনেক সুখী মনে হবে।তাই সবসময় তোমার থেকে যারা একটু নিচু শ্রেণীর তাঁদের দিকে তাকাবে ।দেখবে কখনও নিজেকে ছোট মনে হবেনা।দিয়া কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,আমায় ক্ষমা করো,আমি আর কখনও এমন করব না।তারপর থেকে দিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল।সে সবসময় নিজেকে একজন সুখী মানুষ মনে করত।
লেখক,
মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকী