ক্রিকেটটাই নাকি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মুনিম শাহরিয়ার
এবারের বিপিএল এর বড় চমক মুনিম শাহরিয়ার। ধুমকেতুর মত আবির্ভাব এই তরুন মারকুটে ব্যাটসম্যান নাকি একসময় খেলাটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। নিজের ক্রিকেট ও জীবনের গল্পটা দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে তুলে ধরেছেন এই তরুন ক্রিকেটার। চলুন জেনে আসি তার মূল অংশ-
২৩ বছর বয়সী ক্রিকেটারের গল্পটাও ঝড়ের মতো। লেখাপড়ায় দারুণ ভালো। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের সেরা ছাত্রদের একজন ছিলেন। বর্তমানে এআইইউবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বিবিএ নিয়ে। ভালো ছাত্র, তাই ছোটবেলা থেকেই পরিবারের ইচ্ছা ছিল না ক্রিকেট খেলুক। তবে কে শোনে কার কথা! বাবার আদর আসকারায় ব্যাট হাতে তুলে নেন।
তবে পড়ালেখাটাও চালিয়ে গেছেন যথারীতি। বকা শুনেছেন, মানুষের সমালোচনাও হজম করেছেন। ঢাকা লীগে ব্যাট হাতে ১৪ ম্যাচে করেছেন ৩৫৫ রান। ছোটবেলা থেকেই তার চোখ লাল সবুজের জার্সির দিকে। অনেক সখের বলিদান দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেই দিকেই।
প্রশ্ন: ক্রিকেট শুরু করেন কবে?
মুনিম: আমি মূলত ক্রিকেট শুরু করি স্কুল লাইফ থেকে। ক্লাস সেভেন এইট থেকে। শুরু করেছি আমি ময়মনসিংহে, আমার স্কুল টিমের খেলা ছিল। এরপর আমি প্রিমিয়ার লীগ ক্রিকেট খেলি ২০১৭ সালে। সেবার গাজী গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এরপর কলাবাগানে খেলেছি, আর আবাহনীতে ব্যাক টু ব্যাক দুইবার খেললাম।
প্রশ্ন: আপনার জেলার তারকা ক্রিকেটার মাহমুুদুল্লাহ, মোসাদ্দেক সৈকত। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
মুনিম: মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাইকে পাইনি তবে সৈকত ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনুপ্রেরণা পেয়েছি উনার কাছ থেকে। আমার পরিবারে কেউ ক্রিকেটার নেই। আমি একাই।
প্রশ্ন: শুনেছি দারুণ ভালো ছাত্র ছিলেন, তাই ক্রিকেট খেলায় অনেক বাধা ছিল?
মুনিম: হ্যাঁ, আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে পড়েছি। আমার বাবা আমাকে যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছেন। অন্যরা হয়তো ক্রিকেটে নিরুৎসাহিত করতো। কিন্তু ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার নেশা ছিল। এমন হয়েছে খেলার জন্য আমি স্কুলের সময় অনুপস্থিত থাকতাম। আমার নামে নালিশ যেতো বাসায়। আমি স্কুল পালিয়ে অনুশীলন করতাম। বকাও খেয়েছি অনেক। তবে ক্রিকেটের সঙ্গে পড়ালেখাটা চালিয়ে গিয়েছি। এখন বিবিএ করছি এআইইউবিতে।
প্রশ্ন: আপনার শক্তির জায়গাটা কি?
মুনিম: বলের সামঞ্জস্য রেখে ইনিংস খেলতে পছন্দ করি। যারা আমাকে দেখছে তারা জানে আমি আগে থেকেই এভাবে ক্রিকেট খেলি। এখানে চেষ্টা করেছি গত দুই-তিন বছর। হচ্ছিল না সেভাবে, তবে আল্লাহর রহমতে এবার হয়েছে। আমি ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি ।
প্রশ্ন: বড় দলে খেলার চাপ কিভাবে সামলেছেন?
মুনিম: শুরুতে একটু চাপ ছিল। তখন সুজন স্যার, মোসাদ্দেক ভাই, মুশফিক ভাইসহ শান্ত, নাঈম যারা আছে তারা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। তারা বলেছে তুই তোর স্বাভাবিক খেলাটা খেল। আমিও স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে আপনার আইডল কে!
মুনিম: যেহেতু আমি ওপেনার ছোটবেলা থেকেই তামিম ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। লিটন দাস দাদার খেলাও ভালো লাগে, সৌম্য সরকার আছে সাকিব ভাই তো আছেই, মাশরাফি ভাই আছে। আসলে এদের খেলা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। আর বাইরের খেলোয়াড় বলতে সঞ্জু স্যামসন, শ্রেয়াস আইয়ার, রোহিত শর্মা, ভারতের খেলোয়াড়দের খেলা ভালো লাগে। অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ক্রিকেটারের খেলাই ভালো লাগে। বিগ হিটার এর মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে রোহিত শর্মাকে। ভারতের ভক্ত বলতে শচীনের খেলা দেখে বড় হয়েছি।
প্রশ্ন: ঢাকা লীগে কোন ইনিংসটা নিজের সেরা হিসেবে এগিয়ে রাখবেন?
মুনিম: অবশ্যই ৫০ বলে ৯২ রানে অপরাজিত ছিলাম প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে প্রথম পর্বে ওটাকে এগিয়ে রাখবো। এছাড়া নির্দিষ্ট করে বললে শরিফুলকে পয়েন্টের উপর দিয়ে একটা ছক্কা মেরেছিলাম। ওই ছক্কাটা মেরে খুব মজা পেয়েছি।
প্রশ্ন; শুনেছি ক্রিকেট খেলাটাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন?
মুনিম: যুব দলে খেলার পর প্রিমিয়ার লীগে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছিলাম না। আবার এরকম জায়গায় সুযোগও আসছিল না। তখন আমার মধ্যে দোটানা কাজ করতো। তবে এই বছরটা ভালো খেলার পর নিজের মাইন্ড পরিবর্তন করেছি। দেখি সামনে কী হয়। ক্রিকেটে সব কিছুতেই আপনাকে সঠিকভাবে মানিয়ে চলতে হবে। জিম, রানিং, অনুশীলন খাবার-দাবার সবকিছুতে একটা রুটিন মেনটেন করতে হয়। ছোটখাটো অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। যদিও প্রিয় কিছু খাবার বাদ দেয়া হয়নি এখনো সেভাবে। তবে চেষ্টা করছি। কোক, বিরিয়ানি এগুলো। বিরিয়ানি তো সবারই প্রিয়।
প্রশ্ন: কোন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন?
মুনিম: লক্ষ্য বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন জাতীয় দলে খেলবো। প্রতিদিন আমাকে উন্নতি করতে হবে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আর জাতীয় দল যদি কখনো সুযোগ আসে নির্বাচকরা যদি কখনো মনে করেন আমি উপযুক্ত তখন না হয় ভাববো।
প্রশ্ন: ‘বিগ হিটার’ কার মতো হতে চান?
মুনিম: কার মতো বলতে আমি নিজের মতোই হতে চাই। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। হিটার হতে চাই। এখন যেখানে আছি সেটাকে চেজ করতে চাই। প্রতিদিন নিজের উন্নতি করতে চাই।