জীবন অপেরা, লেখক – আলভী আহমেদ
ফেসবুকের স্ক্রল করার অভ্যাস একদিন হুট করে আলভী আহমেদ নামক একজন লেখক এর আইডিতে নিয়ে গেল আমায়। ফেসবুকে ভয়ঙ্কর রকমের ইন্যাক্টিভ লেখক দেখলাম মাঝে মাঝে ফেসবুকে আসেন পত্রিকায় ছাপা নিজের কোন একটা লেখার লিংক শেয়ার করতে। লিংক শেয়ার করেন। অতঃপর ডুব দেন। কোন একটা জায়গায় তার এই লিংক গুলোর মধ্যে কোনো একটি লিংক এর ভেতরের লেখার ভাললাগার একটি রিভিউ দেখেই মূলত তার আইডি তে আসা হয়েছিল আমার। তারপর লিঙ্ক গুলোতে ঢুকে একের পর এক সবগুলো লেখা পড়ে ফেলতে লাগলাম আর মুগ্ধ হতে লাগলাম। একটা করে লিঙ্ক এর ভেতরের ছোট গল্প পড়ে শেষ করি আর মুগ্ধতা নিয়ে আবার স্ক্রল করি পরের লেখার মুগ্ধতার আশায়। স্ক্রল করতে করতে একসময় একটা পোস্ট পেলাম এরকম- ‘জীবন অপেরা’ নামক লেখক এর প্রথম যে বইটা কয়েকদিন আগে বের হয়েছে তার রিভিউ সংক্রান্ত। মানে বইটা পড়ে কার কেমন লেগেছে এইসব। রিভিউ গুলোতে এমন সব মুগ্ধতার কথা বলা ছিল যে যেকাউকে রীতিমতো বাধ্য করবে বই কিনতে। আমাকেও বাধ্য করলো। বই কিনলাম। আর মুগ্ধ হলাম।
হুমায়ুনোত্তর যুগে হুমায়ূন আহমেদের প্রভাবমুক্ত ঝরঝরে একটা মৌলিক বাংলা গদ্য পাওয়া সত্যি ভাগ্যের বিষয়। আলভী আহমেদের ‘জীবন অপেরা’ এ সৌভাগ্য নিয়ে এলো আমার কাছে।
এর আগে প্রখ্যাত জাপানি কথা সাহিত্যিক হারুকি মুরাকামির কতক বই অনুবাদ করলেও মৌলিক হিসেবে এটাই লেখক এর প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস হিসেবে যে এ আখ্যান আপনাকে হতাশ করবে সে সুযোগ নেই । প্যারালাল ইউনিভার্স এর মত ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় নিয়ে দাঁড় করানো গল্পের প্লট আপনাকে সে সুযোগ দিবেই না।
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রফিক সম্ভবত যে জীবন সে যাপন করতে চেয়েছিল শারমিনের সাথে সে জীবনে মাত্র দুই দিনের জন্য ঢুকে পড়ে অথচ সে দিব্যি তার শারমিনকে না পাওয়ার জগতে বসবাস করছিল এতদিন। এ প্যারালাল দুই জগত- এ গল্পের টানাপোড়েনের সৃষ্টি করে এবং এ টানাপোড়েন পড়তে পাঠক একরকম আগ্রহীই হবেন লেখক এর সহজ-সরল নিজস্ব ভাষায় গল্প বলার ধরনের কারণেই।
তবে গল্পের এখানে সেখানে কিছু সায়েন্সের বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন লেখক। সাধারণ মাথা দিয়ে সাধারন জ্ঞান নিয়ে চিন্তা করলেই যে কারো এ সাইন্স গুলো ধরতে পারা কোন কঠিন বিষয় হওয়ার কথা নয়। অবশ্য এসব ছোটখাটো সায়েন্স না বুঝলেও গল্প বুঝতে কোন সমস্যা হবেও না।
কোন কারনে এই বই যদি বিখ্যাত না হয়ে যায় তাহলে যারা সহজ সরল ভাষার দুর্দান্ত সব বাংলা গদ্য খুঁজে বেড়ায় তাদের জন্য অবশ্যই একটি আফসোসের জায়গা হয়ে থাকবে। অথচ দুঃখের বিষয় এ আফসোসের সন্ধান ও তারা কোনদিন খুঁজেও পাবেনা।