স্বাস্থ্য

কিডনিতে পাথর হলে লক্ষণ, করণীয় এবং চিকিৎসা

দেহের  অতি পরিচিত সমস্যা গুলোর একটি হচ্ছে কিডনিতে পাথর। কিডনিতে পাথর যে শুধুমাত্র কিডনির ভেতরে হয়ে থাকে এমনটি নয়। এটি কিডনির বাইরে এবং অন্যান্য অংশেও হয়ে থাকে। পাথর গুলো কিডনি থেকে বের হয়ে বৃক্ক নালিতেও অবস্থান করতে পারে। এছাড়া মূত্রথলি এবং মূত্রনালীতেও পাথর থাকতে পারে। আজ বিস্তারিত জানবো, কিডনিতে পাথর কেন হয়, এর লক্ষণ, করণীয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে।

 

 

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ

 

নানাবিধ কারনে কিডনিতে পাথর হতে পারে। সেটি যেমন বংশগত কারণ এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন এর প্রভাবেও হতে পারে। বিশেষ করে যারা পানি কম খেয়ে থাকেন তাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী মানুষগুলো প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে ঘামে থাকেন এবং সেই অনুপাতে পানি পান না করাতে কিডনিতে পাথর  রোগে বেশি ভুগে থাকেন। এছাড়া যারা কিডনির ইনফেকশন এবং প্রচুর ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও কিছু রোগ যেমন প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত হরমোন ক্ষরণের জন্য  কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে। এছাড়াও পাথর যে কোন সাধারণ দেহ হতে পারে এটির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন  জৈবিক দেহে পাথর নিরোধক পদার্থের ক্ষরণ কম হলে যে কোন সাধারণ দেহে পাথর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ 

 

পাথরের আকৃতি এবং  অবস্থানভেদে এর নানাবিধ লক্ষণ প্রত্যক্ষ করা যায়। কিডনিতে পাথর থাকলে সাধারণত নাভির উপরের দিকে এবং কোমরের দুই পাশে ব্যথা অনুভব হয়। এছাড়া যদি পাথর এর অবস্থান বৃক্কে হয়ে থাকে তাহলে সামনের দিক থেকে কুঁচকি হয়ে জননেন্দ্রিয় পর্যন্ত ব্যথা অনুভব হতে পারে। এরূপ অবস্থানের জন্য অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রস্রাব মিশ্রিত রক্ত আসছে অথবা শুধু রক্ত  আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ছোট পাথরগুলো  বৃক্কীয় নালিতে আটকে যায়  এবং প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। সেই স্থানে ঘা এর সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা অনুভব হয় এবং কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।

READ MORE:  পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী করতে করণীয়গুলো

 

 

কিডনিতে পাথর হলে করণীয় ( চিকিৎসা )

 

কিডনিতে পাথরের আকার যদি ৬ মিলিমিটারের ছোট হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। পাথর এমনি প্রস্রাবের সাথে বাইরে বেরিয়ে আসে। সেক্ষেত্রে কোন প্রকার ওষুধ খেতে হয় না। শুধুমাত্র নিয়মিত জগিং এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হয়।

পাথরের যদি সামান্য বড় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে স্টোন ক্রাশার এর মাধ্যমে খুব সহজেই পাথরকে বাইরে বের করে আনা যায়। এক্ষেত্রে পেটকাটার কোন প্রয়োজন হয় না। রোগী এক্ষেত্রে শুয়ে থাকবেন এবং তার পাশে শক ওয়েব তৈরি করার যন্ত্র থাকবে। ওয়েবটি পানির মাধ্যমে দেহের ভেতরে ঢুকে কিডনিতে আঘাত করবে। ফলে পাথর সহজেই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে পাথর নালিতে আটকে যায়। সে ক্ষেত্রে যেটি করা হয়ে থাকে তা হল, একটি নালি প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে মূত্রথলিতে প্রবেশ করানো হয় এবং পরবর্তীতে সেটি  মূত্রথলি থেকে প্রবেশ করানো হয় বৃক্ক নালিতে। এবং সেখানে ভাইব্রেশন সৃষ্টি করা হয়। এবং  গুড়ো হয়ে যাওয়া পাথরগুলো টিউবের মাধ্যমে খুব সহজে বাইরে বের করে আনা হয়। এভাবে বেশিরভাগ  ক্ষেত্রেই কোন প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই সহজেই কিডনি থেকে পাথর অপসারণ করা হয়ে থাকে। আর যদি অপারেশন একান্তই প্রয়োজন হয়ে থাকে, তবে লেপারোস্কোপি করে পেটে তিনটি ছিদ্র করে কিডনির পাথর বাইরে বের করে আনা হয়।

 

 

কিডনিতে পাথর অপারেশন খরচ

 

দেশে স্টোন ক্রাশার করতে হাসপাতাল ভেদে ১৫ হাজার টাকার মতো লেগে থাকে। তবে আপনি যদি লেপারোস্কোপিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিতে চান সেক্ষেত্রে সেটি কিছুটা ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে বড় হসপিটাল ও সেন্টার গুলোতে এক লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে। আগে অনেকেই দেশের বাইরে গিয়ে কিডনিতে পাথর অপসারণের চিকিৎসা নিয়ে থাকতো। তবে  বর্তমানে বাংলাদেশের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ উন্নত হয়েছে। তাই কিডনির পাথরের ক্ষেত্রে বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

READ MORE:  কাঁধের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায়

One thought on “কিডনিতে পাথর হলে লক্ষণ, করণীয় এবং চিকিৎসা

  • দুলাল আহমদ

    লিথোক্লাস্ট এর সাহায্যে ইউরেটিক স্টোন (মূত্রাশয়ে হওয়া পাথর) : খরচ কতো। পাথরের আকার ১০ মিমি

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *