বজ্রপাতের সময় ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংযোগ বন্ধ করা কি যুক্তিসঙ্গত?
যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম বৃষ্টির দিন যখন প্রচন্ড বজ্রপাত হতো তখন আব্বু ঘরের সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দিত। টিভি, ফ্রিজ সবকিছুর লাইন খুলে দিত। অবাক হয়ে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলে আব্বু বলত আকাশের বজ্রপাতের সময় যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা নাকি ঘরের মধ্যে এসে ঘরের সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট করে দিবে। কিন্তু এই ব্যাপারটি কি সত্যি? চলুন জেনে আসার চেষ্টা করি।
আমাদের দেশে বর্ষাকালে প্রকৃতি অপরূপ রূপ ধারণ করে। বিমোহিত হয়ে যাওয়ার মতো এক রূপের দেখা পাই আমরা বর্ষাকালে। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো ঝড়ো হাওয়া আমাদের মনকে আন্দোলিত করে। আমরা যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যাই। কিন্তু সেই সাথে মাঝে মাঝে বজ্রপাতের প্রচন্ড শব্দে আমরা কেঁপে উঠি। বজ্রপাতের সময় মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে প্রচুর ভোল্টের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। জানলে অবাক হবেন একটি ছোটোখাটো বজ্রপাতের ফলে উৎপাদিত এই বিদ্যুতের পরিমাণ পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার ভোল্ট। আমাদের বাসা বাড়িতে যেসব যন্ত্রপাতি আমরা ব্যবহার করি সে সব চলতে দরকার হয় ২২০ ভোল্টের বিদ্যুৎ। অন্যদিকে বজ্রপাতের ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার ভোল্ট। এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ যদি বৈদ্যুতিক খুটির সাহায্যে পরিবাহিত হয়ে আমাদের ঘরে থাকা নানা রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ভেতর দিয়ে পরিবহন হওয়া শুরু করে তবে অবশ্যই আমাদের ঘরের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হবে। শুধু নষ্ট হওয়া নয়, নানারকম মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ছোটোবেলা যে দেখতাম আব্বু বজ্রপাতের সময় টিভি ফ্রিজের তার খুলে দিতো তা ঠিকই করত। বজ্রপাতের সময় ঘরের যাবতীয় বৈদ্যুতিক সংযোগ আমাদের উচিত বন্ধ করে রাখা। কিন্তু হ্যা, মোবাইল ফোন বন্ধ না করলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ মোবাইলের সাথে কোনো বৈদ্যুতিক তার সরাসরি সংযোগ থাকে না। তবে বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে রাখা যাবে না। এতে করে মোবাইল ফোন বজ্রপাতের সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে বজ্রপাত অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রায়ই বজ্রপাতে অনেক মানুষ নিহত হচ্ছে। তাই বজ্রপাতের সময় আমাদের খোলা মাঠ, বড় গাছের নিচে, বৈদ্যুতিক খাম্বা এর নিচে, বাসার জানালার কাছে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।