স্বাস্থ্য

ঘরোয়া উপায়ে হাই প্রেসার থেকে মুক্তির পদ্ধতি

হাই প্রেসার কি

 প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ যে কারও শরীরে রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। এই চাপ ১৪০/৯০ এর চেয়ে বেশি হলে সেটি হাই প্রেসার হিসেবে ধরা যাবে।

হাইপারটেনশন বা হাই প্রেসার, যাকে উচ্চ রক্তচাপও বলা হয়। এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি তখনই ঘটে যখন রক্তের অত্যধিক চাপ পড়ে ধমনীতে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। 

 

হাই প্রেসার এর লক্ষণ

 

*নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।

 

* মাথায় তীব্র ব্যথা।

 

* প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।

 

* মাথা ঘোরানো।

 

* বুকে ব্যথা।

 

* চোখে ঝাপসা দেখা।

 

* অনিদ্রা।

 

* অল্পতেই অস্থিরতাভাব ও রেগে যাওয়া।

 

* বমি বমি ভাব।

 

* মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া।

 

হাই প্রেসার কেন হয়?

 

* পরিবারে হাই প্রেসারে আক্রান্তের ইতিহাস থাকলে।

 

* অতিরিক্ত ওজনের কারণে।

 

* শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপের কারণে।

 

* দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যার কারণে।

 

* বেশি লবণ খেলে।

 

* ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে।

 

* কায়িক পরিশ্রম না করলে।

 

হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অন্যান্য অসুখ থেকে দূরে থাকাও সহজ হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায়-

 

হাঁটতে বের হোন: 

 

এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা হার্টের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে, যার ফলে এটি আরো কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে, বলেন জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সেথ মার্টিন। তিনি জানান, ‘হাঁটলে ধমনী শিথিল হতে পারে। এর ফলে রক্ত পাম্পিংয়ে হার্টকে জোরদবস্তি করতে হয় না বলে রক্তচাপ কমে।’ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট এমন শরীরচর্চা করতে পরামর্শ দিয়েছে যা হার্টের পাম্পিং কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চিন্তা করবেন না, এর জন্য শরীর থেকে ঘাম ঝরাতেই হবে এমনকোনো কথা নেই। আপনি হাঁটার মতো সহজ শরীরচর্চাতেও রক্তচাপ কমাতে পারবেন। হাইপারটেনশন নামক জার্নালে ২০১৯ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, সকালে ৩০ মিনিট হাঁটলে এটা দিনের বাকি সময়ে রক্তচাপ কমাতে ওষুধের মতোই কাজ করতে পারে।

 

* পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: 

 

প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে এমন খাবার খেলেও রক্তচাপ কমতে পারে। এর কারণ হলো, পটাশিয়াম লবণের প্রভাব কমায়। আপনি যত বেশি পটাশিয়াম খাবেন, প্রস্রাবের মাধ্যমে তত বেশি লবণ বেরিয়ে যাবে। পটাশিয়াম রক্তনালীর প্রাচীরকে টানটান প্রসারণ থেকেও মুক্ত করতে পারে। এটাও রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। তাই হাইপারটেনশনে ভুগলে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন- বিনস, পালংশাক, কিসমিস ও কলা।

 

* ব্যালেন্সড ডায়েট অনুসরণ করুন: 

 

প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ কমাতে চাইলে খাদ্যতালিকায় ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, অর্থাৎ ব্যালেন্সড ডায়েটের ওপর থাকতে হবে। সবসময় কেবল একজাতীয় খাবার খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ যেমন অসম্ভব হতে পারে, তেমনি শরীর পুষ্টিহীনতায়ও ভুগতে পারে। তাই খাদ্যতালিকাকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার চেষ্টা করতে হবে। আপনার খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, চামড়াবিহীন মুরগির মাংস, মসুর ডালের মতো লেগিউম ও নন-ট্রপিক্যাল ভেজিটেবল অয়েল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এই ডায়েট অনুসরণে দু’সপ্তাহের মধ্যে উপকার পেতে শুরু করবেন, এমনটাই অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

 

* লবণের ব্যবহার কমান: 

 

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে এটা সম্ভবত অজানা নয় যে, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ লবণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৯ সালে নিউট্রিয়েন্টসে প্রকাশিত গবেষণা মতে- খাবারে লবণের পরিমাণ কমালে কেবল রক্তচাপ কমে না, হার্ট ও রক্তনালী সংশ্লিষ্ট রোগের ঝুঁকিও কমে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের প্রতিদিন মাত্র ৫০০ মিলিগ্রাম লবণ দরকার হয়। ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকানস দৈনিক ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খেতে নিষেধ করেছে, যা প্রায় এক চা চামচের সমান।

 

* খাদ্যতালিকায় তিসি বীজ রাখুন: 

 

২০১৫ সালে দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা রিভিউ বলছে, তিসি বীজ খেলে রক্তচাপ কমতে পারে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিসি বীজ খাওয়াতে বড় ধরনের উপকার পেয়েছেন, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য হারে রক্তচাপ কমেছে। আপনার সকালের নাশতা ওটমিল বা ইয়োগার্টের ওপর তিসি বীজ ছিটিয়ে খেতে পারেন। দিনের অন্যসময়ে স্যূপ বা সালাদের সঙ্গে তিসি বীজ খেতে পারেন।

 

* খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন- 

 

আপনার খাদ্যতালিকায় আদা রাখুন। আদা একটি সুপারফুড। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।

এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও পেশি শিথিল করে। আপনার চা, স্যুপ, তরকারিসহ বিভিন্ন পানীয়তে আদা যোগ করতে পারেন।

 

*ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিন- 

 

এই দুই অভ্যাসের কোনোটাই উপকারী নয়, বরং অনেকগুলো ক্ষতির কারণ। প্রতিবার ধূমপানের সময় কয়েক মিনিটের জন্য অস্থায়ীভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায়। যে কারণে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে অতিরিক্ত মদ্যপানও উচ্চ রক্তচাপসহ আরও অনেক সমস্যা ডেকে আনে। তাই এই দুই বদ অভ্যাস থাকলে তা আজই বাদ দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link