থ্যালাসেমিয়া থেকে সাবধান।

থ্যালাসেমিয়া

 

আপনি কি জানেন থ্যালাসেমিয়া কতটা ভয়ানক রোগ? শুধু এ রোগের ভুক্তভোগীরাই জানেন থ্যালাসেমিয়া এর ভয়াবহতা সম্পর্কে। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে এমন একটি রোগ, যেটি উত্তরাধিকারসূত্রে হয়ে থাকে। আর এ রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে রক্তের ব্যাধি হয়ে থাকে, যা শরীরের হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

 

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম থাকে এবং লোহিত রক্তকণিকা আকারে খুব ছোট হতে পারে। আর এ রোগটি হলে তার প্রভাব হালকা থেকে শুরু করে অনেক গুরুতর ও প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে।

 

থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণসমূহঃ

 

পারিবারিক ইতিহাসঃ ম্যালেটেড হিমোগ্লোবিন জিনের মাধ্যমে এই রোগ পিতামাতার কাছ থেকে বাচ্চাদের মধ্যে চলে যায়।

 

বংশীয় কারনঃ কোন কোন সময় বাবা মা ছাড়াও পূর্ব পুরুষ বা বংশীয় কারনেএই রোগ হতে পারে। উদাহরণসরুপ- প্রায়ই দেখা যায় আফ্রিকান আমেরিকানদের এবং ভূমধ্যসাগরীয় এবং দক্ষিণ -পূর্ব এশীয় মানুষদের মাঝে বংশীয় কারনে এই রোগ বেশি দেখা যায় মধ্যে।

 

থ্যালাসেমিয়ার এর প্রকার

 

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত ২ ধরনের। যথা- আলফা এবং বিটা থ্যালাসেমিয়া। ১৬ নম্বর ক্রোমোসমে উপস্থিত ত্রুটিপূর্ণ আলফা গ্লোবিন চেইন উৎপাদনকারী জীনের ত্রুটির দরুণ আলফা থ্যালাসেমিয়া এবং ১১ নম্বর ক্রোমোসমে উপস্থিত ত্রুটিপূর্ণ বিটা গ্লোবিন চেইন উৎপাদনকারী জীনের ত্রুটির দরুণ বিটা থ্যালাসেমিয়া হয়। আলফা থ্যালাসেমিয়া আবার আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর (হাইড্রপস ফিটালিস) ও আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (হিমোগ্লোবিন-এইচ ডিজিজ/আলফা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট) এ ২ রকম হতে পারে। যেখানে প্রথমটি অনেক মারাত্মক। বিটা থ্যালাসেমিয়া অনুরূপভাবে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর (কুলি’স এনিমিয়া) ও বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (ট্রেইট) ২ রকম হতে পারে। এক্ষেত্রেও প্রথমটিই মারাত্মক বেশি। থ্যালাসেমিয়া বিভিন্ন হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির সাথে একইসাথে সহাবস্থান করতে পারে। এদের মধ্যে আমাদের দেশে প্রধানত হিমোগ্লোবিন-ই বিটা থ্যালাসেমিয়া পাওয়া যায়। সামগ্রিকভাবে বিটা থ্যালাসেমিয়া, আলফা থ্যালাসেমিয়া অপেক্ষা বেশি তীব্র ও মারাত্মক। 

READ MORE:  যে ৪টি ভুলে নষ্ট হচ্ছে আপনার কিডনি

 

 থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ

 

বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে জন্মের ২-৩ বছরের মাঝে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমে অবসাদ অনুভব, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অস্বস্তি প্রভৃতি পরিলক্ষিত হয়। ধীরে ধীরে প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, শরীরে অতিরিক্ত লৌহ জমা হওয়া, সংক্রমণ, অস্বাভাবিক অস্থি, জন্ডিস, গাঢ় রঙের প্রস্রাব, মুখের হাড়ের বিকৃতি, ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি, হৃৎপিণ্ডে সমস্যা ইত্যাদি প্রকাশ পায়।

 

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা:

 

 থ্যালাসেমিয়া মাইনরে (ট্রেইট) সাধারণত কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে থ্যালাসেমিয়া মেজরে নিয়মিত রক্তসঞ্চালন হলো প্রধান চিকিৎসা। তবে বারবার রক্তসঞ্চালনের একটি প্রধান অসুবিধা হলো যকৃতসহ বিবিধ অঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া। এ ধরনের জটিলতা প্রতিহতকরণে আয়রন চিলেশন থেরাপি এবং খাদ্যগ্রহণের পর চা পানের অভ্যাসকে উৎসাহিত করা হয়। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী আধুনিক চিকিৎসা কিন্তু ব্যয়সাপেক্ষ। অনেকসময় প্লীহা বেশি বড় হয়ে গেলে সার্জারির মাধ্যমে প্লীহা অপসারণেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।

 

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ:

 

 থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোকল্পে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষার বিষয়টি উৎসাহিত ও বাহকদের মধ্যে বিবাহ নিরুৎসাহিত করতে হবে। সিবিসি ও হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিসের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা যায়। গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি-না জানার জন্য ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং, অ্যামনিওসেনটেসিস, কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিং প্রভৃতি পরীক্ষা করা যায়। তবে এসব পরীক্ষা গর্ভাবস্থার ১৬-১৮ সপ্তাহে করানো উচিত। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ৮ মে ‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ পালন করা হয়। আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতাই পারে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করতে।