মেয়েরা কেন বেশি জাহান্নামে যাবে?

মেয়েরা কেন বেশি জাহান্নামে যাবে

 মুসলিম শরিফের হাদিসে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছে, হে নারীরা! তোমরা দান-সদকা করো। বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিকহারে দেখেছি। এ কথা শোনার পর উপস্থিত নারীদের মধ্যে থেকে একজন নারী, যার নাম ছিল জাজলা। সে প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের এই অবস্থা কেন? কেন জাহান্নামে আমরা বেশি সংখ্যায় যাবো? রাসূলুলাহ (সা.) বললেন, কারণ তোমরা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ ও বেশি বেশি অভিশাপ দাও।

বলতে খারাপ শোনা গেলেও, আসলে আজ আমাদের সমাজে নারীদের বাস্তব চিত্র অনেকটা এরকমই। যা রাসূল (সা.) বলে গিয়েছেন চৌদ্দশত বছর পূর্বে।

দাম্পত্য জীবনে এমন অনেক নারীকে দেখা যায়, যারা স্বামীর সামান্য একটু ভুল হলেই বিগত জীবনে স্বামীর সঙ্গে যে সুখের সংসার করেছে, ভালোবাসায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছে তা বেমালুম হয়ে যায়। তার অবদানকে মুহূর্তে অস্বীকার করে স্বার্মীকে অকৃতজ্ঞের সঙ্গে বলে, তুমি আমার জন্য কি করেছো? তোমার ঘরে আসার পর আমি কিছুই পেলাম না। তুমি আমার জীবনটা বরবাদ করে দিয়েছে ইত্যাদি।

নারীরা সামান্য কারণেই আবেগী হয়ে যায়। তখন তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, এজন্য রাসূল (সা.) নারীদের সঙ্গে সর্বদা সৎ আচরণের কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে উত্তেজনা পরিহার করে নম্র ভাষায় কথা বলতে বলেছেন। একইভাবে নারীদেরকেও বলেছেন, স্বার্মীর প্রতি অনুগত হওয়ার জন্য। নারীদের ছোট করা বা তাদের অবমূল্যায়ন তার উদ্দেশ্য নয়। বরং মা-বোনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো জন্য তিনি এসব বলেছেন।

চলুন তবে জেনে নেয়া যাক নারীরা যে কারণগুলোর কারণে জাহান্নামে যাবে সে সম্পর্কে-

(১) নারীদের মধ্যে ফজরের নামাজ কাজা করাটা খুব বেশি দেখা যায়। এমনকি অনেক দ্বীনদার নামাজি নারীরাও ফজরের নামাজ কাযা করে ফেলে।

(২) বেশিরভাগ নারীই জাকাত দেয়ার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। খবর নিয়ে দেখা যায়, একজনের আলমারি ভর্তি স্বর্ণ এবং রূপার গয়না আর জাকাত দিতে বললে তারা বলে আমার কাছে নগদ টাকা নেই। হে বোন! জেনে রাখুন এই শখের গয়না আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। এটি আপনার জাহান্নামে যাওয়ায় কারণ হতে পারে। তাই প্রয়োজনে গয়না বিক্রি করে হলেও জাকাত দিয়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

(৩) যেসব নারীর ওপর জাকাত ফরজ হয়, তাদের জন্য কোরবানি করাও ওয়াজিব হয়। কিন্তু আমরা একশতর মধ্যে একজনকেও খুঁজে পাই না। যারা নিজের কাছে সম্পদ থাকা সত্বেও নিজের টাকা-পয়সা খরচ করে পশু কিনে কোরবানি করেন। অধিকাংশ নারীরা স্বামীর ওপর নির্ভর করে থাকে। নিজের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তা জেনেও তারা এসব ব্যাপারে খবর রাখে না। 

(৪) অনেক নারীর আরেকটি মারাত্মক ভুল হলো যে, গোসল ফরজ হওয়ার পরেও তারা নাপাক অবস্থায় চলাফেরা করে। নানান কারণে গোসল করতে দেরি করে। এমনটি একেবারে করা উচিত নয়। পাক পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। 

(৫) অনেক নারীরা নেইলপলিশ লাগিয়ে থাকেন, অথচ নেইলপলিশ লাগানোর ফলে ওজু হয় না। এ নেলপলিশ তুলতেও সময় লাগে। তাই অনেকে এই নেলপলিশের কারনে নামাজ ছেড়ে দেয়। আবার অনেকে নেইলপলিশ না তুলেই ওজু করে নামাজ আদায় করে। উভয়ই ক্ষতিকর। ফলে সে মূলত ওজু ছাড়া নামাজ পড়ল। কারণ যতক্ষণ নেইলপলিশ না উঠাবে, ততক্ষণ ওজু হবে না। আর ওজু না হলে নামাজ হবে না।

(৬) অধিকাংশ নারী পর্দা করার ব্যাপারে উদাসীন যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। কোনা বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে তা ভালোভাবে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। বিশেষ করে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে ৯৫ ভাগ মুসলমানদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বেপর্দাগিরি আরো বেড়ে যায়।

(৭) দুইজন নারী যখন মিলিত হন তখন তাদের আলোনার বিষয়বস্তু হয় তৃতীয়জনের গীবত করা। আর অধিকাংশ নারীদের স্বভাবই এমন যে, তারা কয়েকজন একত্র হলে কথা না বলে থাকতে পারে না। আর কথার বিষয়বস্তু হয়ে থাকে গীবত অর্থাৎ পরনিন্দা করা। আর গীবত করতে করতে অনেক নারী জাহান্নামের দরজায় পৌঁছে যায়। এক বাদশাহর ঘটনা, তিনি ঘোষণা দিলেন যদি কেউ চমৎকার করে মিথ্যা বলতে পারে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে। যে যত মনের মাধুরী মিশিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারবে তাকে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দেয়া হবে। তখন সবাই মনের মাধুরী মিশিয়ে মিথ্যা গল্প বলতে আরম্ভ করল। অবশেষে একজন বলল আমি এক জায়গায় অনেক নারীকে বসে থাকতে দেখলাম কিন্তু সেখানে সবাই চুপচাপ তারা কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছে না। তখন বাদশাহ উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলেন এবং বললেন, যত মিথ্যা গল্প বলা হয়েছে তার মধ্যে এই গল্পটি সর্বশ্রেষ্ঠ। কেননা নারীরা চুপচাপ এক জায়গায় কখনই বসে থাকে না। তারা অবশ্যই একে অপরের বিরুদ্ধে, স্বামীর বিরুদ্ধে, ননদের বিরুদ্ধে, শাশুড়ির বিরুদ্ধে অথবা নিজের পূত্রবধূর বিরুদ্ধে গীবত করে শিকায়াত করতেই থাকে। আল্লাহ আমাদের মা-বোনদের গীবতের শিকায়াত থেকে রক্ষা করুন । তার পরিবর্তে ধৈর্যধারণ করুন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দেবে।

(৮) অধিকাংশ নারীরা খুবই কৃপণ হয়ে থাকে। দান-সদকা করতে খুবই কৃপণতা করে থাকে। যদি নারীরা বেশি বেশি সদকা করে তাহলে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেবেন। কোনো নারী যদি ভুলক্রমে কোনো অন্যায় করে ফেলে তাহলে ভুল স্বীকার করতেও লজ্জা পায়, দেরি করে। অথচ দুনিয়ায় ক্ষমা চাওয়াটা খুব সহজ। কিন্তু কেয়ামতের দিন এর জবাব দেয়াটা খুব কষ্টকর।

(৯) এছাড়া নারী রাগের মাথায় অনেক কুফুরি কালাম উচ্চারণ করে। এমন কথা বলে দেয় যার ফলে মানুষ ঈমানহারা হয়ে যায়। কুফুরি কালামের মধ্যে সবচেয়ে বড় কুফুরি হলো স্বামীর বিরুদ্ধে নারীর মিথ্যা অভিযোগ। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা আরম্ভ করে তারা। যেমন- বলে, আল্লাহ আমার দোয়া শুনেন না। এখন আর আল্লাহর কাছে দোয়াও করি না। একদিন একজন বৃদ্ধ নারীর কাছ থেকে জানা গেল, সে নামাজ পড়ে না। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো সে কেন নামাজ পড়ে না? সেই বৃদ্ধা বললেন, কি করব? আল্লাহ তায়ালা আমাকে সবসময় রোগ-ব্যাধি দেয়। আমাকে খারাপ রাখে। তাই রাগ করে আমি নামাজ পড়ি না।

(১০) নারী সমাজের আরেকটি বড় ভুল হলো তাদের কখনও যদি বলা হয়, এটি অন্য ধর্মাবলম্বীর সংস্কৃতি তখন তারা সেটি বেশি করে পালন করে। কিন্তু যদি বলা হয়, এটি নবী করিম (সা.) এর সুন্নত তখন তারা সে দিকে ফিরেও তাকায় না। 

(১১) নারীদের আরো একটি বিষয় হলো অবহেলা। তা হলো, প্রয়োজনে তারা স্বামীর কাছ থেকে টাকা নেয়। কিন্তু তার স্বামী কোথা থেকে টাকা আনছে, সেদিকে খবরদারি রাখে না। স্বামী কী চুরি করে আনছে নাকি ঘুষের টাকা আনছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ এটাও জাহান্নামে যাওয়ার একটি কারণ। 

(১২) আল্লাহ তায়ালা কোনো নারীকে যদি ভালো ঘরে জন্ম দেন ও পিতা যদি ধনী হন এবং তার চেহারা সুন্দর হয়, তখন সে এতটাই বেপরোয়া ও অহংকারী হয়ে উঠে যে, তার সামনে অন্য কোনো নারীর সুনাম করলে সে বরদাস করতে পারে না। আর অহংকার একজন নারীকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়ার জন্যই যথেষ্ট। মাটির মানুষ মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আমি তোদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি আর এই মাটিতেই ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। অতঃপর এই মাটি থেকে তুলে আনবো। তাই এ সৌন্দর্যের অহংকার কোনো কাজে আসবে না।

(১৩) অধিকাংশ নারী কুধারনার রোগী হয়ে থাকেন। আর সামান্য সন্দেহ থেকে কুধারনা, আর সে কুধারনা থেকে মিথ্যা অপবাদের মতো কবিরা গুনাহের লিপ্ত হয়ে যান। যা জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো একটি কারণ।

(১৪) আজকাল যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা হলো কোনো কারণে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হলে স্বামীকে এমনভাবে রাগান্বিত করে স্বামীকে এমন এমন কথা বলে যাতে স্বামীও প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে এমন বাক্য বলে দেয় যাতে তালাক হয়ে যায়। আর তালাক হয়ে যাওয়ার পরেও সে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে থাকে। যা ইসলামে অত্যন্ত মারাত্মক হারাম কাজ। আল্লাহ আমাদের বদমেজাজের হাত থেকে রক্ষা করুন। 

(১৫) তাছাড়া অধিকাংশ নারীর নেক আমলই দেখা যায় শুধুমাত্র লোক দেখানো। কোনো পুত্রবধূ আমল করে শাশুড়ির ভয় কিংবা লোকে কী বলবে এ ভয়ে আমল করে। যেখানে আল্লাহর ভয় থাকে না। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত থাকে না। আর যার ফলে তার আমলের খাতা শুন্য হয়ে যায়। 

নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, নিরানব্বই জন নারীর মধ্যে একজন নারী শুধু জান্নাতে যাবে আর বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে। এ হাদিসের আলোকে যা আলোনা করা হলো তা নারীদের জন্য খুবই জরুরি। আশা করি সব নারী উক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। আল্লাহ আমাদের সৎ পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *