কী এবং কেন?

এলিয়েন সম্পর্কে পৃথিবীবাসী যা জানে

এলিয়েন সম্পর্কে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। আমরা সবসময়ই এলিয়েন সম্পর্কে জানতে চাইতাম। আজ আমরা এলিয়েন সম্পর্কিত সকল তথ্যের সারমর্ম জানার চেষ্টা করব।

এলিয়েন নিয়ে মানুষের চিন্তা ভাবনা আজ থেকে নয়। এর উৎপত্তি বহুকাল আগে থেকে। সম্ভবত মানুষ প্রথম যেদিন আকাশের দিকে তাকিয়েছে সেদিন থেকেই।

আজ ২০২১ সালে এসে আমরা বিজ্ঞানে অনেক এগিয়েছি। কিন্তু এখনো এলেয়েন বিষয়টা মোটামুটি ধোঁয়াশা। আমরা অনেকবার এলেয়েনের ব্যাপারে অনেক কাছাকাছি পর্যন্ত গিয়েও ব্যাপারটা এখনো অধরা।

এ পর্যন্ত আমরা এলিয়েন সম্পর্কে যা জানলাম তাই আজ আপনাদের জানাবো। তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেলটি।

শুক্রের মেঘে এলিয়েন থাকতে পারে

বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই ধারনা করছিলেন যে শুক্রর মেঘে জীবনের বীজ থাকতে পারে।

একারনেই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুক্র আমাদের প্রিয় গ্রহে পরিনিত হয়েছিল। কারন এই সময় বিজ্ঞানীরা শুক্রের বায়ুমণ্ডলে ফসফিন (ph3) অনু আবিষ্কার করেন।

ফসফিন হলো ১ অনু ফসফরাস ও ৩ হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি। পৃথিবীর কিছু অণুজীব ফসফিনের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। এরা অক্সিজেন এর বদলে ফসফিন দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে।

এই অনুগুলি প্রাকৃতিক ভাবেই উৎপন্ন হয়। তবে শুক্রর উত্তপ্ত পরিবেশে এটি স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হওয়ার কথা না। গবেষকরা তাই শেষ পর্যন্ত বলেছেন যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলে এলিয়েন থাকতে পারে।

তবে ফসফিন মানেই জীবন নাও হতে পারে

ফসফিন আবিষ্কারের ব্যাপারটা যেমন সম্ভাবনাময় তেমনি সংশয়পূর্ণ। কারন শুক্রে ফসফিনের আবিষ্কারটা ওতটা স্পষ্ট নয়।

চিলির আটাকামা টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষক বিজ্ঞানী জন কার্পেন্টার বলেন যে-

“তাদের শুক্রের ফসফিন পর্যবেক্ষণে ভূল হতে পারে। এগুলো অন্য কিছুও হতে পারে।”

 

আবার তাদের পর্যবেক্ষণ ঠিক হলেও সংশয় থেকেই যায়। কারণ অনেকগুলো ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফসফিন খুব সহজেই এলোমেলোভাবে তৈরি হতে পারে। যার সাথে জীবনের বীজ সম্পৃক্ত নাও থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাসায়নিকবিদ লি ক্রনিন বলেন যে-

ফসফিন সম্পৃক্ত থাকা মানেই যে সেখানে জীবন থাকতে হবে বিষয়টা এরকম নয় কারণ বিভিন্নভাবেই ফসফিন তৈরি হতে পারে

শুক্রের এই জ্বলন্ত আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো রহস্যময়।

আমাদের ছায়াপথে প্রায় ৩৬টি এলিয়েন সভ্যতা থাকতে পারে

শুনে বিষয়টি হাস্যকর লাগছে? নাকি অবাক হয়ে যাচ্ছেন? আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে কোটি কোটি তারকা রয়েছে। তাদের অনেকের গ্রহীয় সিস্টেম বিদ্যমান।

এর ভিতর হাজার হাজার এলিয়েন সভ্যতা থাকতে পারে। দা অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে ২০২০ সালের ১৫ই জুন একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

সেই রিপোর্টে বলা হয় যে আমাদের ছায়াপথের প্রায় ৩৬টি এলিয়েন সভ্যতা থাকতে পারে। এখন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে গবেষকরা এই সংখ্যাটিতে কিভাবে পৌঁছেছেন? হ্যাঁ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

কয়েক দশক ধরে এলিয়েন খোঁজার জন্য একটি সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। সমীকরণ টির নাম হল ড্রেকের সমীকরণ। ১৯৬১ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাংক ড্রাক সমীকরণটি গঠন করেন।

এখানে-

  • নক্ষত্রের সংখ্যা
  • নক্ষত্রের গ্রহ গঠনের সম্ভাবনা
  • নক্ষত্রের গ্রহ গঠনের অংশগ্রহণ এর শতকরা পরিমাণ

 ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়।

আর এভাবেই এই হিসাবটি করা হয়। যদিও এর বেশিরভাগ উপাদানগুলি এখনো অজানা। আর এই গবেষণার ফল হচ্ছে মিল্কিওয়েতে ৩৬টি এলিয়েন সভ্যতা বিদ্যমান থাকতে পারে।

১০০০ এরও বেশি নক্ষত্র আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে

আচ্ছা আমরা যেমন এলিয়েনদের খুঁজছি তারা কি আমাদের খুঁজছে না? আসলেই তো তারাও তো আমাদের খুঁজতে পারে? এমনও হতে পারে আমরা তাদের খুঁজে পাওয়ার আগে তারাই আমাদের খুঁজে পেল।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর  রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির জার্নালে একটি আশ্চর্য তথ্য প্রকাশিত হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কিছু নক্ষত্র রয়েছে যারা পৃথিবীর সরাসরি লাইনে অবস্থিত। অর্থাৎ সকল নক্ষত্র থেকে আমাদের পৃথিবীতে সরাসরি দেখা যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন এমন নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় ১০০০টি।

তার মানে ১০০০টি এলিয়েন নক্ষত্র আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। গবেষক দলটি আরও গবেষণা করেছেন যে পৃথিবীর প্রায় ৩০০ আলোক বছরের মধ্যে এই নক্ষত্র গুলির অবস্থান। এই নক্ষত্রগুলির মধ্যেও এলিয়েনের বসবাস থাকতে পারে।

এফআরবি সংকেতের জন্য এলিয়েনরা দায়ী নয়

একটা সময় মনে করা হতো যে এফআরবি সংকেত এলিয়েনদের দ্বারা আসছে। কিন্তু এখন জানা গেছে যে এগুলোর জন্য এলিয়েনরা দায়ী নয়। এফআরবি হল এক ধরনের তরঙ্গ। যা দিনে মহাকাশে প্রায় কয়েক হাজার বার প্রতিফলিত হয়।

তবে বর্তমান সময়ের পূর্বে এমনটাই ধারণা করা হতো যে এগুলো এলিয়েনদের সংকেত। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এফআরবির উৎস মহাকাশে খুঁজে পেয়েছেন। তাই এখন এর সাথে এলিয়েনদের আর দায়ী করা যায় না।

 

 সাদা বামন তারকাগুলি এলিয়েনদের ঘাঁটি হতে পারে

আজ থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের সূর্য একটি লাল দৈত্তের মতো ফুলে উঠবে। তারপরে এটি আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকবে। এবং একটা পর্যায়ে এসে এটি একটি সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে।

এর অন্যথা নেই। সূর্যের এই নিয়তি অপরিহার্য। আর এখনও পর্যন্ত মানুষের অন্য কোনো গ্রহে স্থানান্তরের সুবিধা সৃষ্টি হয়নি। এমনও হতে পারে সেই সময় আমরা প্রযুক্তিতে আরো অনেক বেশি এগিয়ে যাব। এতটা এগিয়ে যাব যে আমরা এই মৃত নক্ষত্রের আলোতেই বেঁচে থাকতে পারবো।

আচ্ছা এমনটাতো এলিয়েনদের ব্যাপারেও হতে পারে। তারা অনেক উন্নত প্রযুক্তির সভ্যতা হতে পারে। হয়তো তারা সাদা বামন নক্ষত্রে বেঁচে থাকার উপায় আবিষ্কার করেছে।

আমরা সবসময়ই এলিয়েনদের খোঁজার ব্যাপারে মৃত নক্ষত্রগুলোকে বাদ দিয়ে যাই। কিন্তু এগুলো এলিয়েনদের ঘাঁটি হতে পারে।

এলিয়েনরা অক্সিজেন নির্ভর নাও হতে পারে

আমাদের অনেকেরই ধারণা যে প্রাণ থাকতে হলে সেখানে অক্সিজেন থাকতে হবে। কারণ আমরা নিজেরা অক্সিজেন এর মাধ্যমে বেঁচে থাকি। তাই আমাদের মনে হয় যে, অক্সিজেন ছাড়া আর কেউ বাঁচতে পারবে না।

এমনটা কিন্তু নাও হতে পারে। এমন অনেক প্রাণী থাকতে পারে যাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের কোন দরকার নেই। আমাদের মহাবিশ্বে অক্সিজেনের পরিমাণ খুবই কম।

তবে যে দুটি অনুর সংখ্যা মহাকাশের সবচেয়ে বেশি তারা হল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। এলিয়েনরা হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম নির্ভর হতে পারে। গবেষকরা হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামে কোন প্রাণীর শ্বাস নিতে পারে কিনা তার উপরে একটি পরীক্ষা চালান।

তারা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বোতল নেন। বোতলের একটি হাইড্রোজেন দিয়ে পূর্ণ করেন। এবং অপরটি হিলিয়াম দিয়ে পূর্ণ করেন। এবার এই দুটি বোতলে E.coli নামক ব্যাকটেরিয়া ভরে দেন।

তারা দেখতে পেলেন যে ২ অবস্থাতেই ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে থাকতে সক্ষম। তবে তারা সংখ্যা বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। তাই বলা যায় যে এলিয়েনরা অক্সিজেন নির্ভর নাও হতে পারে।

আমাদের সৌরজগতের চারটি সম্ভাবনাময় এলিয়েন স্পট

আমাদের সৌরজগতের কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে এলিয়েন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ভিতর সবার প্রথমে যার নাম আসে সেটি হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ। মঙ্গলের গঠনের সাথে পৃথিবীর গঠনের অনেক মিল রয়েছে।

২০২০ সালের শুরুর দিকে মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে একটি বৃহৎ আকারের লেক শনাক্ত করা হয়েছিল। যাতে সেখানে অণুজীব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

সৌরজগতের বাকি তিনটি সম্ভাবনাময় এলিয়েন স্পট হল-

  • বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা
  • শনির চাঁদ এনসেলাডাস
  • শনির অন্য চাঁদ টাইটান

এই উপগ্রহ ৩টিতে জীবনের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলের মত ইউরোপাতে জল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর উপরিভাগটি বিস্তৃত বরফাবৃত। যা একটি ছোটখাটো সমুদ্রকে আড়াল করে রাখার জন্য যথেষ্ট।

এনসেলাডাসেও একটি বরফাবৃত পৃষ্ঠ রয়েছে। যার তলদেশে লুকায়িত জল থাকতে পারে। যা অণুজীব বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ পরিবেশ হতে পারে।

এছাড়া টাইটান আমাদের সৌরজগতের একমাত্র চাঁদ যার বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন উপস্থিত রয়েছে। নাইট্রোজেন জীবন শুরুর একটি রূপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link