কী এবং কেন?

রত্নপাথর কি এবং কেন?

হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রত্নপাথর বা Gemstones এর মেটাফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রে এর গুরুত্ব অনেক। জ্যোতিষীদের মতে বিভিন্ন রাশির সাথে বিভিন্ন রত্নপাথরের সংযোগ আছে যা আমাদের আচরণ ও জীবনকে  প্রভাবিত করতে পারে।

তাই ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, সফলতা, সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য অনেক মানুষ শখের বশত রত্নপাথর ব্যাবহার করে। রত্নপাথরের মধ্যেও নর ও নারী লিঙ্গভেদ আছে। তাই জ্যোতিষীরা পুরুষদেরকে নারী এবং নারীদের নর শ্রেণীর পাথর ব্যাবহার করতে বলেন। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি রত্নপাথর এবং তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট  নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হল।

 

১। অ্যামেথিস্ট

ক্ষমতা – শান্তি, আধ্যাত্মিকতা, মানসিক সুরক্ষা

অ্যামেথিস্ট রত্নপাথরকে ‘সন্ন্যাসী পাথর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা ব্যাবহারে সুগভীর আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন হয় বলে ধারনা করা হয়। এটি আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে একটি গভীর সচেতনতা সৃষ্টি করে, যে কারণে অনেক মনস্তাত্ত্বিক এই পাথর ব্যবহার করে।

আপনি যদি অনিদ্রা নিয়ে সমস্যায় পড়েন অথবা বিভিন্ন বাজে স্বপ্নে ঘুমের সময় ব্যাহত হয়, তবে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে একটি অ্যামেথিস্ট পাথর রেখে দেখতে পারেন। জ্যোতিষীদের মতে, এই রত্নপাথর মানসিক আঘাত থেকে আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করে এবং যেকোনো আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে উপকারী।

 

২। অ্যাকুয়ামেরিন

ক্ষমতা – সাহস, সৌভাগ্য এবং আত্মিক শান্তি।

সাগরের নীল স্বচ্ছ পানির সাথে মিল রেখেই এর নাম অ্যাকুয়ামেরিন। এই নীল রত্ন শান্তি, আত্মপ্রেম এবং গ্রহণযোগ্যতার অনুভূতি উদ্দীপিত করে বলে মনে করা হয়। দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক অসময়, মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ এসব দূর করতে জ্যোতিষীরা এটি ব্যাবহার করতে বলেন। অ্যাকুয়ামেরিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এটি উদ্বিগ্নতা দূর করতে সাহায্য করে।

মীন রাশির জাতক জাতিকারা এটি ব্যাবহার করেন।

৩। ডায়মন্ড বা হীরা

ক্ষমতা – সম্পর্ক, ভালোবাসা, এবং স্বচ্ছতা।

ডায়মন্ড বা হীরা শুধু সবচেয়ে দামী পাথর তা নয়, এটা সবচেয়ে শক্তিশালী রত্নও বটে। ডায়মন্ড মানুষকে মানসিক স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। সম্মান বৃদ্ধি, প্রেমে সাফল্য, দাম্পত্য সুখ, হারানো গৌরব ফিরে পেতে হীরা ব্যাবহার করতে বলা হয়। মেষ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য এটিকে শুভ পাথর ভাবা হয়।

৪। এমারেল্ড বা পান্না

ক্ষমতা – ভালবাসা, শক্তি এবং শুদ্ধি।

রত্নপাথরদের মধ্যে হীরার পরেই পান্নার অবস্থান। এই সবুজ রত্ন হৃদয় চক্রের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত বলে বলা হয়ে থাকে। এটার ব্যাবহার অন্তর্দৃষ্টি বৃদ্ধি করে, হৃদয় খোলে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। ব্যাবসায়িক সফলতা, সচ্ছলতা, প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে এটি কাজ করতে পারে বলে ধারনা করা হয়। কথায় আছে পান্না ব্যাবহার করলে দারিদ্রতা দূরে থাকে।

মিথুন রাশির জাতক জাতিকার জন্য পান্না কার্যকর বলে জ্যোতিষীরা বলেন।

৫। ওপাল

ক্ষমতা – সৃজনশীলতা এবং অনুপ্রেরণা

এই আধা-স্বচ্ছ পাথরটি সিলিকন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি দ্বারা গঠিত। এর মহাজাগতিক প্রভাব আপনাকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে, মানুষের কুদৃষ্টির প্রভাব দূর করতে, নেতিবাচক আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে এবং সৃজনশীলতার গভীর সমুদ্রের সন্ধান পেতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করা হয়।

৬। মুক্তা

ক্ষমতা – নারীত্ব, সততা এবং পবিত্রতা।

মুক্তার ক্ষমতা বিশুদ্ধ, সৎ এবং মহীয়সী নারীর সাথে মিলে যায়। মুক্তো পরলে মানসিক উন্মুক্ততা এবং সততা বৃদ্ধি পায়। মুক্তা সাধারণত ডান হাতের ছোট আঙ্গুলে পরতে হয়। মানসিক অশান্তি, অসচ্ছলতা, ক্ষয় রোগে এটি উপকারী বলে কথিত আছে।

কর্কট রাশির জাতক জাতিকাদের মুক্তা পরতে বলা হয়।

৭। রুবি

ক্ষমতা – ভালোবাসা, সাহস এবং শক্তি।

উল্লেখ্য যে রুবি মূলত লাল স্যাফায়ার পাথর, কারণ তারা অন্যান্য স্যাফায়ারের মত একই পাথর থেকে তৈরি হয়। ডায়মন্ডের পাশাপাশি, রুবিও অন্যতম শক্তিশালী রত্ন পাথর। আপনি ক্লান্তি এবং অলসতা দ্বারা আটকে আছেন, তবে এটাই আপনার রত্ন। এটা আপনার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া শত্রুতা ও অসচ্ছলতা রুখে দেয়ার আশায় মানুষ এটি ব্যাবহার করে। অশুভ ও কুচক্রীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সিংহ রাশির জাতক জাতিকারা রুবি ব্যাবহার করে।

৮। স্যাফায়ার

ক্ষমতা – অন্তর্দৃষ্টি বৃদ্ধি, ভারসাম্য এবং ইতিবাচকতা বাড়ানো

স্যাফায়ার অনেক রঙের হয়। প্রতিটি রঙ আলাদা আলাদা নিজস্ব শক্তি বহন করে। সাধারণভাবে স্যাফায়ার আপনার তৃতীয় চোখ খুলে দেয় যার ফলে জ্ঞান ও দিব্যদৃষ্টি উন্মুক্ত হয়। ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজে সফলতা আসতে সাহায্য হয়।

বৃষ রাশির জাতক জাতিকা এটি ব্যাবহার করে থাকে।

৯। তোপাজ

ক্ষমতা – ভারসাম্য, স্বাস্থ্য এবং সততা।

আপনার যদি নিজেকে এলোমেলো মনে হয়, নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান অথবা দুশ্চিন্তায় জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তাহলে তোপাজ রত্ন ব্যাবহার করে দেখতে পারেন। বলা হয় যে এই পাথর আপনার ভেতরের শক্তিকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে এবং মানসিক চাপ, উত্তেজনা থেকে মুক্ত করে আপনাকে স্বস্তি প্রদান করবে।

বৃশ্চিক রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য এই পাথর।

১০। টুম্যালিন

ক্ষমতা – আত্মপ্রেম, গ্রহণযোগ্যতা এবং ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি।

এই পাথর আপনার মনে ভালোবাসা বাড়িয়ে তুলবে। টুম্যালিন্ আপনাকে সঠিক পথে থাকতে সাহায্য করে বলে বলা হয়। কালো টুম্যালিন্ মানসিক চাপ কমায় এবং পিঙ্ক টুম্যালিন্ কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।

দুর্লভ ও রত্নপাথর ব্যাবহার অনেক প্রাচীন আভিজাত্য। বিভিন্ন পাথরে যে সকল উপকারিতা বা শক্তির কথা বলা হয় তা আসলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link