টাইম ট্রাভেল নিয়ে যত কথার রহস্য
আমরা ছোটো কাল থেকে শুনে আসছি,”Time and Tide wait for none”।সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে নাহ। কিন্তু আমি বলছি, সময় অপেক্ষা করবে। এমনকি সময়কে আমরা একজায়গায় দাড়করিয়ে রেখে ঘুরেও আসতে পারি। আচ্ছা আপনি কি জানেন,যে আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে সময় বলতে কিছু ছিলো না? তখন তো সভ্যতা খুব ভালোভাবেই চলছিল।
তারমানে সময়টা আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছি। আমার Inspiration স্যার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এমনটাই বলেছিলেন। তারমতে সময় স্থানেরই একটি রুপমাত্র।
তাহলে চলুন দেখি কিভাবে আমরা সময়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারি।
এর জন্য আপনাকে আলোর বেগে,বা তার কাছকাছি কোনো বেগে চলতে হবে। এবং মজার ব্যাপার হলো যখন আপনি আলোরবেগে চলবেন তখন আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র E=mc^2 অনুযায়ী আপনি পদার্থই থাকবেন না, আপনি সম্পূর্ণ শক্তিতে পরিণত হবেন।ফলে আপনার উপর সময়ের কোনো প্রভাব পড়বে নাহ। এই জন্যই মাহাকাশ থেকে 20 বছর ভ্রমন করে আপনার সমবয়সি বন্ধু এসে দেখবে আপনার বয়স তার থেকে প্রায় ১৮ বছর বেশি, যদিও আপনার মহাকাশ ভ্রমনের সময় আপনাদের বয়স একই ছিলো।আমি এটা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে,আপনার বন্ধুর উপর সময়ের প্রভাব খুব বেশি একটা পড়বে না। তারমানে আপনি যদি আলো বা তার কাছাকাছি কোনো বেগে চলতে পারেন, তাহলে আপনি সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার রেকর্ড করতে পারবেন।
ধরেন, এখন আমরা সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা শিখে গেছি। এবং আমরা সময় কে নিয়ন্তণ করার একটি মেশিনও আবিষ্কার করে ফেলেছি, যেটার নাম “টাইম মেশিন”। এই মেশিন দিয়ে আমরা একজন ট্রাভেলার হয়ে সময়-ভ্রমন(Time Travel) করব।
এখন আমরা জানব, টাইম ট্রাভেল নিয়ে
Time Travel(সময় ভ্রমন) বা সময়ের মাঝে পরিভ্রমণ নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। এই টাইম ট্রাভেল নিয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তৈরী করা হয়েছে হয়েছে।এ নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্লকবাস্টার মুভিও তৈরি হয়েছে । এসব কল্পকাহিনীতে দেখা যায় Time Machine এ ভ্রমণ করে খুব সহজেই মানুষ অতীতে বা ভবিষ্যতে খুব সহজেই চলে যাচ্ছে। যেমন ধরুন, আপনার ইচ্ছে হলো, আপনার অতীতে ফিরে যেতে। আপনি টাইম মেশিনে চড়ে ব্যাক বাটন টিপে চলে যেতে পারবেন দূর অতীতের কোন এক সময়ে, দেখে আসতে পারেন আপনার অতিতের ঐতিহাসিক কোনো মুহূর্ত। আবার হয়তো আপনার ইচ্ছে হলো, ভবিষ্যতের পৃথিবীটি কেমন হবে সেটি দেখতে। আপনি টাইম মেশিনের ফরওয়ার্ড বাটনে চাপ দিয়ে চলে গেলেন সুদূর ভবিষ্যতে। বিষয়টি রোমাঞ্চকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সময়ের মাঝে পরিভ্রমণ করা কি আদৌ সম্ভব? এ নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি আদৌ সম্ভব নয়। আরেক দল বিজ্ঞানী মনে করেন, তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বর্তমানের প্রযুক্তিতে এটি এখনো সম্ভবপর নয়। তবে ভবিষ্যতে সম্ভবপর হতে পারে।
সময় হলো বয়ে চলা নদীর মত। কখনো উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় না। প্রতিটি ক্ষনে ক্ষনেই আমরা একটু একটু করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এইতো এখন যেটা বর্তমান, ঠিক পরমুহূর্তে সেটাই অতীত। অতীত থেকে বর্তমানের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে আমরা ক্রমাগত এগিয়ে চলছি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই অবিরাম পথ চলায় কোন বিরতি নেই। কিন্তু বর্তমান থেকে অতীতে ফেরা কি সম্ভব? আমরা চাইলেই ভবিষ্যতে চট করে চলে যেতে পারব? প্রশ্নগুলোর জবাব পাবার আগে , আসুন সময়ের ব্যাপারটিকে দেখে আসা যাক, এটি আসলে কি এবং কিভাবে সময়ের সূচনা হয়েছিলো।
বিজ্ঞানীদের মতে, এখন থেকে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে একটি মহাবিস্ফোরণের বা বিগ ব্যাং (Big Bang) এর ফলে আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিলো। এই মহাবিস্ফোরণের পরপরই মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়া শুরু করে এবং আজঅবধি এটি প্রসারিত হয়েই চলেছে। এই প্রসারণের ফলে মহাবিশ্বে স্থানের (space) সৃষ্টি হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা তিনটি মাত্রা (dimension) রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই মহাবিস্ফোরণের ফলে ত্রিমাত্রিক স্থানের পাশাপাশি আরেকটি মাত্রার সূচনা হয়েছিলো। মহাবিশ্বে কোন বিন্দুকে চিহ্নিত করতে হলে, ত্রিমাত্রিক স্থানের পাশাপাশি এই চতুর্থ মাত্রাটিরও উল্লেখ করা প্রয়োজন। এই চতুর্থ মাত্রাটিই হলো সময় বা কাল (time)। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাবিস্ফোরণের আগে স্থান এবং কালের কোন অস্তিত্ব ছিল না। সবকিছুই একটি বিন্দুতে স্থির অবস্থায় ছিল। মহাবিস্ফোরণের ফলে একই সাথে স্থান এবং কালের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে আমরা স্থান এবং কালকে আমরা আলাদা ভেবে থাকি কিন্তু আসলে স্থান-কালের ( space-time) যৌথ বুননের ফলেই আমাদের মহাবিশ্বের অবকাঠামো গঠিত হয়েছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে এটিকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা ও প্রমাণ করেছেন। বস্তুত সময় হলো, মহাবিশ্বের একটি অন্যতম মাত্রা, যার প্রভাবে মহাবিশ্ব সর্বদাই পরিবর্তিত হচ্ছে।
মহাবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন উনার বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে সময়ের এবং গতির একটি চমৎকার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, সময় ব্যাপারটি ধ্রুব নয়, এটি আপেক্ষিক। কোন বস্তুর গতি বৃদ্ধি পেলে তার জন্য সময় শ্লথ হয়ে যায়। যেমন ধরুন, দুইজন জমজ ভাই এর একজনকে রকেটে করে মহাশূন্যে পাঠানো হলো। আরেক ভাই পৃথিবীতেই অবস্থান করলো। ধরুন, মহাশূন্যে রকেটটি আলোর গতির কাছাকাছি (৯৯%) গতিতে ৫ বছর ঘুরার পর আবার পৃথিবীর মধ্যে ফিরে আসলো। পৃথিবীর মধ্যে ফিরে আসার পর আমরা দেখতে পাবো, ওই পাঁচ বছরে পৃথিবীতে ছত্রিশ বছরের সমান সময় পার হয়ে গেছে। এর কারণ হলো আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব অনুসারে প্রচন্ড গতির কারণে রকেটের ভেতর সময় শ্লথ হয়ে গিয়েছিলো। সেজন্য এক ভাইয়ের কাছে রকেটের ভেতর যে সময়কে মনে হয়েছে পাঁচ বছর, অন্য ভাইটির কাছে সে সময় পৃথিবীতে কেটেছে পুরো ছত্রিশ বছর। ভ্রমণ শেষে মহাশূন্যচারী ভাইটি তার পৃথিবীতে অবস্থানকারী জমজ ভাইটির চেয়ে বয়সে একত্রিশ বছর ছোট হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সে ফিরে আসবে একত্রিশ বছর পরের ভবিষ্যতে। তার চেনা পৃথিবী তখন অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে। একে অনেকের কাছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে এটি সম্ভব। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় টাইম ডাইলেশন (time dilation) বা সময় প্রসারণ। এর স্বপক্ষে অনেক পরীক্ষামূলক প্রমাণও রয়েছে।
মজার বিষয় হলো, বাস্তবেও এর প্রয়োগ দৈনন্দিন জীবনে আমরা এখন করছি। আজকাল গাড়িতে পথ নির্দেশনার জন্য জিপিএস (GPS) স্যাটেলাইটের সাহায্য নেয়া হয়। এসব স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে অনেক উঁচুতে আমাদের বায়ুমন্ডলের এক্সোস্ফেয়ার স্তরে অবস্থানরত।এই স্যাল্টেলাইটগুলোর গতি আলোর গতির কাছাকাছি নয়, সেকেন্ডে মাত্র ৩.৯ কিলোমিটার। আর আলোর গতি হলো সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার। সুতরাং এসব স্যাটেলাইটের গতি হলো আলোর গতির একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র।কিন্তু তারপরও এই গতির কারণে জিপিএস স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলো প্রতিদিন ৩৮ মাইক্রো সেকেন্ড করে স্লো হয়ে যায়। টাইম ডাইলেশনের ব্যাপারটির দিকে লক্ষ্য রেখেই জিপিএস স্যাটেলাইটের ঘড়িগুলোকে পর্যায়ক্রমে ক্রমাঙ্কন (calibration) করা হয়। এই পদ্ধতি ছাড়া স্যাটেলাইটগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারতো না।
আচ্ছা আমরা যদি টাইম ডাইলেশনের বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত থেকে ঘুরে আসতি পারি, বিষয়টা আসলেই মন্দ হয় না, তাই না? কিন্তু এর জন্য আপনাকে আলোর বেগ বা তার কাছাকাছি বেগে চলতে হবে । আর এতে মূল বাধাটা হল আমরা এখনো পর্যন্ত আলোর বেগ বা তার কাছাকাছি বেগে চলার মত কোন যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। এছাড়াও আরেকটি সমস্যা হলো, আলোর গতিতে চললে কোন বস্তুর ভর অসীম হয়ে যাবে এবং দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে শূন্য। এটাও আইনস্টাইন তাঁর সমীকরণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। সেজন্য আলোর গতিতে চলা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও, বাস্তবে নয়। এজন্য আইনস্টাইন টাইম ট্রাভেল নিয়ে নিজেই যথেষ্ট সন্দিহান ছিলেন।
তবে টাইম ট্রাভেলের আরেকটি সম্ভাব্য উপায় রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও আমাদের আইনস্টাইনের শরণাপন্ন হতে হবে। আগেই বলেছি স্থান-কালের (space-time) যৌথ বুননেই মহাবিশ্বের অবকাঠামো গঠিত হয়েছে। স্পেস-টাইমকে আমরা রাবারের একটি আবরনের সাথে কম্পেয়ার করতে পারি। এই আবরনের উপর আমরা যদি একটি সীসার বল রাখি, তাহলে বলটির ভরের জন্য এর চারপাশে রাবারের আবরনটি বাঁকা হয়ে যাবে। ঠিক তেমনিভাবেই সূর্যের ভরের জন্য তার চারপাশের স্পেস-টাইমের মধ্যে এক ধরনের বক্রতার সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটিকে অনুসরণ করেই পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। ঠিক একইভাবে সূর্যও প্রদক্ষিণ করছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে। বস্তুর ভর এবং চারপাশের বক্রতার পরিমাণ সমানুপাতিক।এর ফলে তার মহাকর্ষ বলও হবে তত বেশি। এভাবেই আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে মহাকর্ষ বলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এরকম যুগান্তকারী ধারণা আইনস্টাইনের আগে আর কারো মাথায় আসেনি। তাঁর আবিষ্কৃত সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব গত একশো বছরে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
বিজ্ঞানী মনে করেন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। সেজন্য মহাকর্ষ বলকে ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে ফ্র্যাঙ্ক টিপলার নামে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটি অভিনব পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন সূর্যের চেয়ে ১০ গুণ ভারী কোন বস্তুকে যদি সিলিন্ডারের আকৃতি দেয়া যায় এবং সেটাকে যদি প্রচন্ড গতিতে ঘোরানো যায়, তাহলে ওই সিলিন্ডারের ভেতর স্পেস-টাইমের চাদরের মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ সৃষ্টি হবে, যার ভেতর দিয়ে অতীতে ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। তিনি তাত্ত্বিকভাবে তাঁর ধারণাটি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বলাই বাহুল্য, এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো প্রযুক্তি মানুষের হাতে নেই। সেজন্য এটাকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতোই মনে হবে।
তবে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে এমন কিছু চমকপ্রদ বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ব্ল্যাকহোল (blackhole) বা কৃষ্ণবিবর। ব্ল্যাকহোল এমন এক মহাজাগতিক বস্তু যার প্রবল মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এর ভেতর থেকে আলোকরশ্মি সহ কোন ধরনের সিগন্যালই বের হতে পারে না। ব্ল্যাকহোলের ভেতরটি সম্পূর্ণ অন্ধকার। ব্ল্যাকহোলের ভেতর স্পেস-টাইমের বক্রতাটি অসীম আকার ধারণ করেছে। বিজ্ঞানীরা একে Singularity হিসেবে আখ্যা দেয়। তাঁদের মতে, ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তরে এটি একটি অদৃশ্য সুড়ঙ্গের আকার ধারণ করেছে। এবং স্পেস-টাইমের এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে আমাদের অসীম মহাবিশ্বে একটি ব্ল্যাকহোল অন্য একটি ব্ল্যাকহোল একে অপরের সাথে লেগে থাকার Possibility রয়েছে। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে ব্ল্যাকহোল দুটো লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্পেস-টাইমের সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে তারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্পেস-টাইমের ভেতরের অদৃশ্য সুড়ঙ্গের নাম বিজ্ঞানীরা ওয়ার্মহোল (wormhole) দিয়েছেন।
ব্যাপারটা সাইন্স ফিকশনের মত মনে হলেও, ওয়ার্মহোলের ধারণাটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা যায়। আইনস্টাইন এবং উনার সহযোগী বিজ্ঞানী ন্যাথান রোজেন ১৯৩৫ সালে এক রিসার্চ এর মাধ্যমে এটি দেখেছিলেন । তাঁরা অবশ্য তখন ওয়ার্মহোল নামটি ব্যবহার করেননি, বিজ্ঞানী মহলে তখন একে আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ (Einstein-Rosen Bridge) নামে আখ্যায়িত করা হতো।
অনেক বিজ্ঞানী ওয়ার্মহোলকে মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা মনে করেন। তাদের মতে ওয়ার্মহোলের ভিতর দিয়ে পরিভ্রমণ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থানে এবং ভিন্ন সময়ে গিয়ে উপস্থিত হওয়া যাবে। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে বাস্তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার এখনো সময় আসে নি।
আরেকদল বিজ্ঞানী মনে করেন, গবেষণাগারে প্রচন্ড শক্তিশালী মহাকর্ষ বলের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে, স্থান-কালের চাদরের মধ্যে কৃত্রিম সুড়ঙ্গ তৈরি করে তার ভেতর দিয়ে অতীতে ফিরে যাওয়া যাবে। তবে এতটা শক্তিশালী মহাকর্ষ বল সৃষ্টি করার মত প্রযুক্তি মানুষের হাতে এখনও নেই। তবে ভবিষ্যতে হলেও হতে পারে বলে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন।
প্রথমেই বলেছি সময় পরিভ্রমণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সীমা নেই। সেটি মাঝে মাঝে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তবে এ ব্যাপারে কিছু কূটাভাস (paradox) রয়েছে। সেগুলো একটু আলোচনা করা দরকার। এমন যদি হয়, যদি কোনো ব্যাক্তি অতীতে ফিরে যেয়ে সে তার আপন দাদাকেই ছোটকালে হত্যা করে বসে, তাহলে? তাহলে তো তার নিজের বাবারই জন্ম হবে না এবং ফলে তার নিজেরও জন্ম হবে না। তাহলে সে তার দাদাকে হত্যা করলো কিভাবে? টাইম ট্রাভেলের ক্ষেত্রে একে বলা হয় গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স। তারপর ধরুন, আমরা ভাবছি ভবিষ্যতের মানুষ টাইম ট্রাভেল করার মত প্রযুক্তি অর্জন করবে। তাহলে এতদিনে ভবিষ্যৎ থেকে বেশ কিছু মানুষের অতীতে, অর্থাৎ আমাদের বর্তমানে চলে আসার কথা ছিল।কিন্তু তাদেরকে কোথাও তো দেখা যাচ্ছে না। সেজন্য অনেক বিজ্ঞানী বলেন, টাইম ট্রাভেল ব্যাপারটি তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে বেশ গোলমেলে।
পৃথিবীতে বর্তমান নিয়েই আমরা অনেক সমস্যায় রয়েছি। এর মাঝে অতীত এবং ভবিষ্যৎকে টেনে আনলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না। সেজন্য টাইম ট্রাভেল ব্যাপারটি আপাতত গল্প-উপন্যাস এবং সিনেমাতেই থাকুক, বাস্তবে নয়।