স্বাস্থ্য

পিরিয়ড বা মাসিক নিয়ে প্রশ্ন ও এর উত্তর

পিরিয়ড কি?

পিরিয়ড বা মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রতি মাসে সংগঠিত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ সময় হরমোনের প্রভাবে নারী জরায়ু একটি পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যায় যার ফলে মেয়েদের যোনিপথে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। এর কারণ হল, প্রতি মাসে নারী জরায়ু গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে। তবে মাস শেষে যদি ডিম্বাণু পুরুষ হতে আগত শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হতে না পারে তবে জরায়ুর গর্ভ ধারনের জন্য প্রস্তুতকৃত অংশ ভেঙে পড়ে এবং যোনি পথে বেরিয়ে আসে। একেই পিরিয়ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।    

 

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়?

পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া, অস্বস্তি বোধ করা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কিছু নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে অনেকটাই এই অস্বস্তি বা ব্যথা দূর করা সম্ভব। 

 

  • নিয়মিত ভালভাবে গোসল করুন। যোনিতে ব্যথা অনুভব যদি বেশি হয় তবে বুঝতে হবে আরও রক্তপাত হবে। কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে যোনি পরিষ্কার করুন নিয়মিত এতে আরাম পাবেন।
  • ৪-৬ ঘণ্টা অন্তরে অন্তরে প্যাড পরিবর্তন করুন। যদি মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করে থাকেন তবে ৬-৮ ঘন্টা পড় পর পরিষ্কার করে ভালভাবে গরম পানিতে ধুয়ে ব্যবহার করুন। মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
  • মাসিক চলাকালীন ওয়াইপ ব্যবহার করুন। এর বিশেষ ভাবে প্রস্তুতকৃত টিস্যু ত্বককে ঠাণ্ডাভাব দেবে।
  • পিরিয়ডের ব্যথায় তলপেটে গরম সেক দিতে পারেন। এছাড়া তলপেটে ল্যাভেন্ডার তেল মালিশ করলে অনেকখানি ব্যথা কমিয়ে দেবে । 
  • ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত দোকানে বলে ওষুধ যেমন পেইন কিলার কিনবেন না। 
  • হালকা এবং সহজে পরিধানযোগ্য কাপড় পড়ুন। জিন্স বা প্যান্ট পরা থেকে বিরত থাকুন।
  • প্রচুর পানি পান করুন। 
  • নিয়মিত ৮ ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে।
  • সিজনাল ফল এবং ফলের জুস পান করুন।
  • মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।

 

 

অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয়?

গর্ভধারণ ছাড়াও আর ও নানাবিধ কারনে পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু কারণ,

 

ওজন কমে যাওয়া

ওজন কমায়ে কঠিন ডায়েট বা অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অসাভাবিক ওজন কমে যায়। আর সে সময়ই দেখা দিতে পারে অনিয়মিত পিরিয়ড।

 

থাইরয়েড সমস্যা

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড হরমোনের কম বা বেশি ক্ষরণ অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য দায়ী হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থান আমাদের গলায়। এটি দেহের প্রায় সব গুলো প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করার কাজ করে থাকে।  

 

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনিয়মিত পিরিয়ডের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। মানসিক ভাবে অবসাদ গ্রস্থতা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিষণ্ণতা দেহের স্বাভাবিক কাজ কে ব্যাহত করে ফলে অন্য অনেক প্রতিক্রিয়ার ন্যায় অনিয়মিত পিরিয়ডের হতে পারে। 

 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর দরুন এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেসটোস্টেরন উৎপাদনের মাত্রা কমে যায়।   একটি হরমোনাল সমস্যা। যার কারনে পিরিয়ড দেরিতে হয়। 

 

 

তবে, একবার পিরিয়ড দেরিতে হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটি তখনই অস্বাভাবিক বলে গন্য হবে যখন তিন মাস টানা পিরিয়ড না হওয়া, বছরে নয়বারের কম পিরিয়ড হওয়া অথবা পিরিয়ড হওয়ার মধ্যবর্তী সময় ৩৫ দিনের বেশি বিরতি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

 

পিরিয়ড শেষ হওয়ার কতদিন পর সহবাস করা যায় প্রেগনেন্সির ঝুঁকি ছাড়া?

 

ধরা যাক, পিরিয়ড হয়ে থাকে ২৮ থেকে ২০ দিন অন্তরে। এক্ষেত্রে পিরিয়ড হওয়ার দিন থেকে প্রায় ৯ম দিন পর্যন্ত কোন পদ্ধতি ব্যবহার না করেও সহবাস আপনার জন্য নিরাপদ। এই হিসেব অনুসারে ১০ম দিন হতে অনিরাপদ দিন শুরু বলে গন্য করা যায়। অর্থাৎ, এরপর থেকে সহবাসে সংযত হতে হবে।
আবার ৩০ দিন অন্তরে ঋতুস্রাব চললে ২০ তম দিনটি হবে শেষ ঝুঁকিপূর্ণ দিন। তার পর ২১ তম দিন হতে অনিরাপদ সহবাসের কোন ঝুকি নেই। 


উপরের বিষয় গুলো অবশ্যই প্রাধান্য পাবে সেসব ক্ষেত্রে যাদের মাসিক চক্র চলে নিয়মিত ভাবে। তবে অনিয়মিত মাসিক চললে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link