হায়েজ বা মাসিক অবস্থায় ইবাদত করার বিধান
হায়েজ বা মাসিক অবস্থায় কি কি ইবাদত করা যাবে? এ প্রশ্নটি হয়তাে ঘুরেফিরে আপনাদের মাথায় আসে । কিন্তু লজ্জায় হয়তাে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না । তাই আজ আমি আপনাদের জানাবাে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি । বাস্তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখা নারী-পুরুষ সবার জন্য জরুরী। আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন এই লেখাটি আপনার জন্য । আপনি নিজে শিখে অন্য মা-বােনদের জানাতে পারবেন । আর যদি আপনি পুরুষ হয়ে থাকেন তাহলেও এটা আপনার জন্য । কেননা আপনার এ বিষয়ে জানাশােনা থাকলে নারীদের শেখাতে পারবেন। নারীরাও সহজে সমাধান পেয়ে আমলে যনােযােগী হতে পারবে ইনশাআল্লাহ । আর এজন্য আপনাকে ধৈর্য সহকারে পুরাে লেখাটি পড়ুতে হবে। সুতরাং এবার পড়া শুরু করুন।
হায়েজ বা মাসিক কি?
গ্রাম-শহরের প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকটি নারী হায়েজ (মাসিক) এই শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। তারা বাস্তবতার মুখােমুখি। আর পুরুষরা তেমন পরিচিত নয় । তাই একটু পরিচয় দিয়ে শুরু করছি । যেন আলােচনাটা বুঝতে সব বয়সী নারী-পুরুষ সকলের সুবিধা হয় । হায়েজ একটি আরবী শব্দ। শব্দটির অর্থ হলাে প্রবাহিত হওয়া । শরীয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সময়ে নারীর জরায়ুর গভীর থেকে কোনাে অসুখ ও আঘাত ব্যতিত যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে হায়েজ বলা হয় ।
হায়েজ অবস্থায় ইবাদত করার হুকুম
এখন আপনাদের জানাবাে হায়েজ অবস্থায় ইবাদতের হুকুম । কথাগুলাে মনে রাখতে হবে । হায়েজ বা মাসিকের সময়ে নামাজ পড়া ও রােজা রাখা নিষেধ। তবে নামাজ ও রােজার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। নামাজ পরিপূর্ণরূপে মাফ হয়ে যায় । আর কখনাে কাজা করতে হয় না । কিন্তু রােজা সাময়িক মাফ হয়, হায়েজ শেষে আবার রােজার কাজা করতে ফরয নামায পড়াকালে যদি হায়েজ দেখা দেয় তাহলে সেই নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে । সেই চলতি নামাজও মাফ হয়ে যাবে । হায়েজ শেষে এটার কাযা করতে হবে না । ওয়াক্তের নামাজ এখনাে পড়েনি কিন্তু নামাজ পড়ার মতাে সময় এখনাে আছে। অর্থাৎ ওয়াক্তের শেষ অবস্থা, এমবস্থায় যদি হায়েজ শুরু হয় তাহলে সেই ওয়াক্তের নামাজ মাফ হয়ে যাবে । কাজা আর পড়তে হবে না । আর রােজা শুরু করার পর যদি হায়েজ দেখা দেয় তাহলে সেটার পরে কাযা করতে হবে। তাই সেটা ফরজ রােজা হােক বা নফল হােক।
হায়েজ অবস্থায় কি কি ইবাদত করা যাবে?
ইতোপূর্বে আপনাদের জানানাে হলাে হায়েজ বা মাসিক অবস্থায় প্রধান ইবাদত নামাজকে আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে মাফ করে দিয়েছেন । তবে নামাজের অক্ত হলে অযু করে নামাজের স্থানে বসে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেন নামাজের অভ্যাস ঠিক থাকে। এটি পালন করা উত্তম। না করলে কোন গুনাহ নেই। কিন্তু রােজার ব্যাপারটা আলাদা। পরবর্তীতে কাজা করতে হয় । এরপর অন্যান্য ইবাদাতের মধ্যে আসে কোরআন তেলাওয়াত। হায়েজ, নেফাস কিংবা গােসল ফরজী থাকা অবস্থায় কুরআনে কারীম পড়া হারাম । গােসল আবশ্যকের সকল অবস্থার হুকুম একই। হাদীসটি দেখুন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঋতুবতী মহিলা এবং গােসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১,সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১,মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩) তবে কোরআন স্পর্শ না করে মুখস্ত করতে পারবে । শর্ত হলাে পরিপূর্ণ আয়াত যেন না হয়। অর্থাৎ কোন শব্দ কিংবা আয়াতের অর্ধেক অর্ধেক করে পাঠ করা যাবে। আর যদি কোন মেয়ে হিফজ করা অবস্থায় হায়েজ এসে যায় এবং মুখস্ত করার জন্য তেলাওয়াতের প্রয়ােজন দেখা দেয় বা কোন হাফেজা মেয়ে হায়েজ অবস্থায় কুরআন হিফ্য রাখার জন্য তেলাওয়াত জারি রাখতে চায় তাহলে তারা মনে মনে তেলাওয়াত করবে। মুপখে মুখে উচ্চারণ করে নয়।