জার্সি পড়ে নামাজ হবে কি?

অনেক জার্সিতে দেখা যায়, খেলোয়াড়ের ছবি নেই, কিন্তু লোগো আছে। আর সে লোগোগুলো বিভিন্ন পশু-পাখির ছবি কিংবা অবয়ব। এই পশু-পাখির ছবি সম্বলিত জামা-কাপড় পরিহিত নামাজ মাকরুহ হয় কিংবা হালকা হয়ে যায়। ভেবে দেখুন, আপনি কষ্ট করে নামাজ ঠিকই আদায় করেছেন অথচ আপনি সেই নামাজের সওয়াব পেলেন অর্ধেকেরও কম, ব্যাপারটা কি আপনার জন্য ভালো হবে? এরপর আবার বিভিন্ন দলের লোগোতে ক্রুশ (+) সাইন দেখা যায় । এই ক্রুশ সম্বলিত জার্সি পড়ে নামাজ আদায় করলে, সে নামাজও মাকরুহ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক ।

 

জার্সিগুলো পরা জায়েয হবে না। কেননা এর মাঝে বেশ কিছু খারাপ দিক রয়েছে, যেমন–

 

১. এটি খেলার মধ্যে ডুবে থাকার প্রতি ইঙ্গিত করে। অথচ আল্লাহ তাআলার ভাষায়; এটা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকরা বলত,

 

إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلُعَبُ

 

আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং খেলা করছিলাম। (সূরা তাওবা ৬৫)

 

২. বলা বাহুল্য, রোনালদো, মেসি, নেইমাররা মুসলিম নয়। তাদের জার্সি পরা তাদের প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। আর একজন অমুসলিম খেলোয়াড়ের প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয় আল্লাহর জন্য নয়। সুতরাং এটি অমুসলিমকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করারই নামান্তর। অথচ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে,

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ

 

হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (সূরা আলি ইমরান ১১৮)

READ MORE:  সহবাসের যে নিয়মগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ

 

৩. যদি এদের মধ্য থেকে কেউ মুসলিম হয়ও; তাহলেও বলা বাহুল্য যে, তাদের প্রাপ্ত অর্থের (মাসিক বেতন, ম্যাচ ফি, পুরস্কার) অধিকাংশই আসে হারাম উৎস থেকে। সুতরাং তাদের জার্সি পরা মানে তাদেরকে সমর্থন করা। অথচ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হচ্ছে,

 

وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

 

গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহায়তা করো না। (সূরা মায়েদা ২)

 

৪. তাছাড়া এসব জার্সিতে অনেক সময় অমুসলিমদের বিভিন্ন প্রতীক এমন কি ক্রুশ পর্যন্ত আঁকা থাকে, যা কোন মুসলিমের জন্য পরিধানের চিন্তা করাটাও অন্যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

 

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى

 

যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না। (তিরমিযী ২৬৯৫)

 

ইসলামে যেকোনো প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, আমাদের শাফেয়ি মাজহাব ও অন্য মাজহাবের আলেমরা বলে থাকেন, কোনো প্রাণীর ছবি প্রস্তুত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি কবিরাগুনাহ।

 

কেননা এ ব্যাপারে হাদিসের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

 

প্রাণীর ছবি ছাড়া অন্যান্য ছবি হারাম নয়। যেমন- গাছপালা, পাহাড়, ঝরনা ইত্যাদির ছবি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। (শরহে নববী ১৪/৮১) ইসলামি শরিয়ত মতে, কোনো প্রাণীর ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন- বৃক্ষ, পাহাড়, ঝরনা ইত্যাদির ছবি বৈধ। (আল-বাহরুর রায়েক : ২/২৯)

 

অনেকে মনে করেন, ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা শুধু নামাজের ক্ষেত্রে হারাম! ফলে তারা নামাজের সময় এ ব্যাপারে খেয়াল রাখলেও অন্য সময় উদাসীন থাকে। অথচ এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সর্বাবস্থায় ছবিযুক্ত পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে হ্যাঁ, নামাজে এমন পোশাক পরিধান করা গর্হিত অপরাধ।

 

কোনো ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে নামাজ আদায় করা হোক বা না হোক, উভয় অবস্থায় তা মাকরুহে তাহরিমি বা হারাম। (আল-বাহরুর রায়েক ২/২৯)

READ MORE:  দূর শহরে পড়ে আছি মা লিরিক্স | dur shohore pore achi ma lyrics

 

সুতরাং ছবিযুক্ত কাপড় পরে নামাজ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্ত মাকরুহে তাহরিমি বিষয়ে লিপ্ত অবস্থায় নামাজ পড়ার কারণে গুনাহ হবে। আর যদি ছবিটি একেবারে অস্পষ্ট হয় তাহলে মাকরুহ হবে না। সুতরাং খেলোয়াড়দের জার্সি পরে কেউ যদি নামাজ পড়ে, আর সেটাতে খেলোয়ারড়দের ছবি থাকে, তাহলে সেটা পড়ে নামাজ আদায় করা মাকরুহ হবে। তবে যদি জার্সিতে কারও ছবি না থাকে, তাহলে নামাজ পড়তে অসুবিধে নেই।