শবে কদরের নামাজের নিয়ম
শবে কদরের ফজিলত লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলাে— এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ ঐশীগ্রন্থ ‘আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। শবেকদর সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল সহস্র হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সুরা কদর, আয়াত :১-৩)। শ্রেষ্ঠতম এ রাতের ইবাদতে রয়েছে সবিশেষ গুরুত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, “যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৬০; বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
রমজানের ২৭তম রাত শবে কদর?
শবে কদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত হলাে, শবে কর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলােতেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলােতে কারাে জন্য ইবাদত করা সম্ভব হলে ২৭তম রাতে কিছুতেই উদাসীন থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে ওই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আদায় করলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত পাওয়া যাবে। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬) এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলে থাকেন, ২৭তম রাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া অবৈধ কিংবা বিদআত! অথচ এর সপক্ষে হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামদের আমল রয়েছে। হজরত শুবা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) শবে কদরের রাত্রিতে বলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি। (আর তা হলাে ২৭তম রাত্রি) কেননা রাসুল (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ৭৬২) অনুরূপ ধারণা সাহাবি মুয়াবিয়া (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হাসান (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-ও পােষণ করতেন বলে তাফসিরের বিখ্যাত গ্রন্থ কুরতুবিতে রয়েছে।
শবে কদরের নামাজ
শবে কদরের নির্দিষ্ট কোনাে নামাজ আমল নেই। তবে অত্যধিক ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার ও দোয়া-মুনাজাত করা চাই। যাতে এ রাতের সৌভাগ্য অর্জিত হয়। তাই এ রাতের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা কোনাে কারণে সম্ভব না হলে — অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ যদি জামাতের সঙ্গে আদায় করা যায়, তবুও সারারাত নামাজ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। বিশেষ করে এই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী শবে কদরের | ফজিলতু লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
শবে কদরের দোয়া
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর— তাহলে। তখন কোন দোয়া পড়বাে? তখন তিনি বললেন, তুমি বলাে—
اللهم إنك عفو كريم تحب العفو، فاق على
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্দুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)।
শবে কদরে আরও যে আমল করতে পারেন দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেওয়া শবেকদরের অন্যতম ইবাদত। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দুইজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালাে হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯)