স্বাস্থ্য

কণ্ঠের যত্নে অবহেলা করছেন না তো?

ঠাণ্ডা লেগে বা অন্য কোনো কারণে একদিন কথা বন্ধ থাকলেই বোঝা যায় কণ্ঠের গুরুত্ব। কণ্ঠের যত্ন তাই নিতে হবে নিয়ম করে। আমাদের পারস্পারিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কণ্ঠ বা কথা বলা। আমরা কণ্ঠস্বর নিয়ে খুব বেশী সচেতন নই।

 

পর্যাপ্ত পানি

 

কণ্ঠ সুরকে শ্রুতিমধুর রাখতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা আবশ্যক।

 

ঠাণ্ডা পানি পরিহার

 

কণ্ঠ সুস্থ রাখতে ঠাণ্ডা পানি পরিহার করতে হবে। অনেক সময় গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসে হুট করেই আমরা ঠাণ্ডা পানি পান করি, যা আমাদের গলার জন্য ক্ষতিকর। হঠাৎ ঠাণ্ডা পানি পান করলে গলা বসে যেতে পারে, এতে কণ্ঠের স্বাভাবিক সুরের ব্যত্যয় ঘটে।

 

উচ্চস্বরে কথা বলা পরিহার

 

জোরে চিৎকার করে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া কোনআন তেলাওয়াতের সময়ও আমাদের দেশের হাফিজ সাহেবরা কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা বেশী করেন বলে অনেকেরই ভোকাল নডিউল লক্ষ করা যায়। গানের মধ্যে স্বরের বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে অনেকের ভোকাল নডিউল হয়।

 

পানি দিয়ে গড়গড়া করুন

 

সকালে, বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করে গলা পরিষ্কার করে নিতে পারেন। বেশি জোরে গড়গড়া করতে যাবেন না, প্রথমে ধীরে ধীরে গড়গড়া করে তারপর চাপ বাড়াতে থাকুন।

 

যষ্টিমধু

 

এটি গলার জন্য উপকারী। বিশেষ করে যাঁরা সংবাদ পাঠক, তাঁদের জন্য বেশ উপকারী। যষ্টিমধু নিয়মিত খেলে কণ্ঠ দৃঢ় ও পরিষ্কার হয়।

 

রোজ সকালে রেওয়াজ

 

কণ্ঠকে শ্রুতিমধুর করতে এর পেছনে সময় ও পরিশ্রম দুই-ই ব্যয় করতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা সংগীতশিল্পী, তাঁরা প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন রকমের কণ্ঠের ব্যায়াম ও রেওয়াজ করতে পারেন। এ ছাড়া সেমিনারে কিংবা অফিসের কোনো অনুষ্ঠানে কথা বলতেও কণ্ঠকে প্রতিদিন রেওয়াজের মধ্যে রাখুন।

 

ঘেমে না থাকা

 

সারা দিন কাজকর্মে, চলাফেরায় ঘাম হয়; কিন্তু বেশিক্ষণ ঘামে ভেজা অবস্থায় থাকা যাবে না। বিশেষ করে ঘাম অনেকক্ষণ ধরে শরীরে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

 

ধূমপান পরিহার

 

কণ্ঠ সুস্থ রাখতে কিছু বদ-অভ্যাস পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে ধূমপান গলার স্বর পরিবর্তন করে দিতে পারে। ধূমপানের কারণে কণ্ঠে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধে। কণ্ঠই যদি হয় জীবিকা চালানোর অবলম্বন, তাহলে ধূমপানসহ অন্যান্য মাদক সেবন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

 

কণ্ঠনালির বিশ্রাম

 

দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কণ্ঠনালিকে বিশ্রাম দেয়া উচিত, যা কণ্ঠনালির অবসাদ দূর করে এবং শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিজের কণ্ঠকে শুনুন এবং যদি কোনো উপসর্গ থাকে বা পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে যথাযথ যত্ন নিন।

 

কণ্ঠনালির অপব্যবহার

 

জনসমাবেশ, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে জোরে কথা বলা, অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলা ঠিক নয়। ঘাড় ও কানের মধ্যে ফোন চেপে ধরে কথা বলায় ঘাড় ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশিতে টান লাগে। উচ্চৈঃস্বরে বা চিৎকার করে কথা বলা, জনসমাবেশে বা বড় লেকচার গ্যালারিতে মাইক ছাড়াই জোরে কথা বললে কণ্ঠনালির ওপর বেশি চাপ পড়ে।

 

কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার

 

যখন কথা বলা হয়, তখন কণ্ঠনালির সঙ্গে এর আশপাশে অবস্থিত মাংসপেশিরও সাহায্য লাগে। কণ্ঠনালি সঠিক ও নিয়মের বাইরে ব্যবহার করা, অতি উচ্চৈঃস্বরে বা অতিরিক্ত কথা বলা, দীর্ঘমেয়াদি বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বললে কণ্ঠনালির প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা ভারী জিনিসকে ঠিকভাবে না ওঠানোর জন্য পিঠে ব্যথা হওয়ার মতো। গলা ও স্বরযন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন এবং কথা বলার সময় ঠিকভাবে শ্বাস না নিলে শ্বাসযন্ত্রের অবসাদ হয়, কথা বলতে কষ্ট হয়। ফলে কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং কণ্ঠনালিতে পলিপ বা নডিউল, এমনকি রক্তক্ষরণও  হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link