জেনে নিন হজের প্রস্তুতিতে কি করবেন
ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতির কারণে কিছু হজযাত্রী সমস্যায় পড়ে থাকেন। কয়েকবার হজ পালন করেছেন, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছুটা ধারণা থাকলে, সচেতন হলে অনেক সমস্যা দূর করা যায়। পাঠকের সুবিধার্থে তাঁদের কিছু পরামর্শ—
১. সব ধরনের খরচ সম্পর্কে ধারণা রাখা: টাকা কম-বেশির ভিত্তিতে নয়, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে চুক্তি করবেন। উড়োজাহজাভাড়া, বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে বা আজিজিয়ায় থাকা কিংবা না-থাকা ইত্যাদি আগে থেকে জেনে নিতে হবে।
২. হজ প্যাকেজ: হজ প্যাকেজ কত দিন, সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে। গত কয়েক বছর কত নম্বর মোয়াল্লেমের অধীন ওই এজেন্সি হজ পালন করছে, তা জানতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশের জন্য ১ থেকে ১১৫টি মোয়াল্লেম রয়েছে। মোয়াল্লেম ক্লাস্টারের দাম অনুযায়ী জামারা (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) থেকে মিনার তাঁবুর দূরত্ব নির্ভর করে। মোয়াল্লেম অতিরিক্ত সেবা খরচ দিয়ে কী কী সেবা পাবেন, তা লিখিত নিন। এটা নিয়ে মিনায় বির্তক হয়।
Also Read: মক্কা–মদিনা ছাড়া সর্বত্রগামী দজ্জাল
৩. মক্কা-মদিনায় বাসার অবস্থান: মক্কায় বাসার ধরন ও তা কাবা শরিফ থেকে কত দূরে, বাসায় লিফট আছে কি না, বাসার প্রতি কক্ষে কতজন এবং বাথরুম কতজনের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে, জেনে নেবেন। একই কথা মদিনার বাসার জন্য প্রযোজ্য।
৪. খাবার: সৌদি আরবে পৌঁছে তিন বেলা খাবার দেওয়া হবে কি না বা বিকল্প ব্যবস্থা কী, তা জানতে হবে।
৫. কোরবানি: প্রতারণা এড়াতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির কুপন কিনে দেওয়া ভালো। এর বাইরে নিজে অথবা এজেন্সির লোক ছাগল কিনে কোরবানি দেবেন অথবা কোরবানি সম্পর্কে হাজি কীভাবে নিশ্চিত হবেন, তা-ও আগে থেকে জেনে নিতে হবে।
৬. মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা: হজের সফরে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। চাইলে যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। এটাও মাথায় রাখা। ওমরায় তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, জামারায় পাথর মারা, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ, সাঈ করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি।
৭. ফিতরা: ফিতরা বা স্থানান্তর (অর্থাৎ মক্কায় বাসা কাবা শরিফের কাছে-দূরে একাধিকবার বদল করাকে ফিতরা বলে) আছে কি না। হজের আগে না পরে ফিতরা হবে, তা জানতে হবে।
৮. হজের দিনগুলো: মিনা, আরাফায় খাবার, যাতায়াত, মক্কায় তাওয়াফ, সাঈ করতে যাওয়ার বিষয়ে কী ব্যবস্থা এবং মোয়াল্লেম কী কী সুবিধা দেবেন, তা-ও বিস্তারিত জেনে নেবেন। আপনার সঙ্গী অসুস্থ বা দুর্বল হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জেনে নিতে হবে।
৯. হজের নিয়মকানুন জানা: প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক, হজ গাইড সংগ্রহ করে পড়ুন।ওয়েবসাইটে হজের খবর সারা বছর পাওয়া যায়। ১৪ বছর ধরে প্রথম আলো হজযাত্রীদের সহায়ক হজ গাইড প্রকাশ করে বিনা মূল্যে বিতরণ করছে। এটি প্রথম আলোর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
১০. ঘোষিত হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজে গেলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনোভাবেই মধ্যস্বত্বভোগী, দালাল বা তথাকথিত মোয়াল্লেমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন না। কোন কোন এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ রয়েছে, তা যাচাই করুন।
হজ সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন সার্কুলার ও নির্দেশনার খোঁজ খবর রাখুন এ ওয়েব সাইট থেকে www.hajj.gov.bd
বিগত হাজীদের কাছ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি হজ এজেন্সির সেবা সম্পর্কে মতামত নিন (ঢাকায় হজ মেলায় যেতে পারেন)।
বেসরকারি বিভিন্ন হজ এজেন্সির খোঁজ নিন এবং প্যাকেজ সম্পর্কে জানুন।
নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার থেকে যারা হজে যাবেন তারা কম দামি হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না, কারণ সস্তার তিন অবস্থা।
আর ধনীরাও ৫/৪ তারকা হোটেলের হজ প্যাকেজে প্রলুব্ধ হবেন না। কারণ, এটা হলিডে ট্যুর নয়।
অঅনুমোদিত হজ এজেন্সি থেকে সতর্ক থাকুন। কারণ, এতে আপনি প্রতারিত হতে পারেন।
সরকারি ব্যবস্থাপনা অথবা সরকার অনুমোদিত কোনো একটি বেসরকারি হজ এজেন্সি যারা গোড়ামি ও ভ্রান্ত আকীদা মুক্ত বিজ্ঞ হকপন্থী আলেম দ্বারা পরিচালিত তাদের হজ প্যাকেজ বেছে নিন। আপনার হজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের হজ সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ও সেবার লিখিত বিবরণ রাখুন এবং তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ১৫ কপি পাসপোর্ট সাইজ ও ১০ কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি করুন।
হজ ফরম পূরণ করুন এবং হজ চুক্তি স্বাক্ষর করে এর মূল কপি ও একটি করে ফটোকপি রেখে দিন।
সরকারি অথবা বেসরকারি হজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিয়ে এজেন্সির অফিস থেকে পাকা জমা রশিদ সংগ্রহ করুন।
সবচেয়ে ভালো হয় আগেভাগেই কম দামে কিছু সৌদি রিয়াল কিনে নেওয়া।
জানাযা সালাত কিভাবে পড়তে হয় ও জানাযার সালাত-এর দো‘আ শিখে নিন।
হজে যাওয়ার আগে মহিলাদের মসজিদে সালাত আদায়ের নিয়ম-কানুন শিখে নেওয়া ভালো।
আপনি যদি চাকুরিজীবি হন, তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করুন।
লিফট ও এস্কেলেটরে চড়ার অভ্যাস করুন।
হজে যাওয়ার জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
মনিংজাইটিস টিকা নিতে হবে, ঢাকার হজ ক্যাম্প থেকেও নেওয়া যাবে।
বয়স ৪০/৪৫ এর নিচে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে থাকে সাধারণত।
কিছু হজ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিন এবং হজ প্রশিক্ষণ ভিডিও দেখুন।
সৌদি আরবের টিভি চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে নববি ও কাবা শরিফে তাওয়াফ সম্প্রচার করে, সম্ভব হলে ওই সব চ্যানেল দেখলে আগে থেকে ওমরাহ, তাওয়াফ, মসজিদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
সম্ভব হলে নিজের পাসপোর্ট নিজে করান। কাউকে দিয়ে করালেও আপনার নাম-ঠিকানা পাসপোর্টে ঠিক আছে কি না, যাচাই করে নিন।
হজসংক্রান্ত নিয়মকানুন জানুন। প্রয়োজনে যাঁরা হজে গেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করুন।