কিভাবে, কত সময়ে ইস্তেখারার ফল পাবেন?

নতুন কোনো কাজ করার আগে মুমিন মুসলমানের জন্য ইস্তেখারা করা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। এটি একটি সুন্নাত পদ্ধতি। ইসলামের নির্দেশনাও এমন যে, কোনো নতুন কাজ করার আগে ইস্তেখারা করে নেয়া। তবে ইস্তেখারা সম্পর্কে সমাজে একটি ভুল বিষয় প্রচলিত রয়েছে যে, ইস্তেখারার ফলাফল স্বপ্নেই পাওয়া যাবে। আসলে কি তাই?

 

‘না’, ইস্তেখারার বিষয়টি আসলে তা নয়। বরং স্বপ্নেও পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। ইস্তেখারা সম্পর্কে রয়েছে ইসলামের সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। তাহলো-

 

ইস্তেখারার মূল দৃষ্টিভঙ্গি

 

ইস্তেখারার মাধ্যমে নতুন কাজ করা কিংবা না করা সম্পর্কে শুধু স্বপ্নেই সমাধান আসবে বা স্বপ্ন দেখেই তা সুস্পষ্ট হওয়া যাবে। মূলত বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো

 

‘ইস্তেখারা করে ঘুমিয়ে পড়া। অতপর স্বপ্নে ইস্তেখারার বিষয়টি সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে আবার নাও যেতে পারে। তবে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর নতুন কাজটি করা বা না করার ক্ষেত্রে (ইস্তেখারাকারীর) মন যেদিকে সায় দেবে বা বেশি সায় দেবে; সেদিকেই আগ্রহী হয়ে ওঠা হলো ইস্তেখারার ফল। আর সেই বিষয়টিকে ইস্তেখারার সঠিক ফলাফল ভেবে মেনে নেয়া।’

 

ইস্তেখারার নির্দেশ ও দোয়া

 

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরুত্বসহকারে ইস্তেখারা করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আবার ইস্তেখারায় কোন দোয়া পড়তে হয়। কখন পড়তে হয় তাও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

 

হজরত জাবের ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে কুরআনের সুরা শেখাতেন; ঠিক সেভাবে (গুরুত্বের সঙ্গে) প্রতিটি কাজে আমাদের ইস্তেখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) করার শিক্ষা দিতেন।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরজ নামাজ ছাড়া দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে নেয়। অতপর (এই) বলে (দোয়া করে)-

 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ

 

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাখিরুকা বিইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিমি ফাইন্নাকা তাকদিরু ওয়া লা আকদিরু ওয়া তালামু ওয়া লা আলামু ওয়া আংতা আল্লামুলগুয়ুবি; আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তালামু আন্না হাজাল আমরা খাইরুন লি ফি দ্বীনি ওয়া মায়িশাতি ওয়া আক্বিবাতি আমরি ফি আঝিলি আমরি ওয়া আঝিলিহি ফাইয়াসসিরহু লি ছুম্মা বারিক লি ফিহি ওয়া ইন কুনতা তালামু আন্না হাজাল আমরা শাররু লি ফি দ্বীনি ওয়া মায়িশাতি ওয়া আক্বিবাতি আমরি ফি আঝিলি আমরি ওয়া আঝিলিহি ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আনহু ওয়াক্বদুরলিয়াল খাইরা হাইছু কানা ছুম্মা আরদ্বিনি বিহি।’

 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোনো জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে ও সম্যকভাবে জানো।

 

হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক থেকে অথবা আমার দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে ভালো মনে কর; তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও।

 

পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক থেকে অথবা আমার ইহকাল-পরকালের ব্যাপারে ক্ষতিকর মনে কর; তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। আর আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। যেখান থেকে তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও।’

 

অতপর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অথবা রাবী বলেন, (এ কাজটির স্থলে) প্রার্থনাকারী যেন নিজের (কাঙ্ক্ষিত) কাজের নাম স্মরণ করে।’ (ইবনে মাজাহ)

 

নতুন কাজের কাঙ্ক্ষিত সমাধান কিংবা শুভ ইঙ্গিত লাভে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে উল্লেখিত দোয়াটি পড়ে ঘুমিয়ে পড়া। অতপর স্বপ্নে কোনো সিদ্ধান্ত পেলে তো আলহামদুলিল্লাহ! ভালো; আর না পেলে ঘুম থেকে ওঠার পর মন যেদিকে বেশি টানে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হবে ইস্তেখারার ফল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *