ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

মহানবী ( সা:) কে নিয়ে কটুক্তি করার শাস্তি

পৃথিবীর যেকোনো ভূখণ্ডে শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে মুসলমানদের ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ, তাদের নবী ও সাহাবিদের সম্মান রক্ষার্থে কঠোর আইন অত্যাবশ্যক। অন্যথায় কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটালে মুসলমানরা রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ও ক্রোধে ফেটে পড়বে। শুরু হবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। সূত্রপাত ঘটবে মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনার। বিপর্যস্ত হবে মানবতা, ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।

কোরআনের আলোকে নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননাকারীর শাস্তি

 

(১) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ওপর লানত করেছেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন এমন শাস্তি, যা লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। (আহজাব-৫৭)

 

(২) তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা তো হাসি-তামাশা ও ফুর্তি করছিলাম। বলো, তোমরা কি আল্লাহ, আল্লাহর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে ফুর্তি করছিলে? (সুরা তাওবা-৬৫)

(৩) অজুহাত দেখিও না। তোমরা ইমান জাহির করার পর কুফরিতে লিপ্ত হয়েছ। আমি তোমাদের মধ্যে এক দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে অবশ্যই শাস্তি দেব। কেননা তারা অপরাধী। (সুরা তাওবা-৬৬)

 

অর্থাৎ মোনাফিকদের মধ্যে যারা তাওবা করবে, তাদের ক্ষমা করা হবে। আর যারা তাওবা করবে না, তারা অবশ্যই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।

 

(৪) তারা কি জানে না, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করলে সিদ্ধান্ত স্থির রয়েছে যে তার জন্য জাহান্নামের আগুন, যাতে সে সর্বদা থাকবে, এটা তো চরম লাঞ্ছনা! (তাওবা-৬৩)

(৫) আর যে ব্যক্তি তার সামনে হেদায়েত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করবে ও মুমিনের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সে পথেই ছেড়ে দেব, যা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা। (নিসা-১১৫)

 

হাদিসের আলোকে নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননার শাস্তি

READ MORE:  ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

 

(১) আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (সা.) এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিককে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত।

 

(২) হজরত ইকরামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আলী (রা.)-এর খিদমতে কয়েকজন জিনদিককে (ধর্মদ্রোহী) উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ খবর হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতাম না। রাসুল (সা.)-এর নিষেধ থাকার কারণে। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিও না। তবে অবশ্যই আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করবে তাকে হত্যা করো। (বোখারি, জামউল ফাওয়ায়েদ ১/৪৮৪)

 

জিনদিক ওই সব মোনাফেককে বলা হয়, যারা রাসুল (সা.)-এর জামানার পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ওপরে ওপরে নিজেকে মুসলমান প্রকাশ করবে; কিন্তু তার অন্তরে থাকবে না ইমানের লেশমাত্র।

 

(৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)

 

(৪) মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওমর (রা.)-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসুল (সা.)-কে গালি দিয়েছে। হজরত ওমর (রা.) তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (আসসারিমুল মাসলুল-৪/৪১৯)

 

(৫) আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব ওই ব্যক্তি, যে ইমান আনার পর কুফরি করে। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)

READ MORE:  কাফনের কাপড় : মাপ, পড়ানোর নিয়ম

 

(৬) ওই জাতির ওপর আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হোক, যারা রাসুল (সা.)-এর চেহারা মোবারককে আহত করে। (কানজুল উম্মাল ৫/২৬২)

 

নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননাকারীর শাস্তির ব্যাপারে ফকিহগণের মতামত

 

নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

খুলাসাতুল ফতাওয়া গ্রন্থে আল্লামা তাহের বোখারি (রহ.) লিখেন, মুহিত নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে গালি দেয় বা নবী করিম (সা.)-এর ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বা তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে সমালোচনা করে, তাঁর কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে দোষত্রুটি চর্চা করে, সে ব্যক্তি নবীর উম্মত হোক বা অন্য কোনো নবীর উম্মত, মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রিত কাফের হোক বা শত্রু কাফের, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, গালি, অবমাননাকর মন্তব্য, বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছায়, বুঝে-শুনে হোক বা অসাবধানতাবশত- সর্বাবস্থায় সে চিরস্থায়ী কাফির বলে সাব্যস্ত হবে। তার এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য বলে ধার্য হবে- এপার-ওপার উভয় আদালতে।

 

নবী করিম (সা.)-এর সমালোচনাকারী, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকারী, ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারী সাধারণ মুরতাদের মতো নয়, যে ধর্ম ত্যাগ করল সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। অন্য কারো জন্য ক্ষতিকারক নয়। এ কারণে সে তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য ও সাজা মাফ হওয়ার অবকাশ রয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর শানে বেয়াদবি করবে, সমালোচনা করবে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে, সে সাধারণ অপরাধী নয়, সে তো বিশ্বমানবতার শান্তির দূত রাহমাতুললিল আলামিনের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে, যা গোটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। তাই তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়।

 

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত- নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারী কাফির ও তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই।

 

আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হলো, নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড।

READ MORE:  লুঙ্গি পড়ে নামাজ হবে কি?

 

ইমাম আবু বকর আল ফারেস (রহ.) বলেন, সব মুসলমানের ঐকমত্য হলো- নবীর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই।

 

কাজি আয়াজ (রহ.) বলেন, গোটা উম্মতের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো, কোনো ব্যক্তি যদি নবীর শানে বেয়াদবি করে, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, গালি দেয় তাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

 

আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, নবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে আমার জানা নেই।

 

ওপরে উল্লিখিত কোরআন ও হাদিস, ফুকাহাগণের মতামত থেকে এ কথা স্পষ্ট যে-

 

১। রাসুল (সা.)-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে।

 

২। তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই।

 

৩। মৃত্যুদণ্ড প্রদানের দায়িত্ব শাসকদেরই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *