ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

ইসলামে সিঙ্গা লাগানো হারাম ( Haram)?

কাপিং থেরাপি (Cupping therapy)। Toxin। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। Mohanobi Hazrat Muhammad ( S.)। Singa lagano। Islam। Legal?। Halal । Haram । Islam। Muslim। Allah। Sunnah। Quran । Hadith

 

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় কাপিং থেরাপি (Cupping therapy)কে আমাদের দেশে সাধারণ অর্থে একে ‘শিঙ্গা লাগানো’ বলা হয়। আরবিতে একে বলা হয় ‘হিজামা’। আরবি ‘আল হাজম’ থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় সুচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত (Toxin) বের করে আনা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশিগুলোর রক্তপ্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশি, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভেতরের অরগানগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশিত একটি চিকিৎসাব্যবস্থা।

 

কাপিং থেরাপি কী ও কেন?

 

কাপিং থেরাপি একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে স্থানিক রক্তাধিক্য তৈরি করা হয়। কাপের  ভেতরে আংশিক বায়ুশূন্যতা সৃষ্টি করে ত্বকের ওপর তা বসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নেগেটিভ পাম্প ব্যবহার করে কাপের ভেতর বায়ুশূন্যতা তৈরি করা হয়। এটা ত্বকের নিচের টিস্যুতে টান দেয়। ত্বকের ওপর কয়েক মিনিট কাপ বসিয়ে রাখলে কাপের নিচে রক্ত কেন্দ্রীভূত হয়।

 

দেহের মেরিডিয়ানকে (নালিগুলো) প্রতিবন্ধকতামুক্ত করার জন্য কাপিং থেরাপি বর্তমানে উন্নত করা হয়েছে। মেরিডিয়ান হলো দেহের অভ্যন্তরের নালি, যার ভেতর দিয়ে দেহের প্রতিটি অংশে, প্রতিটি অঙ্গে ও টিস্যুতে শক্তি প্রবাহিত হয়। দেহের অভ্যন্তরের মেরিডিয়ান নালিগুলো বন্ধ হলে রোগ ও অসুস্থতা ঘটে। এই বন্ধ নালিগুলো মুক্ত করলে রোগমুক্তি দ্রুততর হয়। আমাদের পিঠে পাঁচটি নালি আছে। যখন এগুলো মুক্ত থাকে, তখন তারুণ্য শক্তি সারা দেহে প্রবাহিত হয়। সম্ভবত কাপিংই হলো শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মেরিডিয়ানগুলো মুক্ত করা যায়। এটি আরবি হিজামার আধুনিক রূপ।

হিজামা হলো এমন প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বিদ্যমান। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিব্রাইল (আ.) আমাকে জানিয়েছেন যে মানুষ চিকিৎসার জন্য যত উপায় অবলম্বন করে, তার মধ্যে হিজামাই হলো সর্বোত্তম।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৪৭০)

READ MORE:  সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ surah falaq bangla

 

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করেছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, ‘হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন’।’’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ২০৫৩)

 

উচ্চ রক্তচাপ রোধে হিজামা বা শিঙ্গা পদ্ধতি খুবই কার্যকর। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৪৮২)

হিজামা দূষিত রক্ত টেনে বের করে আনে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হিজামা গ্রহণকারী কতই উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদণ্ড শক্ত করে এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ২০৫৩)

 

মহানবী (সা.)-এর যুগে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল না। সে সময়ের মানুষেরও অসুখ হতো। তারা প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করত। প্রাকৃতিক চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। এগুলো হলো—শিঙ্গা লাগানো, মধু পান করা ও আগুন দিয়ে গরম সেঁক দেওয়া। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৮১)

 

কাপিং থেরাপি নানাভাবে কাজ করে। ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ব্যথা সহ্য করতে হবে আপনাকে।

 

বেস্টর ইউনিভার্সিটি অব ওয়শিংনের আকুপাংচার ও ওরিয়েন্টার মেডিসিনবিষয়ক সহকারী অধ্যাপক ক্যাথলিন লুমিয়ার বলেন, ‘ধারণা করা হয়, এই থেরাপি রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।’

 

কারো কারো মতে, এই হিজামা বা কাপিং থেরাপির ইতিহাস আরো প্রাচীন। অন্তত তিন হাজার বছর ধরে এশিয়ায় চীনা পদ্ধতিতে শরীরের ওপর কাচের কাপ দিয়ে দেওয়া এই প্রাকৃতিক থেরাপি প্রচলিত আছে। অ্যাসোসিয়েট প্রেস জানায়, এ ধরনের পদ্ধতি চীনে খুব জনপ্রিয়। এমনকি ইউনান প্রদেশে রাস্তায় বসে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগ্রহী প্রার্থীরা এই সেবা নিয়ে থাকেন। বিজনেস ইনসাইডারের মতে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই থেরাপি ব্যথা, পিঠের সমস্যা ও সাধারণ অনেক সমস্যার সমাধান করে।

READ MORE:  কেন প্রথম কাতারের সালাত এত গুরুত্বপূর্ণ?

 

হিজামার মাধ্যমে ব্যাকপেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, মাথাব্যথা (মাইগ্রেন), ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, আর্থ্রাইটিস, বাত, ঘুমের ব্যাঘাত, থাইরয়েডের ব্যাঘাত, স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, অর্শ, অণ্ডকোষ ফোলা ও ফোড়া-পাঁচড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ হয়। হিজামার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, শরীর সতেজ হয় ও কর্মস্পৃহা বাড়ে।

 

বাংলাদেশে ধানমণ্ডিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক পদ্ধতিতে কাপিং থেরাপি দেওয়া হয়। তবে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বল্পমূল্যে শিঙ্গা লাগানোর ব্যবস্থা এখনো আছে। বেদে সম্প্রদায় গরুর শিং দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিঙ্গা লাগিয়ে থাকে। বেদে সমাজ বেশ কিছু গোত্রে বিভক্ত। এ বিভক্তি তাদের জাতিপেশা ভিত্তি করে। বেদেদের আটটি প্রধান গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম হলো ‘মাল বেদে’। মাল বেদেগোষ্ঠীর নারীরা মাজা, কোমর, হাঁটু, কনুই বা পিঠের ব্যথায় ওই সব স্থানে শিঙ্গা দিয়ে রক্ত টেনে বের করে ব্যথা নিরাময় করে। এ ছাড়া এই গোষ্ঠীর বেদেনীরা দাঁতের পোকা তুলে দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা করে। মাল বেদেদের নারীরা কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া ছাড়া বিভিন্ন ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ দিয়েও মানুষের চিকিৎসা করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *