স্বাস্থ্য

পর্ণগ্রাফি দেখার ক্ষতিকর দিক এবং পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায়

বর্তমান সময়ে যুব সমাজ যে সকল আসক্তিতে নিমজ্জিত পর্ণগ্রাফি তার অন্যতম। পর্ণগ্রাফি এর অর্থ হচ্ছে, নগ্ন আলোকচিত্র যা যৌন সঙ্গমের অনুভুতি জাগায়। এর দরুন ব্যক্তি শুধু শারীরিক নয় মানসিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই আমাদের আজকের বিষয় পর্ণগ্রাফি দেখার ক্ষতিকর দিক এবং পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায়

 

যে কারণে পর্ণ আপনার দেখা উচিত নয়

পর্ণগ্রাফি মানুষকে মানষিক ও শারিরীকভাবে ভারসাম্যহীণ করে দেয়। নিচে পর্ণগ্রাফির  ৬টি ভয়াবহ ক্ষতিকর পরিণতি তুলে ধরা হলো। নেক্সট টাইম যখন আপনার পর্ণ ফিল্ম দেখতে ইচ্ছে করবে, এই কথাগুলো নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন।

 

১)  পর্ণ আপনার স্মরনশক্তি কমায়, আপনার মধ্যে ডিপ্রেশন তৈরী করে:

মনোবিজ্ঞানীরাও গবেষনায় দেখেছেন যে পর্ণ মানুষের স্মরনশক্তি কমিয়ে দেয়, চিন্তাশক্তি হ্রাস করে, অমনোযোগী করে, ডিপ্রেসড করে দেয় এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জার্মানির ডুইবার্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডক্টর ক্রিস্টিয়ান লেয়ের ২৬ বছর বয়সী ২৮জন মানুষের উপর পর্ণ ছবি দেখার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন [১৩]। তিনি গবেষনায় পেয়েছেন – পর্ণ দেখার শর্ট-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে এদের স্মৃতিশক্তি কমেছে এবং মনোযোগী হবার ক্ষমতা কমেছে। এছাড়া অন্য গবেষনায় পর্ণ দেখার লং-টার্ম ইফেক্ট হিসাবে ডিপ্রেশন, সামাজিকভাবে ব্যর্থতা ও একাকিত্ব থাকার প্রবণতা পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

 

২) পর্ণ আপনার মানবিক অনুভূতিকে নষ্ট করে ফেলে:

পর্ণ আপনাকে শেখায় মেয়েরা মানুষ নয়, শুধুই উপভোগের বস্তু। পর্ণ দেখার ফলে আপনি রাস্তা-ঘাটে, অফিসে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যখনই কোন মেয়েকে দেখেন তখন চিন্তা করেন না তারও একটা জীবন আছে, আশা-আকাংক্ষা আছে, দু:খ-কষ্ট-আনন্দ-ভালোবাসার অনুভূতি আছে, আপনি শুধু চিন্তা করতে থাকেন এই মেয়েটার মধ্যে উপভোগ করার মত কি আছে। একটা মেয়ে রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গেলে আপনি চিন্তা করেন না মেয়েটা ব্যাথা পেয়েছে কি না, তাকে উদ্ধার করা যায় কি না, বরং আপনি চিন্তা করেন তার শরীরের কোনও অংশ উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে দেখা যায় কি না।একটি মেয়েকে তার সততা, মেধা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে বিচার না করে আপনি তাকে বিচার করেন তার শরীরের বিশেষ কিছু স্থানের আকার-আকৃতি দিয়ে। পর্ণ মুভি আপনাকে শেখায় যে ক্লাসের বন্ধু, অফিসের কলিগ থেকে শুরু করে সবার সাথেই শারিরীক সম্পর্ক গড়া যায় – এভাবে পর্ণ আপনাকে অবৈধ সম্পর্ক গড়তে উৎসাহিত করে। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে যে গড়ে ৬৮% বিবাহ বিচ্ছেদ হয় অনলাইন পরকিয়ার কারণে।

 

৩) পর্ণগ্রাফি আপনাকে ভালবাসার বিকৃত সংজ্ঞা শেখায়:

আপনি যখন পর্ণ মুভি দেখেন তখন আপনি নিজের অজান্তেই অনুভূতিহীন, নিষ্ঠুর, স্বার্থপর মানুষে পরিণত হন। কারণ, পর্ণ মুভিগুলোতে মানুষের ভালো-লাগা, ভালোবাসা, দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ কোন অনুভূতিকেই দেখানো হয় না, শুধু দেখানো হয় “পেনেট্রেশন”। অথচ বাস্তব জীবনে আপনি আপনার সঙ্গীকে আদর-সোহাগ করবেন, গল্প-গুজব করবেন, আড্ডা মারবেন, ঘুরতে যাবেন – এগুলো সবই একটা সুস্থ ভালবাসাময় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্ন মুভি আপনার হৃদয় থেকে ভালোবাসার সেই অনুভূতিকে কেড়ে নেয়, নষ্ট করে দেয়। পর্ণ মুভি আপনাকে এভাবে প্রোগ্রাম করে ফেলে যে আপনি বিশ্বাস করা শুরু করেন যে ভালবাসার অপর নাম পেনেট্রেশন। আমেরিকায় এক জরিপে দেখা গেছে ডিভোর্স হওয়া দম্পতিদের ৫৬% ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর একজন পর্ণ আসক্ত।

অনেক তরুণ মনে করে – “এখন তো আমার বয়স কম, এখনো বিয়ে করিনি, এখন পর্ণ দেখি, বিয়ের পর আমি এগুলো দেখা ছেড়ে দিব”। কিন্তু, পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা – দেখা গেছে তরুন বয়সে পর্ণ দেখা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়, বিয়ের পরেও তাদের বেশীরভাগই পর্ণ দেখা ছাড়তে পারে না। কাজেই – আমি এখনো বিয়ে করিনি, তাই পর্ণ দেখব – এটা পর্ণ দেখার জন্য কোনও অজুহাত হতে পারে না।

 

৪) পর্ণ আপনাকে অক্ষম করে দিতে পারে:

গবেষনায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত পর্ন ভিডিও দেখলে আপনার উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। এর কারণ হলো – আজকালকার পর্ণ গুলো ধারণ করা হয় হাই ডেফিনিশন ক্যামেরায়, এইসব ক্যামেরায় মেয়েদের শরীরকে এত নিঁখুতভাবে ও জুম করে দেখানো হয় যে বাস্তবে আপনার সংগীকে আপনি এভাবে দেখতে পারবেন না, ফলে সহজে উত্তেজিত হবেন না। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটা পর্ণ মুভি আপনার সামনে নিয়ে আসে নতুন নতুন পর্ণ মডেল, নতুন নতুন লোকেশন আর নতুন নতুন কাহিনী। আপনার ব্রেইন ক্রমেই এই নতুনত্বে অভ্যস্ত হয়ে যায়, পুরনো কিছু তখন আর আপনাকে সহজে উত্তেজিত করতে পারে না। এর ফলে, এরকম ঘটতে পারে যে আপনি কিছুতেই আর আপনার স্ত্রীকে দেখে উত্তেজিত হবেন না। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই অক্ষমতা এমন আকার ধারণ করে যে তারা শুধু পর্ণ মুভি দেখেই উত্তেজিত হতে পারে, এমন কি ভায়াগ্রার মতো শক্তিশালী ওষুধেও তাদের কোন কাজ হয় না। এই সমস্যাকে ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন বলে এবং গবেষনায় দেখা গেছে যারা কিশোর বয়সে পর্ণ দেখা শুরু করে (বিশেষ করে ১২ বছর বয়সের পূর্বে) তাদের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট।

তবে আশার কথা এই যে, ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে আবার সক্ষম হওয়া সম্ভব। গবেষনায় দেখা গেছে কোনও ব্যক্তি টানা তিন মাস পর্ণ মুভি না দেখলে ও স্বমেহন না করলে তার ব্রেইন আবার আগের প্যাটার্নে ফিরে আসে, ফলে সে ডিজিটাল মিডিয়ার বাইরে মেয়েদেরকে দেখেও উত্তেজিত হতে পারে। ভেবে দেখুন – ব্রেইনের এই নিজে নিজে সেরে উঠার ক্ষমতা আল্লাহর তরফ থেকে কত বড় রহমত! আপনি বছরের পর বছর তাঁর অবাধ্যতা করার পরেও মাত্র তিন মাস নিজেকে সংযত রাখলে আল্লাহ্‌ আবার আপনাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন।

 

৫) আপনি যখন পর্ণ দেখেন, আপনি প্রস্টিটিউট তৈরী করেন:

আপনি কি মনে করেন যারা পর্ণ মডেল হয়েছে তারা সবাই নিজের ইচ্ছাতেই পর্ণ মুভিতে এসেছে? মোটেই না। এদের অনেককেই লোভনীয় চাকুরী, ফ্রি-ট্যুর সহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শুটিং স্পটে নিয়ে আসা হয়। তারপর অনেক টাকার লোভ দেখিয়ে, রঙ্গিন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে পর্ণ মুভিতে অভিনয় করানো হয়। আমেরিকাতে সাধারণ কাজে ঘণ্টায় যত টাকা পাওয়া যায়, পর্ণ মুভির জন্য প্রতি ঘন্টায় তার ২০গুণ টাকা দেয়া হয়। টাকার লোভে পড়ে কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা পর্ণ মুভিতে নাম লেখায়, আর এভাবে করেই প্রস্টিটিউট হয়ে যায়।

মানুষ নতুন নতুন পর্ণ মডেল দেখতে পছন্দ করে। আর তাই পর্ণ মুভির প্রডিউসাররাও নিত্য-নতুন প্রলোভন দেখিয়ে নতুন নতুন মেয়েদেরকে প্রস্টিটিউশনের জগতে নিয়ে আসে। আপনি যে মেয়েটাকে পর্ণ-মুভিতে  হাসতে দেখছেন, আনন্দে-উচ্ছ্বাসে ডুবে যেতে দেখছেন – কম্পিউটার বন্ধ করে দিলেই আপনার তাকে দেখতে হয় না, কিন্তু আপনার সামনে সে যাতে পরের মুভিতেও আসতে পারে তার জন্য কিন্তু তাকে প্রস্টিটিউট হিসাবেই থেকে যেতে হয়। আপনি আপনার কম্পিউটারের সামনে বসে নিত্য-নতুন পর্ণ মডেল দেখার জন্য যে ক্লিক করছেন, সে ক্লিকের ডিমান্ড মেটানোর জন্য পর্ণ মুভির প্রডিউসারকে ক্রমাগত নতুন নতুন মেয়ে জোগাড় করে সাপ্লাই দিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে করে, আপাত:দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হওয়া এই ক্লিকের কারণেই বিশ্বজুড়ে পর্ণ ব্যবসার পালে হাওয়া লাগছে, আর এর সূত্র ধরে নতুন নতুন মেয়ে প্রতিদিন প্রস্টিটিউট হয়ে উঠছে।

আর যে সব পর্ণ মুভি গোপনে ধারণ করা হয়, এগুলো যে কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে, কত মেয়ে এগুলোর জন্য আত্মহত্যা করেছে – তার ইয়ত্তা নেই। ভেবে দেখুন – কেউ যদি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও না দেখত, তাহলে কেউ এগুলো বানাতোও না, ফলে এই ভিডিওগুলোর জন্য কোনও মেয়ের জীবনও নষ্ট হতো না।

 

৬) সব কিছু আমলনামায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে:

মনে রাখবেন, আপনি একা ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে যা করছেন তা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ্‌ দেখছেন, আর ফেরেশতারা তা লিখে রাখছে এক পরিষ্কার গ্রন্থে। আল্লাহ্‌ যদি এখনো আপনার কুকর্ম মানুষের সামনে প্রকাশ না করে দিয়ে থাকেন – তাহলে বুঝবেন আপনাকে আল্লাহ্‌ তাওবাহ করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন। আপনি যদি তাওবাহ না করে মারা যান, তাহলে এই গ্রন্থের সবকিছু একদিন আপনার সামনে তুলে ধরা হবে, আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু সবাই আপনার আমলনামা দেখতে পাবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন – সেদিনের সেই লজ্জার সম্মুখীন কি আপনি হতে পারবেন?

 

 

পর্ণ-আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

এতক্ষণ বললাম পর্ণগ্রাফির খারাপ পরিণতি সম্পর্কে। আর এবার পর্ণ আসক্তি ছাড়ানোর জন্য ৪টি মাত্র টিপস দিচ্ছি:

 

১) ডিজিটাল মিডিয়ার কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না:

আপনি কম্পিউটারে যে পর্ণস্টারদের দেখেন, বা টিভিতে যে মডেল আর ফিল্মস্টারদের দেখেন – এরা সবাই হাজার হাজার ডলার এর সার্জারী করে, মেকাপ করে, স্পেশালিষ্ট এর অধীনে ব্যায়াম করে, মেকআপ করে তাদের শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিকে চকচকে করে তোলে মানুষের চোখে নিজেকে আকর্ষণীয়, আবেদনময়ী করে তুলতে। তার উপর আছে হাই-ডেফিনেশন ক্যামেরা, ফটোশপ আর অত্যাধুনিক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এর কারসাজী। এর ফলে আপনি কম্পিউটারে, টিভিতে, ফ্যাশন ম্যাগাজিনে যে মেয়েদেরকে দেখেন তারা নিঁখুত, পার্ফেক্ট। এমনকি আপনি চাইলে মিনিটির পর মিনিট, ঘন্টার পর ঘণ্টা ধরে এই পার্ফেক্ট ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন – বাধা দেয়ারও কেউ নেই। কিন্তু, বাস্তব জীবনের কোন মানুষই এরকম পার্ফেক্ট হয় না আর এরকম পিক্সেল বাই পিক্সেল জুম করে দেখাও যায় না। তাই, ডিজিটাল মিডিয়া আর বাস্তবতা এক নয়।

আপনি যতই আবেদনময়ী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, ততই আপনার শরীরে ডোপেমিন নামক হরমন নিঃসৃত হয়। এই হরমন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে নি:সৃত হলে আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আপনি যখন নিত্য-নতুন সুন্দর মেয়ে দেখতে থাকেন তখন আপনার আপনার শরীর নিজেকে এমনভাবে এডজাস্ট করে নেয় যাতে পরেরবার উত্তেজিত হতে আপনার আরো বেশী ডোপেমিন এর প্রয়োজন হয়, কারণ না হলে তো আপনি খুব সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়বেন। এমনকি আপনি যখন টিভিতে কোন আবেদনময়ী মডেলের এড দেখেন, বা ফেইসবুকে আপনার সুন্দরী বান্ধবীর ছবি দেখেন – তখনো আপনার ডোপেমিন নিঃসৃত হয়। ডিজিটাল মিডিয়ার মেয়েদেরকে আপনি যতই দেখবেন – বাস্তব জগতের একটি মেয়েকে বা আপনার স্ত্রীকে দেখে আপনার উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা ততই নষ্ট হতে থাকবে। আর তাই – ডিজিটাল মিডিয়ার মেয়েদের দিকে যত কম সম্ভব তাকান।

২) যদি তাকাতেই হয় তো চেহারার দিকে তাকান:

মেয়েদের দিকে যদি একেবারেই না তাকানো যায় তো সবচেয়ে ভালো। কিন্তু, বাস্তবতা হলো আমরা এখন যে জগতে বাস করি তাতে মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে, তাদের সাথে মেলা-মেশা না করে চলা যায় না। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আপনাকে খবর দেখতে হবে – খবর উপস্থাপন করে মেয়েরা,  আবার কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে পড়াশুনা করতে হয়, অফিসেও মেয়ে কলিগ থাকে, অনেক সময় নতুন ভালো মুভিও দেখতে ইচ্ছা করে, তাতেও নারী আছে – এমন অবস্থায় করণীয় কি? সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যেতে হবে? না, এভাবে জীবন চলবে না। যেটা করবেন সেটা হলো – যখনই কোন মেয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়বে তখন সরাসরি তার চেহারার দিকে তাকাবেন, শরীরের অন্য কোনো বিশেষ অংশের দিকে নয়। আর তাকানোর সময় নিজের নিয়তের দিকে লক্ষ্য রাখবেন, কিছুতেই যেন কোন শারিরীক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তার দিকে না তাকান, দুঃখ-কষ্ট-রাগ-ভালোবাসার অনুভূতিসম্পন্ন একজন মানুষের সাথে কথা বলছেন এভাবে তাকান।

আপনার মায়ের সাথে, স্ত্রীর সাথে, বোনের সাথে বা মেয়ের সাথে একজন বাইরের মানুষ যখন কথা বলে তখন আপনি তার থেকে যেরকম সুন্দর-শোভন-সাবলীল-সম্মানজনক আচরণ প্রত্যাশা করেন, তার চোখ যেখানে থাকবে বলে আপনি আশা রাখেন, অন্য একটা মেয়ের ক্ষেত্রে নিজের চোখটিও সেইভাবে নিয়ন্ত্রন করুন। মনে রাখবেন, আপনি যখন একটা মেয়ের দিকে তার অজান্তে কামনার দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছেন, আপনি তার অধিকার লঙ্ঘন করছেন।

৩) কিছুতেই নামাজ ছাড়বেন না: 

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন উপদেশ – কিছুতেই ১টি ওয়াক্তেরও নামাজ ছাড়বেন না। আর আপনি যদি নামাজী না হয়ে থাকেন – তো আজ থেকেই ৫ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করে দিন। কারণ, আল্লাহ্‌ বলেছেন – “নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল কাজ ও পাপাচার থেকে দূরে রাখে” (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)। এক ঘরে যেমন একইভাবে আলো আর অন্ধকার থাকে না, তেমনি একই হৃদয়ে একইসাথে নামাজ আর পর্ণগ্রাফি থাকতে পারবে না। একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ(সা) কে বললো – অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ(সা) জিজ্ঞেস করলেন – সে কি এখনো নামাজ পড়ে? সবাই বললো – হ্যাঁ, পড়ে। রাসূলুল্লাহ(সা) বললেন – সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

৪) নিয়মিতভাবে নফল রোজা রাখুন:

রোজা হচ্ছে ঢালস্বরুপ, যা কিনা আমাদেরকে পাপ কাজ থেকে দূরে সরে থাকতে সাহায্য করে। আমরা যখন রোজা রাখি তখন আমাদের পাকস্থলী ক্ষুধার্ত থাকে, ক্ষুধার্ত পাকস্থলি শরীরকে দুর্বল করে দেয়, এর ফলে আমাদের কামনা-বাসনাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই, কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ(সা) আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন রামাদানের রোজার বাইরেও বেশী বেশী করে নফল রোজা রাখতে।

রোজা রাখার রুটিন কেমন হবে? এর জন্যও সুন্নাহতে বিভিন্ন গাইডলাইন দেয়া আছে [১৪]। সবচেয়ে সহজ হলো – প্রতি আরবী মাসের মাঝের তিন দিন (১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) রোজা রাখা, এর চেয়ে আরেকটু কঠিন হলো – প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহষ্পতিবার রোজা রাখা, আর সবচেয়ে ভালো হলো দাউদ(আ) এর মতো রোজা রাখা – একদিন পর একদিন। এছাড়াও বছরের নিচের দিনগুলি রোজা রাখার জন্য বিশেষ বরকতময় –

  • রমজানের পরের মাস শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। রমজানের পর এই রোজাগুলি রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যায়।
  • আরাফাতের দিন বা যিলহজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখের (অর্থাৎ ঈদুল আযহার আগের দিনের) রোজা – যা কিনা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
  • যিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম ১০ দিনের রোজা – যা কিনা আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয় নফল ইবাদত।
  • আশুরা বা মহররম মাসের ১০ তারিখের রোজা – যা কিনা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়। এর সাথে মহররমের ৯ তারিখে রোজা রাখতে পারলে আরো ভালো।     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link