ইসলামইসলামিক বিষয়াদিস্বাস্থ্য

শরীয়ত ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে জেনে নিন মধু সম্পর্কে বিস্তারিত

মধু খাওয়ার উপকারিতাঃ

 

মিষ্টি যারা পছন্দ করেঃ যারা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করে মধু তাদের জন্য সুসংবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে। মধুতে রয়েছে ফ্রুক্টোজ। এ মিষ্টিজাতীয় ফ্রুক্টোজ মানুষের শরীরে ক্ষতি করে না। 

সুষম খাবারের বিভিন্ন উপাদানঃ মধুতে শর্করার ঘনত্ব এত পরিমিত পরিমাণে থাকে যে কোন জীবাণু একঘন্টার আগেই মরে যায়। এতে ভিটামিন এ, বি, সি আছে। এছাড়াও পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন রয়েছে মধুতে।

শরীর গরম রাখেঃ শীতের দিনে শরীর গরম রাখতে মধু কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে। কারণ একথা সর্বজনস্বীকৃত যে মধু শরীর গরম রাখে। 

এন্টিসেপটিক হিসেবে মধুঃ মধু একটি ন্যাচারাল লিকুইড। এটি এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ফলে ক্ষত বা ঘা শুকাতে মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

বাতের ব্যাথায় মধুঃ মিশরীয় এক চিকিৎসক রেমেটিক ফিভারে আক্রান্ত রোগীর শরীরে মৌমাছি ছেড়ে দিয়েছিলেন। মৌমাছি কামড় দেয়ার পর রোগ উপশমে হয়েছিল। সুতরাং বাতের ব্যথায় মৌমাছির কামড় দিলেও তা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

প্রদাহ প্রতিরোধকঃ গবেষণায় দেখা গেছে যে, মধুতে যে এন্টিঅক্সিডেন্টস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে তা প্রদাহ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। 

 

গরম পানির সাথে মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতাঃ ৪২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নিচের তাপমাত্রায় কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে নানাবিধ উপকার হয়। 

১. একটু কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যাথা, ঠান্ডা, জ্বর কমে যায়। 

২. দারুচিনির পেস্ট এবং কুসুম গরম পানির সাথে মধু নিয়মিত খেলে জয়েন্টের ব্যথার প্রকোপ কমে যায়। 

৩. নিয়মিত এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এলার্জির প্রকোপ কমে যায়। 

 

মধু খেলে ওজন বাড়েঃ আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ টেবিল চামচ মধুতে ১৭.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। নিয়মিত মধু খেলে মধুর এ কার্বোহাইড্রেট গুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে সমানভাবে বিভক্ত হয়ে যায় এবং দেহ কোষ ও শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশিতে গিয়ে জমে থাকে।  দেহ থেকে সহজেই ঝরে যায় না। যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। 

READ MORE:  Maula Ya Salli Wa Sallim Lyrics Bangla

 

মধু খাওয়ার অপকারিতাঃ

খাঁটি পরিমিত মধু খাওয়ার তেমন কোনো অপকারিতা নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধু উপকারের থেকে অপকারই বেশি করে থাকে।

 

গরম মধু খাওয়ার অপকারিতাঃ  মধু বেশি গরম হয়ে গেলে তা একরকম বিষে পরিণত হয়। মিষ্টি জাতীয় কোন উপাদানে যখন তাপ দেওয়া হয় তখন ৫- হাইড্রক্সি মিথাইল ফুরফুরাল (এইচএমএফ) নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। তাই ৪২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার উপরে  থাকা মধু খাওয়া উচিত নয়। 

 

মধু বেশি খেলে কি হয়ঃ

মধুতে আছে ৫৩% ফ্রুক্টোজ যা ২৫ গ্রামের বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই দৈনিক ২৫ গ্রামের বেশি মধু খেলে শরীরে নানা রকম ক্ষতিকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ এলার্জি সমস্যা, হার্টবিটে অস্বস্তি, ক্লান্তি ও অবসাদ, জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি। 

 

খাঁটি মধু চেনার উপায়ঃ

১. এক চামচ মধু এক গ্লাস পানিতে ছেড়ে দিলে যদি তা পানির সাথে মিশে যায় তবে তা ভেজাল মধু। খাঁটি মধু পানিতে পিন্ডের সৃষ্টি করবে। 

২. ফ্রিজে রাখলে খাটি মধু জমে যাবে না। তবে প্রচুর চর্বিযুক্ত সরিষা ফুলের মধু জমে যেতে পারে। 

৩. মধুতে এক টুকরা কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে যদি আগুন জ্বলে ওঠে তাহলে তা খাঁটি মধু। আর যদি একটু জ্বলে ফোটা ফোটা চিনির পানি পড়ে তাহলে তা ভেজাল। 

৪. একটি সাদা কাপড়ে কিছু পরিমাণ মধু লাগানোর পর সেটি ধুয়ে দিলে যদি দাগ না থাকে তাহলে সেটি খাঁটি মধু। আর ধোয়ার পর দাগ থাকলে ভেজাল। 

 

মধু খাওয়ার পরিমাণঃ 

হাতের তালুর উপর পয়সা পরিমাণ মধু ঢেলে খেতে হবে। 

 

মধু কখন খেলে উপকার হয়ঃ

সকালে ও রাতে ভাত খাওয়ার পর মধু খেলে গ্যাস হবে না।

READ MORE:  বিয়েতে হচ্ছে এসব অদ্ভূত হারাম

 

মধু বিষয়ক হাদিসঃ

মিশকাত হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা দুইটি সেফা দানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও একটি মধু অপরটি কুরআন।”

 

সুতরাং মহানবী (সাঃ) আদেশ মোতাবেক, প্রত্যেক  ঈমানদার ব্যক্তিকেই  মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগেই মধু খেতে হবে। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *