গুহাচিত্রগুলো দেখতে একই রকম কেন?
অনেক গুহার দেয়ালে আগের মানুষের আঁকা নানা রকম ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবির বেশিরভাগই হলো বাইসন, হরিণ, ঘোড়া প্রভৃতি বড় বড় বন্যপশুর। বর্তমানে হাজার হাজার বছর আগের বহু গুহাচিত্র পাওয়া গেছে।
গুহাচিত্রগুলোকে সেই সেই সময়ে বন জঙ্গলে বসবাসরত সভ্যতার ছোয়া বিহীন মানুষের চিন্তাভাবনার প্রকাশ হিসেবে দেখা চলে। কিন্তু কেন প্রায় একই ধরনের ছবি আঁকা হতো? এর উত্তর খুব সহজ নয়। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এখনো স্থির কোনো মত পাওয়া যায়নি। গুহাচিত্র সম্পর্কে নানা রকম মত রয়েছে।
অনেকের মতে সেই সকল মানুষের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ক্ষমতা ছিল এবং অনেকে গুহার ভেতরে অনেক দূর ঢুকে নির্জন প্রান্তে দেয়ালে বা গুহার ছাদে নিবিষ্ট মনে ছবি আঁকতেন। তবে অনেকে অন্য রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বিশেষত তারা লক্ষ করেছেন, অধিকাংশ গুহাচিত্রে কিছু বন্যপ্রাণী ও তার চারপাশে ঢাল-সড়কি হাতে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর একটা ব্যাখ্যা এই হতে পারে যে, বনে শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে তারা ওইসব ছবি আঁকতেন। বন জঙ্গলে বসবাসরত সভ্যতার ছোয়া বিহীন মানুষেরা ছিল জোগাড়ে প্রকৃতির, ফলমূল খেয়ে জীবনযাপন করত। এই ফলমূলের পাশাপাশি তারা বনের পশু পাখিও মেরে খেত।
কিন্তু বন্যপ্রাণী মারা খুব সহজ নয়। এজন্য দল বেঁধে কোনো হরিণ বা বাইসনকে ঘিরে ফেলে তাকে মারা ছাড়া তাদের উপায় ছিল না। এ অবস্থায় অনেকে মিলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা থাকতে হয়। বন্যপ্রাণীকে ধরতে হলে কে কোথায় অবস্থান নেবে, কার হাতে বল্লম থাকবে, কে কোনদিক থেকে আক্রমণ চালাবে—এসব আগে থেকে ঠিক করে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সে যুগে বন জঙ্গলে বসবাসরত মানুষদের মাঝে সভ্য মানুষদের মত কথ্য ভাষার তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। হয়তো কিছু শব্দ ও নাম উচ্চারণ করতে পারত। তাই শিকারের কৌশল স্থির করে সবাইকে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য গুহায় বন্যপ্রাণীর ছবি আঁকা হতো। খেয়ে-পরে বাঁচতে হলে এ ছাড়া তাদের আর উপায় ছিল না।