বিজ্ঞান জিজ্ঞাসা

মাশরুম খাওয়া কি উপকারী?

মাশরুম দিন দিন অতি জনপ্রিয় একটি খাবার হয়ে উঠছে। মাশরুম মৃত ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গকে বলা হয়। মাশরুম ভক্ষণযোগ্য। ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে এই খাবারটি কি মানুষের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর? 

 

ইদানীং কালে বিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদদের  আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে মাশরুম। কারণ মাশরুমের রয়েছে একাধিক উপকারী ভূমিকা। মাশরুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাংস থেকে যেমন আমিষ পাওয়া যায় মাশরুম থেকেও তেমন আমিষ পাওয়া যায়। মাংস এর বিকল্প আমিষের উৎস হলো মাশরুম। মাশরুমে উচ্চ প্রোটিন ছাড়াও রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান আর ভিটামিন। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মাশরুমে রয়েছে বার্ধক্য প্রতিরোধী এন্টি-অক্সিডেন্ট। মাশরুমে রয়েছে এসপিরিন। এসপিরিন হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। শীতকালীন ফ্লু প্রতিরোধ করে মাশরুম। মাশরুম গেঁটে বাতের ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখে। 

 

শুধু তাই নয়, বর্তমানে ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাশরুম। চিকিৎসকরা মনে করেন মাশরুম ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকরী এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে শক্ত ভূমিকা পালন করে মাশরুম। মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে মাশরুম। যেসব মহিলাদের সাপ্তাহিক খাবারে মাশরুম থাকে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম। ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়। কেমোথেরাপি দিলে একটা মারাত্বক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। তা হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাই মাশরুম খেতে হবে। 

 

এতদিন মাশরুম সম্পূরক বা বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন মাশরুম এর উপকারীতা দেখে মাশরুমকে আর বিকল্প খাদ্য তালিকায় রাখতে চান না। মাশরুমে এত পুষ্টি উপাদান রয়েছে যে মাশরুমকে এখন মূল খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহ দিচ্ছে বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা। তাই আমরা যেমন মাছ মাংস খাই তেমনি মাশরুমও আমরা মূল খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা করে মাশরুমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।  মাশরুমের অঢেল পুষ্টিগুণ বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে। মাশরুম এর পুষ্টিগুণের পাশাপাশি মাশরুমের আরও একটা গুণ রয়েছে। তাজা মাশরুমকে অন্য খাবারের সাথে রান্না করলে খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধ অনেক বৃদ্ধি পায়। সেজন্য রান্না করার আগে মাশরুম ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, কাচা মাশরুম কখনোও খাওয়া যাবে না। কারণ মাশরুমে দেহে যে আবরণ থাকে তা সহজে হজম করা যায় না। এছাড়াও কাচা মাশরুমে এমন কিছু উপাদান থাকে যা পরিপাকতন্ত্রের কিছু এনজাইমকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। তাই কাচা মাশরুম খেলে পুষ্টিগুণ তো কিছুই পাওয়া যাবে না উল্টো হীতে বিপরীত হয়ে বদহজম সহ আরও নানা রকম সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও চাষকৃত মাশরুমে কিছু ক্ষতিকর উপাদানও থাকতে পারে। তাই সবথেকে ভালো হয় মাশরুম সুন্দরমতো পরিষ্কার করে তারপর রান্না করে খাওয়া। রান্না করে খাওয়া মাশরুমই সবদিক থেকে নিরাপদ এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। ওষুধ হিসেবে যখন মাশরুম খাওয়া হবে তখন তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে। নয়লে সমস্যা হতে পারে। 

 

আসুন এবার জেনে নিই মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। 

পৃথিবীতে সর্বোমোট ৪৬ হাজার প্রজাতির মাশরুম পাওয়া গেছে। এরমধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রজাতির মাশরুম রয়েছে যেগুলো খাওয়া যায় এবং চাষযোগ্য। মাশরুম চাষ  করতে হলে প্রয়োজন হয় খড়ের। আমন ধানের খড় ব্যবহার করলে মাশরুমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। মাশরুম চাষ করার জন্য সর্বোপ্রথম ধানের খড় নিয়ে তা কয়েকটি সমান আটিতে জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করে নিতে হবে। মাশরুম চাষ করার জন্য মাচা ব্যবহার করতে হবে। মাচায় যেন সরাসরি রোদ না লাগে এবং সরাসরি বৃষ্টি না পড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত ঘরের ভেতর মাশরুম চাষ করা উত্তম। মাশরুম চাষ করার জন্য প্রথমে খড়ের আটি গুলো স্তরে স্তরে সাজিয়ে ভাগ করে নিতে হবে। মাচার ওপর খড়ের একটি স্তর রাখতে হবে। যেদিকে খড়ের মাথা বা আগার দিকটি থাকবে তার বিপরীত দিক থেকে খড়ের অপর  একটি স্তর রাখার মাধ্যমে প্রথম খড়ের স্তর ঢেকে দিতে হবে। এভাবে পাশাপাশি অনেকগুলো খড়ের স্তর মাচার উপর রেখে দিতে হবে আলাদা আলাদা করে। অতঃপর খড়ের স্তরের উপর হালকা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর খড়ের এই হালকা ভেজা স্তরের  ৩-৪ সেন্টমিটার ভিতর ডালের গুড়া আর মাশরুমের বীজ একসাথে ছড়িয়ে দিতে হবে। মাশরুমের বীজ  এভাবে রেখে দেওয়ার ৪ দিন পর থেকে খড়ের স্তরে হালকা করে সকাল বিকাল পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে মাশরুমের কুড়ি গজায় এবং  ১৫ দিন পরই মাশরুম তোলার উপযোগী হয়ে যায়। মাশরুম তোলার পর পুনরায় একই পদ্ধতিতে চাষ করা যেতে পারে। 

 

মাশরুম চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন। অল্প বিনিয়োগ করেই মাশরুমে অনেক লাভ পাওয়া যায়। মাশরুম চাষে পরিশ্রমও কম। মাশরুম চাষ করার জন্য অল্প জায়গা দরকার হয়। অল্প পুঁজি দিয়েই মাশরুম চাষ শুরু করা যেতে পারে।

 

আমাদের মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে। মাঠে ঘাটে যে সব মাশরুম দেখা যায় সে সব কি খাওয়া যাবে কি না। উত্তর হলো এসব মাশরুম বিষাক্ত হতে পারে। সাধারণত যে সব মাশরুম রঙিন এবং বাদামি রঙের এবং যে সব মাশরুমের কান্ডে গোল রিং এর মতো অংশ থাকে সে সব মাশরুম বিষাক্ত হয়ে থাকে। বিষাক্ত মাশরুম খেলে নানা রকম রোগসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই বাজার থেকে চাষ করা মাশরুম খাওয়াই নিরাপদ।  বাংলাদেশে সাধারণত তিন প্রজাতির মাশরুম জনপ্রিয়। এগুলো হলো পোয়াল, ধিংড়ি এবং বোতাম। বাজার থেকে মাশরুম কিনে আনার পর তা ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। ফ্রিজে বেশিদিন রাখলে যদি মাশরুমে কালচে দাগ পড়ে তবে সে মাশরুম খাওয়া যাবে না। 

 

আমাদের সবার উচিত সপ্তাহে অত্যন্ত একদিন মাশরুম খাওয়া। কারণ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণই মাশরুমে রয়েছে। তাছাড়া মাশরুম চাষ করে আমরা ভালো উপার্জনও করতে পারি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link