ইসলামইসলামিক বিষয়াদি

খাবারের সময় সালাম দেওয়ার দলিল

বেশি বেশি সালাম প্রদানের ব্যাপারে নবি (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন। আজান, ইকামত, নামাজ, ইস্তিঞ্জা ইত্যাদি ছাড়া বাকি সর্বাবস্থাই সালাম দেওয়া যায়।

 

অনেকেই মনে করেন, খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যায় না। কেউ সালাম দিলে তাকে বলা হয়, ‘আরে জানো না, খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যায় না?’ আবার অনেকে তো বলে, ‘খাওয়া আর কুরআন পড়া সমান, তাই এ অবস্থায় সালাম দেয়া যাবে না।’

 

এসবই কুসংস্কার। কুরআন ও সহিহ হাদিসে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। বরং ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট সময় বা পরিবেশ ব্যতীত সর্বাবস্থায় সালাম প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সালামের বহুল প্রসার করো, তাহলে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে।’ [বুখারি, আদাবুল মুফরাদ : ৯৮৮]

 

খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে এবং নেওয়া যাবে। প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে যে, ‘খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেয়া যাবে না’ এর কোন অস্তিত্ব নেই। তবে যদি কারো মুখের ভেতরে খাবার থাকে, তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভাল। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিলে উত্তর প্রদান ওয়াজিব নয়। (সাখাবী, আল মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫)

এ সম্পর্কে (কাশফুল খুফা) কিতাবে বলা হয়েছে (لا سلام على أكل) ليس بحديث) অর্থাৎ খাবার চলাকালীন সময়ে সালাম দেওয়া যাবে না, এটা কোন হাদিস নয়।

ইমাম নববী রহ. তাঁর আযকার কিতাবে বলেন, খাবার চলাকালীন মুখে খাবার থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেওয়া জরুরি নয়। তবে যদি মুখে লোকমা না থাকা অবস্থায় সালাম দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই এবং উত্তর প্রদান জরুরি।

শায়খ আব্দুর রহমান আস সাহিম বলেন, সমাজে প্রচলিত খাবার সময় সালাম দেওয়া যায় না বলে যে কথাটি রয়েছে তা সালামের ব্যাপারে নয়, মোসাফাহার ব্যাপারে। সুতরাং সালাম দেওয়া ও নেওয়াতে কোন সমস্যা নেই।

(সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা কারী, আল আসরার, পৃ. ২৬৫, আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৮, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ২০৩। )

 

অবশ্য এ ব্যাপারে একটি হাদিস পেশ করা হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নাকি বলেছেন, لا سلام على أكل অর্থাৎ ‘খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া যাবে না।’ অথচ ইমাম আজলুনি (রহ.) বলেছেন, ‘এটি কোনো হাদিসই না। তবে খাবারের লোকমা যদি মুখে থাকে, তাহলে সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি না। এছাড়া খাবার অবস্থায় সালাম দেওয়া অথবা উত্তর দেওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই।’ [আজলুনি, কাশফুল খাফা, ২/৩৬৩]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link