কুরআনের আয়াত কেন বাতিল হয়েছে?

Quran

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

 

অর্থাৎ, আমি যে আয়াতকে ‘মানসুখ’তথা রহিত করি কিংবা ভুলিয়ে দেই,তার জায়গায় তার চাইতে ভলো অথবা কমপক্ষে ঠিক তেমনি আয়াত নিয়ে আনি। (সুরা বাকারা: ১০৬)

 

কোরআন সর্বযুগের সর্বকালের জন্য আলোকবর্তিকা।  নাসেখ, মানসুখ আয়াতই প্রমাণ করে এই কোরআন আল্লাহর বাণী।

 

কেননা আল্লাহ জানেন যে সময় কোরআন নাজিল হয়েছ(১৪০০ বছর আগে)তার পরবর্তি হাজার বছর পরের সামাজিক,আর্থিক,রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক একই রকম হবেনা।

তাই কিছু নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন সেই যুগের অবস্থা অনুযায়ী এবং কিছু নির্দেশনা এসেছে পরবর্তি প্রজন্মের জন্য।

 

এখন যদি ১৪০০ বছর আগের সামাজিক অবস্থার জন্য নির্ধারিত আইন  অপরিবর্তিত থাকত তবে কি কোরআন এর নির্দেশনাকে সর্বযুগের বলা যেত?

 

নাকি নির্ধারিত গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে যেত?

 

আমরা যদি আধুনিক রাস্ট্র ব্যাবস্থার দিকে তাকাই তবে দেখতে পাই বিভিন্ন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে জরুরি আইন জারি হয়। পরবর্তিতে অবস্থা পরিবর্তন হলে জরুরী অবস্থার জন্য নির্ধারিত নির্দেশনা বাতিল করা হয়।

এই নির্দেশনা কখনো হয় স্বল্প সময়ের জন্য আবার কখনো হয় অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য।

উদ্দেশ্য থাকে এই যে, বিশেষ আইনের মাধ্যমে সেই বিশেষ সময়ের অবস্থার পরিবর্তন করা।

সবাই জানে যে অস্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন হবে সময়ের সাথে সাথে।

এখন কেউ যদি বলে অবস্থার পরিবর্তন হবে জেনেও কেন বিশেষ আইন বহাল করা হল তাকি গ্রহণযোগ্য হবে?

নাকি লোকে সেই প্রশ্নকারীকে পাগল বলবে? পাগল বলা স্বাভাবিক নয় কি?

 

আল্লাহ তায়ালা অনেক সময় কিছু কিছু বিধান জারি করেন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।কেননা,অনেক সময় অবস্থার তাগিদে জরুরী ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার নির্দেশ জারি করা লাগে।পরে সে নির্দেশটাকে আবার সরিয়ে নেয়া হয়। এ ধরনের অবস্থায় কখনো বলা হয় এ নির্দেশটা অমুক দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে আবার কখনো দিনক্ষণ মানুষের কাছ থেকে গোপণ রাখা হয়। এটা জানা থাকে কর্তৃপক্ষের। সময় শেষ হয়ে গেলে তারা এ নির্দেশকে অকার্যকর ঘোষণা করে।

 

উদাহরণ স্বরূপ- আল্লাহ তায়ালা চান মানুষ রোজা রাখবে। তখন বললেন: তোমরা রোজা রাখ। কতদিন রোজা রাখবে তা বলা হয়নি। কিন্তু, আল্লাহ তায়ালা চান না যে, ব্যক্তি সব সময় রোজা রাখুক। তাই, একমাস পরে বললেন: এখন রোজা বন্ধ কর।

আর যদি বলতেন: তোমরা একমাস পর্যন্ত রোজা রাখ তাহলেও যথেষ্ঠ হত।কোন সমস্যা ছিল না।আর কেউ কোন অভিযোগও করত না।

 

আবার যদি মদ হারাম করার প্রক্রিয়ার দিকে তাকাই তবে দেখি আল্লাহ্‌ প্রথমে বলেন নেশা/মদ অশ্লীল কার্জ।এরপরে বলেন নামাজের সময় মদ্যপ না থাকার জন্য।

সর্বশেষ নির্দেশ দেন সকল মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগের জন্য।

অর্থাৎ একে হারাম করা হয়।

যদি এই নির্দেশনাকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখি এই পর্যায়ক্রমিক নির্দেশনা এক মহা প্রজ্ঞাবান স্রষ্টার অসাধার প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে।

 

আল্লাহ্‌ চাইলে প্রথমেই বলতে পারতেন “মদ,নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম”! কিন্তু এই নির্দেশ পালন করা বান্দার জন্য কঠিন হয়ে যেত। তাই পর্যায় ক্রমে নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে তিনি তার আইন বাস্তবায়ন করেছেন বান্দার সুবিধার্থে!

 

এখন কেউ যদি বলে পর্যায়ক্রমে বাতিল করলেন কেন, একবারে বাতিল করলেননা কেন?

তবে কি সে  জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিবেনা?

 

মূলত সকল অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালার জানা আছে-এ বিধান অমুকদিন পর্যন্ত চলবে। প্রথম অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই শেষ সময়টা জানিয়ে দেন নাই। বরং, সময় শেষ হওয়ার পর বলে দিয়েছেন যে, সময় শেষ হয়ে গেছে। এখানে আগেই মেয়াদ বলে দেয়া হয়েছে আর ওখানে সময় শেষ হওয়ার পর জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

মোটকথা,আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন জরুরী অবস্থা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই জানিয়ে দেবেন;আগে বলবেন না। রহিত হওয়ার আগের সময়ের জন্য বিধানটা ছিল টেম্পরারী বা সাময়িক। পরবর্তী সময়ের জন্য তা উপযুক্ত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *