স্বাস্থ্য

উদরাময় এর কারণ, লক্ষ্মণ ও প্রতিকার।

উদরাময়, যার লক্ষণ পাতলা বা জলের মত মল, হচ্ছে পরিপাক নালীর একটি ব্যাধি। একজন ব্যক্তি যদি দিনে তিন বা তার বেশি বার (বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার) পাতলা বা জলের মত মলত্যাগ করেন তাহলে মনে করা হয় যে তার উদরাময় হয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১.৭ বিলিয়ান শিশুর উদরাময় রোগ হয়। কাজেই ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের অপুষ্টির বড় কারণ উদরাময়।। ভারতবর্ষে শিশু মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ উদরাময় রোগে বার্ষিক ৩০০০০০ জনের মৃত্যু হয় (একই বয়সী শিশুদের মধ্যে মোট মৃত্যুর ১৩%)। তীব্র উদরাময় রোগের সাধারণ কারণ হল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী। উদরাময়ের সংক্রমণ সাধারণত পানীয় জলের মাধ্যমে এবং খাদ্য বস্তু স্বাস্থ্য-সম্মত ভাবে দেখভাল না করার জন্য হয়। তাই সঠিক ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। তীব্র উদরাময় রোগে দেহ থেকে খুব দ্রুত জল এবং ইলেক্ট্রোলাইট বেড়িয়ে যাওয়ার ফলে জল-বিয়োজন ঘটে। তাই সময়মত চিকিৎসা না করলে উদরাময় রোগ জীবনঘাতি হতে পারে। এইচ-আই-ভি পজিটিভ শিশুদের উদরাময় হলে বাঁচার হার খুবই কম, যা উদরাময় রোগে আক্রান্ত এইচ-আই-ভি নেগেটিভ শিশুদের চেয়ে এগারো গুণ বেশি। টিকা করণ (রোটাভাইরাস টিকা-করণ), মাতৃদুগ্ধ পান, উন্নত স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা শিশুদের উদরাময় রোগের সংখ্যাকে কমাতে সাহায্য করবে।

ডায়রিয়া কি? 

 

উদরাময় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণের একটি উপসর্গ। এর কারণ হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আর পরজীবী। অবশ্য, স্বাস্থ্যের অন্যান্য কারণেও পাতলা মল হতে পারে। উদরাময় রোগে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের ৫০০০০০ শিশুর মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বে এটি শিশু মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। প্রতি দিন উদরাময় রোগে ২০০০ শিশুর মৃত্যু হয় যা ম্যালেরিয়া, হাম এবং এ-আই-ডি-এস রোগে মোট শিশু মৃত্যুর চেয়েও বেশি। তীব্র উদরাময় কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। এই রোগের ফলে দেহের তরল পদার্থ নির্গত হয়ে জল-বিয়োজন হয়, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে, মৃত্যুও হতে পারে।

 

উদরাময় কি?

 

উদরাময় অনর্নিহিত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণের একটি উপসর্গ। এই রোগে দিনে তিন বা তার অধিক বার পাতলা মল নির্গত হয়। কোন কোন মানুষের দিনে বহুবার স্বাভাবিক মল নির্গত হয়। তার মানে এই নয় যে তাদের উদরাময় হয়েছে।

 

ডায়রিয়া এর উপসর্গ :

 

পরিপাক নালীর অন্তর্নিহিত গোলমালের উপসর্গ হল

 

উদরাময় রোগ। অবশ্য, এর সাথে অন্যান্য লক্ষণও থাকতে পারে:

 

°পেটের পেশীর সংকোচন।

 

°পেট ব্যথা।

 

°পেট ফোলা।

 

°তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া।

 

  • ওজন হ্রাস হওয়া।

 

  • জ্বর।

 

°বমি বমি ভাব।

 

°হঠাৎ মলের বেগ আসা।

 

°পাতলা মলের সাথে আরও গুরুতর উপসর্গ জড়িত থাকতে পারে। যেমন:

 

  • মলে রক্তের উপস্থিতি।

 

  • ক্রমাগত বমি করা।

 

°জল-বিয়োজন।

 

যদি নিচের উপসর্গগুলি হয়, তাহলে ডাক্তারবাবুর কাছে যাওয়া উচিৎ:

 

উদরাময় দুই দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। জল-বিয়োজনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

 

°পেটে বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যথা।

 

  • মল কালো রঙের বা রক্তাক্ত।

 

  • জ্বর হয়েছে, দেহের তাপমাত্রা

 

°ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি।

 

°১০২° ডিগ্রি

 

খুব অল্পবয়সী বাচ্চাদের পাতলা মল হতে থাকলে খুব দ্রুত তাদের জল-বিয়োজনের হতে পারে। অতএব, যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

 

ডায়রিয়া  এর চিকিৎসা 

 

বিভিন্ন ধরনের উদরাময়ের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি নীচে

দেওয়া হয়েছে:

 

তীব্র উদরাময় বাজার-চলতি ওষুধগুলি দিয়ে তীব্র উদরাময়ের চিকিৎসা হতে পারে। তবে যাদের মলের সাথে রক্তক্ষরণ হচ্ছে বা যাদের উদরাময়ের সাথে জ্বর হচ্ছে, বাজার-চলতি ওষুধগুলি তাদের জন্য নয়। যদি ২ দিনের বেশি সময় ধরে উদরাময় হতে থাকে, তাহলে ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।

 

*শিশুদের তীব্র উদরাময়ঃ

 

বাজার-চলতি ওষুধ দিয়ে বাচ্চাদের উদরাময়ের চিকিৎসা ক্ষতিকারক, বিশেষত শিশুদের। চিকিৎসার জন্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন। যদি উপসর্গ ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে ডাক্তারবাবুর সাথে দেখা করুন।

 

*দীর্ঘকাল ব্যাপী এবং স্থায়ী উদরাময় দীর্ঘকাল ব্যাপী এবং স্থায়ী উদরাময় রোগের চিকিৎসাঃ

 

রোগের কারণের উপরে নির্ভর করে। পরজীবী এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এমন বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। যে রোগগুলি উদরাময়ের কারণ, যেমন ক্রোন’স রোগ, আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ইরিটেবেল বাওয়েল সিনড্রোম, তাদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়।

 

১.জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

 

২.জীবনধারার কিছু পরিবর্তন করলে উদরাময়ের

উপসর্গগুলির তাড়াতাড়ি নিরাময় হয় এবং ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এইগুলি হল:

 

  • সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করে:

 

  • শৌচ করার পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে

 

ফেলুন।

 

  • রান্না করার আগে এবং পরে এবং ডায়াপার পরিবর্তনের পরে হাত ধুয়ে নিন।

 

°শুধু মাত্র ফোটানো বা বোতল-জাত পরিশুদ্ধ

জল পান করুন।

 

  • গরম পানীয় পান করুন।

 

  • শিশু এবং বাচ্চাদের তাদের বয়সের উপযুক্ত খাদ্য দিন।

 

*০৬ মাস পর্যন্ত শুধুই মায়ের বুকের দুধ পান করান। 

 

  • সঠিক ভাবে খাদ্য মজুত করুন এবং খাবারের দেখভাল করুন।

 

#এড়িয়ে চলুন:

 

১. নলের জল পান করা।

 

২.পানীয়, রস এবং বরফ তৈরির জন্য নল জলের

 

ব্যবহার করা।

 

৩.প্যাস্তুরাইজ না করা দুধ পান।

 

৪. রাস্তার পাশে খাবার খাওয়া।

 

৫.কাঁচা এবং রান্না না করা খাবার এবং মাংস

 

খাওয়া।

 

  • ৬.মদ্যপান করা।

 

৭.মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া।

 

৮.আপেল এবং নাসপাতির মত ফল খাওয়া।

 

৯.ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পান করা। ডেইরির খাবার না খাওয়া।

 

১০.ডায়েট কোলা পানীয়, মিছরি এবং চিউইং গাম।

 

#জল-বিয়োজনের প্রতিরোধ করা:

 

  • ওরাল রিহাইড্রেশান সলিউশান (ও-আর-এস) ও-আর-এস জল এবং ইলেকট্রোলাইটস’ এর একটি মিশ্রণ। উদরাময়ের কারণে দেহের তরল পদার্থ নির্গত হয়ে গেলে তা পূরণ করতে ও-আর এস পান করতে দেওয়া হয়। যে কারণেই উদরাময় হোক না কেন, এটিই তার সর্বোত্তম চিকিৎসা। রেডিমেড ও-আর-এস’র স্যাচেট ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। না পাওয়া গেলে ও-আর-এস বাড়ীতেই তৈরি করে নেওয়া যায়। ১ লিটার পানীয় জলে (ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করা) ৬ চায়ের চামচ চিনি ও হাফ চা  চায়ের চামচ লবণ মেশান। ২ বছরের কম বয়সের বাচ্চারা প্রত্যেকবার মলত্যাগের পরে ১/৪ থেকে ১/২ কাপ ও-আর-এস পান করবে। ২ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চারা প্রত্যেক বার মলত্যাগের পর থেকে এক কাপ ও-আর-এস নিরাপদে পান করবে।

 

#সম্পূরকসমূহঃ

 

এইচ-আই-ভি সংক্রমিত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের উদরাময় হলে ভিটামিন এ সম্পূরকগুলি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাচ্চাদের উদরাময় প্রতিরোধ করতে কখনও কখনও ভিটামিন এ, দস্তা এবং অন্যান্য ভিটামিন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

  • রোটাভাইরাস টিকা-করণ বাচ্চাদের উদরাময় প্রতিরোধ করতে রোটাভাইরাস’এর টিকা একাধিক ডোজে বাচ্চাদের খেতে দেওয়া হয়। এই টিকাগুলি রোটাভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা হ্রাস করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link