মায়ের দুধ শিশুর জন্য কতটুকু উপকারী?
শিশুর জন্য মায়ের দুধের থেকে পুষ্টিকর খাবার পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। মায়ের দুধ অনেক উপকারী।
There is no other food in the world that is more nutritious than breast milk for a baby. Breast milk is very beneficial.
মায়ের দুধের উপকারিতা- The benefits of breast milk
জন্মের একঘণ্টার মধ্যে কোনো শিশু যদি মায়ের বুকের দুধপান শুরু করে, তাহলে এ শিশু দীর্ঘদিন দুধ পায়। মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি থাকে। এতে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ভালো হয়। বোতলের দুধ খাওয়া শিশুর চেয়ে মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও কান পাকাসহ বিভিন্ন রোগ খুব কম হয়। যে পরিবারে অ্যাজমা আছে, সে পরিবারের শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ খায়, তাহলে অ্যাজমা হলেও দেরিতে হয় এবং ভবিষ্যতে অ্যাজমা অনেক কমে যায়। যেসব শিশু বোতলের দুধ খায়, তারা অল্প বয়সে খুব মোটা হয়ে যায়। জীবনের প্রথম দুই বছর কোনো শিশু অতিরিক্ত ওজন ধারণ করলে ভবিষ্যতে বড় বড় রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেমন: হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। কিন্তু মায়ের দুধ পান করা শিশুর এ রোগগুলো কম হয়। মায়ের দুধের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো কৃত্রিম দুধে এখনও দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মায়ের জটিল রোগ কম হয়- The mother’s complex disease is less
সন্তান প্রস্রবের পর অনেক মা মনে করেন, তার অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে, তিনি অনেক ক্লান্ত, ভারী কাজ করতে পারবেন না। এসব সমস্যা সমাধানে জন্য ভূমিষ্ট হওয়ার পর নাড়ি কাটার আগেই শিশুকে মায়ের দুধে দিয়ে দেওয়া উত্তম। এসময় শিশুকে মায়ের পেটের ওপর দিয়ে দিলে, শিশু বেয়ে বেয়ে গিয়ে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবে। এতে জরায়ুটা খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে চলে আসে। ফলে, মায়ের প্রস্রব পরবর্তী জটিলতা কম দেখা দেয়। যেমন: অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা কমে যায়, মায়ের রক্তশূন্যতা খুব একটা হয় না এবং মা খুব দ্রুত শক্তি পায়, কষ্ট কমে যায়। যে সমস্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদের মধ্যে বিভন্ন ধরনের অসুখ যেমন: ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এগুলো হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। যে সমস্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তিনি দেরিতে গর্ভধারণ করেন, প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়। পরবর্তী দুই বছরে পুনরায় গর্ভধারণের সম্ভাবনা মাত্র দুই ভাগ। এটি মায়ের জন্য বাড়তি সুবিধা। মা পরিকল্পনা করে পরিবারকে যেভাবে সীমিত রাখতে চায়, সে উদ্দেশ্যটা সফল হয়ে যায়।
দুধের জন্য মায়ের খাবার ও সচেতনতা-Mother’s food and awareness for milk
অনেক সময় মা মনে করেন যে, শিশু দুধ পাচ্ছে না। তার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কিছু বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হয়। যেমন: যে ওজন নিয়ে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে, এক বা দুই মাস পর যে হারে একটি শিশুর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, ওজন মেপে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন, ওজন বৃদ্ধি ঠিক আছে কিনা। দুধ খাওয়ার পরপর শিশু ঘুমিয়ে যায়, নাকি চিৎকার করে? প্রস্রাবের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। দিনে যদি ৬বারের বেশি হয় তাহলে ঠিক আছে বলে ধরা হয়। যেটি চিকিৎসকদের চাওয়া।
সঠিক পদ্ধতি- The right approach
অধিকাংশ শিশু বুকের দুধ না পাওয়ার মূল কারণ মায়ের খাদ্যাভাস না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-মা যখন শিশুকে দুধ খাওয়ান, তখন কিভাবে শিশুকে কোলে নিয়েছেন। শিশুর অবস্থান ও সংযোগ, এ জায়গায় অধিকাংশ মায়ের ত্রুটি থাকে। অনেক শিশু দুধ খাওয়ার সময় সংযোগে ঘাটতি থাকে। ফলে শুধু নিপলটা হয়তো চুষতে থাকে কিন্তু দুধ পায় না। দুধ থাকে নিপলের পিছনে কালো বড় যে জায়গাটা রয়েছে এর নিচে । যতক্ষণ শিশু বড় হা না করছে, ততক্ষণ শিশুর মুখটা ওখানে পৌছাঁচ্ছে না, চাপও পড়ছে না। সুতরাং দুধ আসে না, দুধ থাকলেও শিশু পাচ্ছে না
নিয়ম হলো-দুধ পানের সময় শিশুর মাথা এবং শরীর এক লাইনে থাকবে। এমন থাকা যাবে না যে, মাথা উচু পা ঝুলে আছে। একই সরল রেখায় থাকতে হবে। শিশু মায়ের কাছাকাছি থাকবে, শিশুর চেহারা মায়ের দিকে ঘুরানো থাকবে। শিশু যাতে শক্তি পায় এজন্য মা বাম হাত দিয়ে শিশুর পেছনের অংশ চাপ দিয়ে ধরবে।
সংযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: শিশুর মুখ স্তনে ঠিকভাবে লাগছে কিনা? শিশুর মুখ বড় করে হা করা রয়েছে কিনা? এবং তার নিচের ঠোঁট উল্টানো কিনা? বাহিরের দিকে একটু বেরিয়ে আছে কিনা? স্তনের বেশিরভাগ অংশ মুখে ঢুকছে কিনা? থুতনিটা স্তনের সঙ্গে লেগে আছে কিনা? নাকি সেখানে ফাঁকা আছে? এরকম সংযোগের শর্ত পূরণ করে যদি মায়ের স্তনের সঙ্গে শিশুর মুখের সংযোগটা হয়, তাহলে শিশু প্রচুর দুধ পেতে পারে।
সংযোগে ত্রুটি বা মা খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনেননি। নিজে ইচ্ছে করে খান না। অনেকের সিজারে যখন শিশু হয় তারা মনে করে বেশি পানি খেলে সেলাই শুকাবে না। শুকনো খাবার খায়, যেমন: চিড়া। ফলে দুধের পরিমাণ কমে আসে। মাকে সঠিকভাবে খেতে হবে। না হলে শিশু পুষ্টি পাবে না। অনেক শিশুর মৃগীরোগ থাকে। সে দুধ চুষতে গেলে ঘেমে যায়, ক্লান্তি বোধ হয় তখন সে ছেড়ে দেয়। এজন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।