ছুলি দূর করার সহজ ঘরোয়া উপায়
ছুলি এক প্রকার চর্মরোগ। ফাঙ্গাসজনিত কারণে এইচর্মরোগটি হয়। চর্মরোগটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় টিনিয়া ভারসিকল। ত্বক স্যাঁতসেঁতে থাকলে এই রোগ হয়। এই রোগে শরীরে সাদা বা কালো ধরনের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। ছুলির ইংরেজি নাম ‘আর্টিকারিয়া’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘আর্টিকা’ থেকে এসেছে যার অর্থ পুড়ে যাওয়া। ছুলি হলে ত্বকের উপর ফ্যাকাসে লাল বা বাদামী রংয়ের ছোট ছোট ফুঁসকুড়ির মতো ছাপ পড়ে। কখনও কখনও ছুলি হলে জ্বালা বা চুলকানির মতো অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে।
মুখে, কাঁধে, হাতে, পিঠের ত্বকে মেলানিনের পরিমান বেড়ে গিয়ে ছুলি সৃষ্টি হয়। ছুলি নিরাময়ে একাধিক চিকিৎসা রয়েছে। যেগুলো ব্যয়বহুলও। তবে প্রাকৃতিক উপায়েও ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ছুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে, যেগুলি অত্যন্ত কার্যকরী। আসুন প্রাকৃতিক উপায়ে ছুলি নিরাময়ের পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছুলি হওয়ার লক্ষণ
আচমকা হলেও যেকোনো বাদামী দাগ মানেই ছুলি না।
কয়েকটি লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে ছুলি হয়েছে কিনা।
সাধারণত মুখে, পিঠে, বুকে, ঘাড়ে এবং উপরের হাতে ত্বকের বর্ণহীনতার প্যাচ বা দাগ, যা স্বাভাবিকের স্কিন কালারের চেয়ে হালকা বা ডার্ক কালারের হয়।
চুলকানির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
দাগ ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়া। ত্বকের রঙের বদল ঘটা।
ছুলি সরানোর ঘরোয়া উপায়
ছুলি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ও ট্রিটমেন্ট ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
কিন্তু যদি আবহাওয়ার বদল, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় থাকার দরুন কিম্বা ত্বকের অতিরিক্ত অয়েলি ভাবের জন্য দেখা দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে এই সহজ ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়গুলো অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন।
লেবু-চিনির স্ক্রাব
ত্বকের যত্নে লেবু-চিনির স্ক্রাব বেশ কার্যকরী। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ছুলির দাগ দ্রুত কমে যায়। একটি লেবু মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশের উপর আধা চামচ চিনি মাখিয়ে নিন।
তারপর ত্বকের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে আলতো করে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ২ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করলে ছুলির সমস্যা কমে যাবে।
লেবুর রস দিয়ে মালিশ
ছুলি সারাতে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ এতে আছে প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদান। লেবুর রসে থাকা বিশেষ উপাদান ত্বকের গাঢ় দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
লেবুর রস নিংড়ে ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে ভাল করে মালিশ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর সামান্য গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন অন্তত দু’বার এভাবে মালিশ করলে দ্রুত ফল পাবেন।
টমেটোর রস
টমেটোতে আছে একাধিক পুষ্টি উপাদান। বিশেষ করে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন টমেটো ত্বকের যত্নে সেরা ঘরোয়া দাওয়াই হিসেবে বিবেচিত। ছুলির দাগ দূর করতেও এই উপাদানটি বিশেষ কার্যকরী।
এজন্য একটি পাকা টমেটো চটকে নিয়ে ত্বকের ছুলি আক্রান্ত অংশে ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট আলতোভাবে মালিশ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা সাবান ব্যবহার করবেন ২ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত দিনে অন্তত ২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ছুলির সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি মিলবে।
পেঁয়াজ
চুলের যত্নে পেঁয়াজের বিশেষ উপকারী এক উপাদান। এতে থাকা এক্সফলিয়েটিভ উপাদান ছুলি নিরাময়েও খুবই কার্যকর। একটি বড় মাপের পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশটি নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে দিনে অন্তত ২ বার ম্যাসাজ করুন। যত দিন পর্যন্ত ছুলি একেবারে সেরে না যাচ্ছে; ততদিন আক্রান্ত স্থানে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন।
টক দই
টক দইয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানেন নিশ্চয়ই! এমনকি ত্বকের বিভিন্ন সমাস্যার সমাধান করে টক দই। এর সাহায্যেও ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। টক দইয়ে থাকা ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করে সহজেই। টাইরোসিনেজ নামের এনজাইম শরীরের মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জকের উপস্থিতির জন্য দায়ী। ল্যাক্টিক অ্যাসিড টাইরোসিনেজ এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বাঁধা প্রদান করে।
ফলে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। ছুলির সমস্যার সমাধানে ৩ চামচ টক দই নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান এবং ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করলে ছুলির সমস্যার সঙ্গে কমবে ব্রণ-ফুসকুড়ির সমস্যাও।
ভেজিটেবল মাস্ক
ছুলির সমস্যার সমাধানে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করতে পারেন ভেজিটেবল মাস্ক। এটি তৈরি করতে প্রয়োজন হবে ২ টুকরো শশা, ২ টুকরো স্ট্রবেরি ও অলিভ অয়েল। শশা ও স্ট্রেবেরি ভালো করে ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটি ছুলির উপরে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ছুলির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত ৪ বার এই মাস্ক ব্যবহার করুন। এ ছাড়াও পেঁপে, বেগুন, আমন্ড তেল, কলা আর পুদিনার মাস্কও ছুলির সমস্যায় বিশেষ কার্যকরী।