প্রবন্ধসাহিত্য

2 টি স্বদেশ প্রেম রচনা ৯০০+ শব্দে

ভূমিকা:

” সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম, মা গো ,তোমায় ভালোবেসে ” -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জননী যেমন সন্তানের কাছে আজীবন মূল্যবান, দেশ তেমনি মানুষের কাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভরপুর। তাই জন্ম থেকে মায়ের মতো দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসা এবং মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। স্বদেশ যত ক্ষুদ্র , দুর্বল  হোক না কেন, প্রতিটি মানুষের কাছে তার দেশ সকল দেশের সেরা। স্বদেশের মানুষ তার প্রকৃতি, প্রাণীকুল, দেশপ্রেমিকের কাছে পবিত্র । দেশমাতৃকার মৃন্ময়ী মূর্তি শুধু কাদামাটি জলে নির্মিত  নয়,হৃদয়ের নিবিড় ভালোবাসায় এবং গভীর মাতৃত্ব বোধের সে অন্তরের অন্তঃস্থলে গভীর জায়গা করে নিয়েছে।

 দেশ প্রেমের স্বরূপ:

স্বদেশের প্রতি মানুষের আলাদা একটি স্বাভাবিক আন্ত আকর্ষণ করে ওঠে। এ থেকে স্বদেশপ্রেমের শুরু। স্বদেশ প্রেম মানুষের একটি সহজাত গুন। জন্ম  থেকেই মানুষ দেশের মাটি ,পানি আলো-বাতাস ,পরিবেশ সংস্কৃতি ,ঐতিহ্য ইত্যাদি সংস্পর্শ লাভ করে। তাই মানুষ স্বদেশের মানুষ, প্রকৃতি, ভাষা, সাহিত্য ,ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সবকিছুকেই ভালোবাসে। যে জাতির আত্মসম্ভ্রম যত প্রখর ,সে জাতির স্বদেশ প্রেম ততো বেশি প্রবল। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে যখন মন পরিচালিত হয়, যখন আত্ম কল্যাণ এর চেয়ে বৃহত্তর কল্যাণ বোধ বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখনই জলে ওঠে স্বদেশপ্রেমের নিষ্কলুষ প্রদীপ শিখা।

 স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত:

 

দেশপ্রেমিকেরাই দেশকে ভালোবাসে। স্বদেশ প্রেম প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়ে ,বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে তা জেগে ওঠে। দেশাত্মবোধ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ভেদাভেদ ভুলে একই চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করে। যুগে যুগে অনেক মনীষী দেশের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। তিতুমীর ,রানা প্রতাপ, শিবাজী ,সূর্যসেন ,নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ,মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আমাদের বাংলাদেশী ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সালাম, বরকত ,রফিক, শফিউল ,জব্বার প্রমুখ দেশপ্রেমের অম্লান স্বাক্ষর রেখে গেছেন।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র দেশপ্রেমের জন্য। এছাড়াও শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, তুরস্কের মুস্তফা কামাল পাশা আরো অনেকেই প্রমুখ ব্যক্তিগণ উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

 দেশপ্রেমের মাধ্যম:

 

পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই দেশপ্রেমের কথা উল্লেখ রয়েছে। সকল ধর্মগ্রন্থেই দেশ এবং জাতির কল্যাণে আত্মত্যাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষ যেকোন অবস্থান থেকে তার দেশকে ভালবাসতে পারে এবং স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। দেশের জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নামে এক প্রকার দেশ প্রেম। স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে দেশের প্রতিটি উপাদান কে ভালবাসতে হবে।

 কোন কোন ক্ষেত্রে দেশপ্রেম প্রয়োগ করব:

 

মানুষের প্রতিটি কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে ,চলনে-বলনে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে অথবা এসবের মাধ্যমে দেশ প্রেম জাগিয়ে তোলা যায়। নিজ দেশকে ভালোবাসা মানে দেশীয় সংস্কৃতিকে নিজ হৃদয়ে লালন করা। আমাদের দেশের তরুণ তরুণীরা সমাচার নিস সংস্কৃতি ভুলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেছে ।তাদের কথাবার্তা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিপরীত। কিন্তু এই অবস্থা চলতে দেওয়া ঠিক না। নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন করা হচ্ছে একজন দেশ প্রেমিক এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বিদেশী পণ্য দিকেই না ঝুঁকে, দেশীয় পণ্যের দিকেই বেশি করে ঝুঁকতে হবে। দেশীয় পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। দেশের বাইরে বাস করলেও নানা উপায়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করা যায়। বাইরে থেকেও দেশের জন্য অনেক কিছু করা যায় ,আমাদের চেষ্টা করতে হবে যে কোন অবস্থাতেই দেশের জন্য কাজ করার। আমাদের সকলকে চেষ্টা করতে হবে কিভাবে আমাদের দেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

 দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের করণীয়:

 

জন্মের পর থেকেই আমাদের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হতে থাকে। এটি একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। তারপরেও মানুষকে দেশপ্রেমে জাগিয়ে তুলতে হলে আমাদের কিছু করণীয় আছে যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ব্যক্তি ,দল কোনটি নয় দেশকে বড় ভাবতে হবে।
২. পরিবার এবং দেশকে সমানভাবে ভালবাসতে হবে।
৩. প্রত্যেকের দায়িত্ব কর্তব্য সততার সাথে পালন করতে হবে।
৪. কোন অন্যায়, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
৫. দেশের প্রচলিত আইন কানুন সকলকে মেনে চলতে হবে।
৬. দেশ যত ক্ষুদ্র বা গরীব হোক না কেন দেশকে অবশ্যই ভালবাসতে হবে।
৭. বিদেশী সংস্কৃতি কে প্রাধান্য না দিয়ে, নিজ সংস্কৃতিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
৮. দেশীয় সংস্কৃতিতে গান-বাজনা অনুষ্ঠান ,পরিচালনা করতে হবে।

 দেশপ্রেম, রাজনীতি:

 

রাজনীতির প্রথম ও প্রধান লক্ষণ এর দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে সাহায্য সহযোগিতা করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজনীতিবিদরাই উৎসর্গ করেছিলেন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ জীবন। বাইরের শাসকদের হাতে তাদের নির্যাতিত হতে হয়েছে অনেকবার। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সেই ধারা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন। এখন তাদের কাছে ক্ষমতায় বড়। আদর্শ নয় ,অর্থবিত্ত এবং ক্ষমতাই আমাদের বর্তমান সমাজে চালিকাশক্তি। রাজনীতিবিদদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবকল্যাণ।

 দেশপ্রেম ও জীবনী সাহিত্য ও সংস্কৃতি:

 

মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘোরাতে সাহিত্য-সংস্কৃতি উদ্ভাবনী শক্তি হিসেবে কাজ করে। মানুষের মধ্যে দেশের জন্য কাজ করার প্রতি অনেক সময় সাহিত্য তৈরি করে দেয়। অনেক কবিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছে অনেক সাহসী তরুণকে। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ভাষায়-

         “মাগো,ওরা বলে,
       সবার কথা কেড়ে নেবে;
        তোমার কোলে শুয়ে
        গল্প শুনতে দেবে না
        বলো, মা, তাই কি হয়?”

ভাষা আন্দোলনের উত্তরকালে অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামকে উদ্বুদ্ধ করেছে ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক রচিত সাহিত্য। যেমন ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ কিংবা “ও আমাদের দেশের মাটি “ইত্যাদি গানে উজ্জীবিত হয় এদেশের অনেক মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়।

 স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম:

 

এদেশের প্রতি যেমন প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে ,বিশ্বের প্রতিও অনুরূপ। বিশ্ব প্রেমের একটি অংশ হচ্ছে স্বদেশ প্রেম। একজন সত্যিকারের দেশ প্রেমিক কখনো অন্য দেশের অকল্যাণের কথা ভাবতে পারে না। অন্ধ জাতীয়তাবোধ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে এই দেশ প্রেম।

উপসংহার:

 

স্বদেশের প্রতি যে ব্যক্তি ভালোবাসা নেই সেই ব্যক্তি পশুর সমতুল্য। স্বদেশপ্রেম মানুষের জীবনের অন্যতম মহৎ চেতনা। আমাদের সকলকে স্বার্থহীন দেশ প্রেমিক হতে হবে। কেবল কথায় নয় ,মেধা দিয়ে, চিন্তা বুদ্ধি দিয়ে, কর্ম দিয়ে দেশপ্রেমকে স্থান দিতে হবে। এর ফলে আমাদের দেশ একদিন সত্যিকারে সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

 

স্বদেশপ্রেম রচনা

ভূমিকা:

মা, মাটি, দেশ— এ তিনের সাথে মানবমনের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। এ তিনকে নিবিড়ভাবে ভালােবাসার মধ্যেই নিহিত আছে দেশপ্রেম। বিশাল পৃথিবীর যে সুনির্দিষ্ট ভৌগােলিক অংশে মানুষ জন্মগ্রহণ করে তাই তার স্বদেশ, তার মাতৃভূমি । মানুষ তার স্বভাবজাত গুণে অনিবার্যভাবে স্বদেশের মাটি, পানি, বায়ু অর্থাৎ সবকিছুর সাথে অনুভব করে নাড়ির টান, স্বদেশ হয়ে ওঠে তার কাছে সবচেয়ে পবিত্রভূমি এবং স্বদেশের প্রতি মনে জাগে অনন্য ভালােবাসা। দেশমাতৃকার প্রতি মানুষের এ অনুভব ও ভালােবাসাই হলাে স্বদেশপ্রেম ।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ:

জন্মভূমির প্রতি মানৰ্মনের আবেগময় অনুরাগ মানুষের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। জন্মভূমির আলাে-বাতাস, পানি, ফসল মানুষকে মায়ের মমতা দিয়ে বড় করে তােলে। তার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এককথায় স্বদেশের নানা উপাদান মানবমনের বিকাশের মাধ্যমে করে তােলে পরিপুষ্ট। তাই স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি মানুষের মনে জন্ম নেয় আত্মার গভীর টান এবং চিরায়ত অকৃত্রিম ভালােবাসা। যে অনুভূতি, যে ভালােবাসা দেশের কল্যাণে প্রয়ােজনে আত্মবিসর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ মানুষের হৃদয়ে জন্মদাত্রী আর জন্মভূমিকে এক করে ভাবতে শেখায়। এ তীব্র অনুরাগই ‘স্বদেশপ্রেম’। একজন দেশপ্রেমিকের কাছে তার দেশ চির পবিত্র, চির অরাধ্য এবং স্বর্গের চেয়েও গরীয়ান। তাই দেশ ক্ষুদ্র কিংবা দরিদ্র হােক, তাতে দেশপ্রেমিকের কিছু যায় আসে না। কেননা দেশ যেমনই হােক তা দেশপ্রেমিকের কাছে অমূল্য, অতুল্য। ফলে দেশকে রক্ষা করার জন্যে সে নির্দ্বিধায় করতে পারে জীবনদান। তাই তাে স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগে কবিগুরু বলেছেন-

‘যে তােমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তােমায় ছাড়ব না মা,
আমি তােমার চরণ –
মা গাে, আমি তােমার চরণ করব শরণ, আর কারাে ধার ধারব না মা ॥
কে বলে তাের দরিদ্র ঘর, হৃদয়ে তাের রতনরাশি –
আমি জানি গাে তার মূল্য জানি, পরের আদর কাড়ব না মা।

স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ:

স্বদেশের প্রতি ভালােবাসা মানবহৃদয়ে সর্বদাই বহমান। মনের গভীর অনুরাগ থেকে জন্ম নেয়া স্বদেশপ্রেম প্রকাশ পায় বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিচিত্র কার্যকলাপের মাধ্যমে। বিশেষত দেশ ও জাতির দুর্দিনেই স্বদেশপ্রেমের পূর্ণ প্রকাশ ঘটে। দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনের মাধ্যমেই দেশের প্রতি ভালােবাসার উৎসারণ ঘটে।দেশপ্রেমের আবেগময় প্রকাশ ঘটেছে কবিগুরুর কবিতায়।

বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল –পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান ॥
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।।
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা। সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান।

জাতীয় জীবনের দুঃসময়ে স্বদেশপ্রেম প্রবল হয়ে ওঠে। কোনাে বিদেশি অপশক্তি যখন দেশকে পরাধীনতার অন্ধকারে টেনে নিতে চায় তখন স্বদেশপ্রেমই মুক্তিতে সামিল হবার জন্যে জাতির মনে চেতনা জাগায়। দুর্বার প্রাণশক্তিতে স্বদেশের সম্মান রক্ষার জন্যে মানুষকে আত্মত্যাগের মহামন্ত্র শিক্ষা দেয়। দেশপ্রেম মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একই প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ করে। কারাে কাছে মাথা নত করা নয় বরং মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে বাঁচতে শেখায়। তাই দেশপ্রেমিক আপন দেশের মর্যাদা রক্ষার জন্যে সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়। দেশপ্রেম ধনী-দরিদ্র, ক্ষুদ্র বৃহৎ সব ধরনের ব্যবধান ঘুচিয়ে একই জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার মহৎ শিক্ষা দান করে। স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে বিদেশের অপরিচিত পরিবেশে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের মাটির গন্ধ না থাকায় মন হয়ে ওঠে চঞ্চল। স্বদেশের প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্য কামনায় মনে জাগে তীব্র আকুলতা। তাইতাে কবির কামনা-

এই বাংলার আকাশ-বাতাস।
এই বাংলার ভাষা
এই বাংলার নদী, গিরি বনে।
বাঁচিয়া মরিতে আশা।’

স্বদেশপ্রেমের উপায়:

শিক্ষা, যােগ্যতা ও অবস্থানের ভিন্নতাভেদে নানান মানুষ নানান অবস্থানে থাকে। কিন্তু প্রতিটি মানুষ স্বীয় অবস্থান থেকেই দেশের উপকার সাধন করতে পারে। ছােট থেকে বড় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেওয়া যায়। দেশ ও জাতির কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্যে কিছু করার মধ্যেই দেশপ্রেম নিহিত আছে তা ছােটই হােক আর বড়ই হােক। নিজের স্বার্থ, নিজের দৈন্যদশাকে তুচ্ছ করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার মহান ব্রত গ্রহণ করতে হবে। অবস্থানভেদে কৃষক যেমন ফসল উৎপাদন করে দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারেন। তেমনি একজন। শিল্পী কিংবা সাহিত্যিক শিল্প-সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে বিশ্বদরবারে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করতে পারেন। তবে স্বদেশপ্রেমের নামে উগ্র জাতীয়তাবােধ বর্জনীয়। কেননা অন্ধ স্বদেশপ্রেম এবং উগ্র জাতীয় চেতনা মানুষকে সংকীর্ণ করে বিরােধের জন্ম দেয়।

স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত:

যুগে যুগে অনেক বরেণ্য ব্যক্তি দেশ ও জাতির কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করে স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল। দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। সারা বিশ্বের মানুষ তাদের স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালােবাসায়। তাঁদের দৃষ্টান্ত বর্তমান ও অনাগত কালের মানুষের জন্যে হয়ে থাকবে চিরন্তন প্রেরণার উৎস। এ উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব দেশপ্রেমিক অমূল্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, চিত্তরঞ্জন দাশ, তিতুমীর প্রমুখ। তাছাড়া তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক পাশা, ইতালির গ্যারিবাল্ডি, রাশিয়ার লেনিন, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, চীনের মাও সেতুং প্রমুখ দেশপ্রেমিক ব্যক্তিরা চির অম্লান হয়ে থাকবেন । আমাদের দেশের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মবিসর্জিত অসংখ্য শহিদও আমাদের দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে চিরদিন। দেশের প্রতি এসব দেশপ্রেমিকের ভালােবাসা ইতিহাসে অম্লান ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর থাকবে চিরকাল ।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম:

স্বদেশপ্রেম মূলত বিশ্বপ্রেমেরই ভিত্তি। বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধের চেতনা সার করতে না পারলে প্রকৃত স্বদেশপ্রেম সম্ভব নয় । দেশ, দেশের মাটি ও দেশের মানুষকে ভালােবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশ্ববাসীকে ভালােবাসতে শেখে। স্বদেশপ্রেমের মাধ্যমে মানুষ সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর প্রাণের মিলনে সাড়া দেয়। তাই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম আর বিশ্বপ্রেমের মধ্যে কোনাে বিরােধ নেই। স্বদেশপ্রেমের মধ্যে বিশ্ব ঐক্যের মন্ত্র প্রােথিত আছে বলেই রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়র, নিউটন, নজরুল দেশ-কালের গণ্ডি অতিক্রম করে বিশ্বের সকল মানুষের হয়েছেন। দেশমাতা আর বিশ্বমাতা যে একই সম্পর্কে বাধা তা আমরা কবিগুরুর বাণীতেই খুঁজে পাই – ও আমার দেশের মাটি, তােমার পরে ঠেকাই মাথা তােমাতে বিশ্বময়ীর–– তােমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।

উপসংহার:

স্বদেশপ্রেম মানুষের অন্যতম মহৎ গুণ। মানুষকে সকল প্রকার ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত করে বৃহৎ ও মহত্বের সন্ধান দেয় স্বদেশপ্রেম । তা মানুষের মানবিক মূল্যবােধের বিকাশ ঘটায়। প্রয়ােজনে দেশ ও জাতির কল্যাণে জীবন বিসর্জন দিতে শেখায়। তাই দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে, বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে স্বদেশপ্রেমের চেতনা অপরিহার্য। দেশগঠনের জন্যে সে মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক প্রয়ােজন যিনি এডউইন আর্নল্ডের মতাে মুক্তকণ্ঠে ঘােষণা- জীবনকে ভালােবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link