স্বাস্থ্য

কাঁধের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায়

কাঁধের ব্যথা – Shoulder Pain 

 

কাঁধের ব্যথা যাদের হয় তারাই বুঝে এর কি কষ্ট। হঠাৎ করেই কাঁধের ব্যথায় জীবন অচল হয়ে যায়। কোনো কাজ ঠিক মতো করা যায় না। কাঁধের ব্যথা হলে কি করবেন চলুন জেনে নিই।

[Those who have shoulder pain understand the pain. All of a sudden, shoulder pain brings life to a standstill. Nothing can be done right. Let’s know what to do in case of shoulder pain]

কাঁধের ব্যথা হওয়ার কারণ- Causes of shoulder pain in Bengali 

 

কাঁধের ব্যথা হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।   

 

কাঁধ জমে যাওয়া

 

কাঁধ জমে যাওয়া এমন একটি অবস্থা যখন কাঁধের নড়াচড়া সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা তখনই হয় যখন কাঁধের ভিতরের দিকের আস্তরণে অথবা কাঁধের ক্যাপসুলে কোন প্রদাহ হয়। প্রদাহের জন্য কাঁধ আঁট এবং শক্ত হয়ে যায়, এবং এর ফলে ব্যথা হয়। কাঁধে বাত (আর্থ্রাইটিস)

 

  • কাঁধের বাত (আর্থ্রাইটিস) বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। সব চেয়ে সাধারণ হচ্ছে অস্টিয়ো-আথ্রাইটিস। কাঁধের হাড়ের প্রান্তগুলিকে ঢেকে রাখা মসৃণ কার্টিলেজ যখন ক্ষয় হয়ে যায় হয় তখন এবং হাড়গুলি একে অন্যকে ঘসতে থাকে। ফলে ব্যথা হয়। এর নাম অস্টিয়ো আর্থ্রাইটিস।

 

রিউমাটইড আর্থ্রাইটিস আরেক ধরণের কাঁধের বাত। এটি একটি অটো-ইমিউন রোগ। এই রোগে সাইনোভিয়াম (হাড়ের জোড়কে পিচ্ছিল রাখে যে আস্তরণ) ফুলতে শুরু করে। এর ফলে ব্যথা হয় এবং কাঁধ শক্ত হয়ে যায় ।

 

  • এই বাত হয় আঘাত পাওয়ার পর

 

  • রোটেটর কাফ টিয়ার অ্যান্থ্রোপ্যাথি মানে হাড়ের পৃষ্ঠতল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এর থেকেও বাত হতে পারে।

 

এভ্যাস্কুলার নেক্রোসিস একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। হাতের হাড়ের উপরিভাগে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।

 

কাঁধের স্থানচ্যুতি

 

কাঁধের স্থানচ্যুতি হয় যখন কাঁধের জোড়ের শোল্ডার বলকে তার কোটর থেকে ধাক্কা মেরে বাইরে নিয়ে আসা হয়। সাধারণত পড়ে গেলে অথবা খেলার সময় এই আঘাত লাগে। কাঁধকে ঘিরে রাখা নরম টিস্যুগুলি ছিঁড়ে যায়। অনেক সময় হাড়েও আঘাত লাগতে পারে। কাঁধের স্থানচ্যুতি আংশিক বা পূর্ণ হতে পারে। যখন আংশিক স্থানচ্যুতি ঘটে, কোটর থেকে বলটি কিছুটা বেড়িয়ে আসে, আর পূর্ণ স্থানচ্যুতির সময় বলটি সম্পূর্ণ ভাবে বেড়িয়ে আসে।

 

রোটেটর কাফের গোলযোগ

 

রোটেটর কাফের গোলযোগগুলি হচ্ছে কাঁধের ব্যথার সব চেয়ে সাধারণ কারণ। শোল্ডার বল’কে ঘিরে রাখা চারটি টেনডন যেখানে একত্রিত হয়, সেই জায়গাটিকে রোটেটর কাফ বলা হয়। রোটেটর কাফ জখম হতে পারে যদি রোটেটর কাফ ছিঁড়ে যায়। রোটেটর কাফের বেশির ভাগ জখমই হয় বয়সের কারণে ক্ষয় ক্ষতির কারণে। দুর্ঘটনার কারণেও এই ক্ষয় ক্ষতি হতে পারে।

 

কাঁধের ফাটল

 

দুর্ঘটনার কারণে কাঁধের হাড় জখম হতে পারে। ক্লেভিকেল হাড়ের (কলার বোন) ফাটল হচ্ছে সব চেয়ে সাধারণ রকমের ফাটল। হিউমেরাস এর (হাতের উপরের অংশ) ফাটল বয়স্কদের মধ্যে সাধারণ, বিশেষত 65 বছর বয়সের ঊর্ধ্ব বয়সীদের।

 

 বাইসেপস টেন্ডিনাইটিস

 

বাইসেপস টেন্ডিনাইটিস একটি পরিস্থিতি যেখানে বাইসেপ পেশীর উপরের দিকের টেনডনগুলি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। রোটেটর কাফ টেনডনের ক্ষতির সাথে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোন কাজে যখন হাতকে মাথার উপর দিয়ে বারে বারে ঘোরাতে হয়, তখন এই ক্ষতি হয়।

 

বাইসেপসের টেনডন ছিঁড়ে যাওয়া পেশীকে হাড়ের সাথে জুড়ে রাখে টেনডনগুলি। আঘাতের কারণে বাইসেপের টেনডন ছিঁড়ে যেতে পারে। বা বার্ধক্যের কারণে, যখন বারে বারে ব্যবহারে টেনডনগুলির শক্তি কমে যায়, তখনও টেনডন ছিঁড়ে যেতে পারে।

 

কাঁধের ব্যথা এর চিকিৎসা – Treatment of Shoulder Pain in Bengali

 

কাঁধের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণের উপরে। সময়মত নির্ণয় এবং চিকিৎসা জরুরী – এতে কাঁধের আরও ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর রোগের ইতিহাস শুনে এবং জোড়ার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যথার কারণ এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে। এ ছাড়া রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে এবং প্রয়োজনে এমআরআইয়ের সাহায্য নিতে হয়।

 

  •    কাঁধকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে, যাতে টিস্যু ইনজুরি ও ব্যথা কম হয়।

 

      –     বরফের টুকরো টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে।

 

      –     কাঁধে ইলাসটো কমপ্রেসন ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।

 

       –    এনালজেসিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন।

 

     –      ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর জোড়া নমনীয় এবং পেশির ভারসাম্য ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

 

       –     ফিজিক্যাল থেরাপি যেমন : এসডব্লিউডি ইউএসটিআইআরআর ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়।

 

  •      জয়েন্টে স্টেরয়েড ইনজেকশন পুশে সাময়িক ব্যথার কষ্ট লাঘব হয়।

 

আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসা

 

প্রাথমিক বা কনজারভেটিভ চিকিৎসায় নিরাময় না হলে, পেশি ইনজুরি হলে, জোড়া বারবার ছুটে গেলে, জোড়ায় অতিরিক্ত হাড় হলে এবং জয়েন্ট স্পেস কমে গেলে আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে কাঁধে আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করে যথোপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাই কাঁধে ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকুন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link