পৃথিবীর ১০টি অমীমাংসিত রহস্য

রহস্য

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও অমীমাংসিত কিছু রহস্য সম্পর্কে জানতে চান? আমাদের পৃথিবীতে রহস্যময় ব্যাপার এর অভাব নেই। অভাব নেই অমীমাংসিত রহস্যের।

এমন অনেক বিষয় রয়েছে যার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। তবে আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও অমীমাংসিত ১০টি রহস্য সম্পর্কে কথা বলব।

 

 

জানার চেষ্টা করব এই সকল অমীমাংসিত রহস্য সম্পর্কে। 

 

১। পৃথিবীতে এতো পানি কোথা থেকে এলো?

আমাদের এই পৃথিবীর মোট আয়তনের তিন ভাগের দুই ভাগ হলো পানি। শতাংশের হিসাবে পৃথিবীর ৭০% হল পানি।  যেই পানির কারণে আমাদের পৃথিবীর নাম হয়েছে নীল গ্রহ।

সৃষ্টি হয়েছে আমাদের বসবাস করার মত পরিবেশ। কিন্তু আজকে যুক্তি সচেতন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে পৃথিবীর এতো পানি কোথা থেকে এলো?

আপনি যদি পৃথিবীর ইতিহাস নিয়ে হালকা পাতলা নাড়াচাড়া করেন তাহলে বুঝতে পারবেন শুরুতে এই পৃথিবী ছিল খটখটে শুকনো পাথুরে একটি গ্রহ। তবে এই শুকনো গ্রহে কিভাবে এত পানি এলো?

 

বিজ্ঞানীরা এখনো এর সঠিক কারণটি জানেন না। বিষয়টি এখনো একটি অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে রয়েছে।

তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হল, পৃথিবীর উপরে বরফে ভরা বিশালাকৃতির বেশকিছু গ্রহাণু আছরে পরে। যার ফলেই পৃথিবীতে এত পানি আসে।

 

২। কিভাবে অক্সিজেনের লেভেল স্থিতিশীল হল?

যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় কোন জিনিসের অভাবে মানুষ সবচেয়ে দ্রুত মারা যায়? আপনি নিশ্চয়ই উত্তরটি জানেন। এর একমাত্র এবং সঠিক উত্তরটি হলো অক্সিজেন।

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন একসময় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ছিল না। তখনো কিন্তু পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব ছিল।

 

 

প্রায় ২.৪ বিলিয়ন বছর আগে সর্বপ্রথম আমাদের বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন যুক্ত হয় এটি আমাদের বায়ুমন্ডলে যুক্ত করে মাইক্রোস্কোপিক একটি জীব। যার নাম সায়ানোব্যাকটেরিয়া।

এই ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের জীবন যাপন পদ্ধতির উৎপাদ হিসাবে অক্সিজেন উৎপন্ন করত। এটি আমাদের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। এ পর্যন্ত সবকিছুই পরিষ্কার।

রহস্যের কিছুই নেই তাই না? রহস্য এর পরবর্তী বিষয়ে। এরপরে বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন সময় অক্সিজেনের মাত্রা ওঠানামা করতে থাকে। কিন্তু প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা স্থিতিশীল হয়।

সেই থেকে আজ পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে। এটি কিভাবে সম্ভব? আজও এটি বিজ্ঞানীদের কাছে একটি অমীমাংসিত রহস্য।

 

৩। ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের কারণ

ক্যাম্বিয়ান বিস্ফোরণ বিগব্যাং বিস্ফোরণের মত নয়। এটি আদতে ঐরকম কোন বিস্ফোরণ নয়। এখানে এই বিস্ফোরণ দাঁড়া জীবনের উৎপত্তিকে বোঝানো হয়েছে।

এটি প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে জটিল জীবনের উৎপত্তিকে বোঝায়। এই সময়ের পূর্বে পৃথিবীর জীবন ছিল অত্যন্ত সরল। জীবনের বেশিরভাগ ফর্ম ছিল ব্যাকটেরিয়া। কিছু ইউক্যারিওটিক জীব এবং সরল কিছু উদ্ভিদ।

কিন্তু ক্যামব্রিয়ান আমলে হঠাৎ করেই জটিল জীবনের উৎপত্তি শুরু হয়। ক্যাম্বিয়ান যুগে হঠাৎ করেই জীবের বিবর্তন দ্রুত গতিময় হয়ে ওঠে।

বর্তমান সময়ের সকল জীবিত পূর্বপুরুষদের উৎপত্তি ও বিবর্তনের শুরু মূলত ক্যামব্রিয়ান যুগে। কিন্তু কেন হঠাৎ করে এই সময়ে জীবনের বিবর্তন এত দ্রুত হয়ে উঠলো সে বিষয় আজও অমীমাংসিত রহস্য।

তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে অক্সিজেনের স্থিতিশীলতা এখানে একটি প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু তারা নিশ্চিত নন সত্যি তাই ঘটেছিল কিনা?

আবার অন্য এক দল মনে করেন যে পৃথিবীর তাপমাত্রা তখন সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। তার সাথে সাথে অগভীর জলজ পরিবেশ জীবন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

৪। ঝড় বৃষ্টির মতো আমরা কি কখনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারব?

আমরা এখন মোটামুটি নিশ্চিতভাবে ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারি? বুঝতে পারি কখন ঝড় বৃষ্টি  সৃষ্টি হচ্ছে। এবং এর পূর্বাভাস দিতে পারি।

কিন্তু এখনো আমরা নির্ভুলভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। যদি আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু এখনো সফল হতে পারিনি।

তবে আমরা জানি কিভাবে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভূগর্ভস্থ শিলাগুলির তীব্র কম্পনের ফলে।

কিন্তু আমরা এখনো এর পূর্বাভাস দেওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছয়নি। কেন আমরা এর পূর্বাভাস দিতে পারিনা এটি এখনও একটি অমীমাংসিত রহস্য।

#৫। টেকটনিক প্লেট শুরু হওয়ার ঘটনা

আমরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারিনা কারণ আমরা এ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত ভাবে জানি না।

তবে এটা জানি টেকটনিক প্লেট নাড়াচাড়া ফলে ভূমিকম্প ঘটে। আমাদের পৃথিবীর ভূত্বক বেশ কয়েকটি টেকটনিক প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। টেকটনিক প্লেট গুলো স্থানান্তরিত হতে পারে।

এক বা একাধিকবার টেকটনিক প্লেট স্থানান্তরিত হয়েছে। যার ফলাফল আমরা আমাদের ভূত্বকে দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এই প্লেটগুলির পিছনের রহস্য এখনো আমরা উদঘাটন করতে পারেনি।

কিভাবে এটি শুরু হয়েছে তাও জানতে পারেনি। এই বিষয়টিও পৃথিবীর একটি বড় অমীমাংসিত রহস্য।

 

 

৬। পৃথিবীর কোরে কি আছে?

যদিও আজ আমরা পৃথিবীর সীমানা ছেড়ে মঙ্গলে অভিযান করছি। আমরা আমাদের মহাকাশযান গুলিকে ছড়িয়ে দিয়েছি সৌরজগতের দূর-দূরান্তে।

কিন্তু আমরা কি সত্যিই আমাদের পৃথিবীর কোরে কি আছে তা জানতে পেরেছি? না আমরা তা পারিনি। এই বিষয়টি আমাদের কাছে আজও অমীমাংসিত রহস্য হয়েই রয়েছে।

আমরা জানি যে পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচের স্তরটি  সিলিকা শিলা দিয়ে আবৃত। কিন্তু আমাদের পৃথিবীর কোর বা যাকে এক কথায় পৃথিবীর হাট বলা যায় সে সম্পর্কে কি জানি? এটি আজও আমাদের কাছে রহস্য।

৭। ডাইনোসরদের ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছিল?

ডাইনোসর একসময় এই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীটি আজ বিলুপ্ত। এদের অস্তিত্ব শুধুমাত্র এদের জীবাশ্মতেই বিদ্যামান। আর এদের দেখি আমরা জাদুঘরে আর বিভিন্ন সিনেমাতে।

ঠিক কি কারণে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে এই প্রাণীগুলো পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল? এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে। এর ভিতর একটি হচ্ছে বিশাল আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল।

অন্য তত্ত্ব বলে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর কারণে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যদিও উভয় ঘটনাটি একই প্রভাব হত।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধুলা ও ছাইয়ে ভরে যেত। সালোকসংশ্লেষণ এর বিষয়গুলি আটকে যেত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছে সেটি আমাদের কাছে একটি অমীমাংসিত রহস্য।

 

৮। কিভাবে চাঁদ সৃষ্টি হয়?

 

চাঁদের সৃষ্টি নিয়ে এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। চাঁদের সৃষ্টি সম্পর্কিত একাধিক মতবাদ রয়েছে। তবে নিশ্চিত কোনো তথ্য প্রমাণ নেই।

কেউ কেউ বলেন চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবী এবং ছোট কোন গ্রহের সংঘর্ষের ফলে।

আমরা চাঁদে যে মিশন করেছি তার ফলাফল অবশ্য দেখায় যে চাঁদের রাসায়নিক গঠনের সাথে পৃথিবীর রাসায়নিক গঠনের অনেক মিল রয়েছে।

বিষয়টি এমনও হতে পারে চাঁদ মূলত পৃথিবীর থেকে আলাদা কিছু নয়। হয়তো এটি পৃথিবীর একটি অংশ।

আবার একটি অংশ বলে চাঁদ মূলত আলাদা একটি গঠন। পৃথিবী তার মধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা চাঁদ কে ধরে রেখেছে। আসলে সত্যি কোনটি আমাদের কাছে রহস্য।

 

 

৯। পৃথিবী কিভাবে তার নাম পেল?

 

পৃথিবী কিভাবে তার নাম পেল এটি একটি মজার রহস্য। মজা তো বটেই তবে সেইসঙ্গে রহস্যময়ও।

পৃথিবী হলো সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যার নাম রোমান বা গ্রীক দেবতাদের নাম থেকে আসেনি। অবশ্য তাঁর একটি কারণ রয়েছে।

আসলে তখনকার মানুষেরা জানতোই না যে পৃথিবী আলাদা একটি গ্রহ। পৃথিবীর প্রাচীন নামটি আসে ইংরেজি থেকে ‘’আর্থ’এবং জার্মান শব্দ ‘গ্রাউন্ড’ থেকে। তবে কে বা কারা এই নামকরণ করেছিলেন সেটি আজও রহস্য।

 

 

১০। সাইবেরিয়ান ক্রেটারগুলির সৃষ্টির রহস্য

 

সাইবেরিয়ান ক্রেটারগুলি পৃথিবীর অন্যতম উদ্ভট এবং রহস্যময় স্থান। এগুলি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মতামতের শেষ নেই। কেউ বলেন এগুলো উল্কা পতনের ফল।

আবার কেউ বলেন এগুলো এলিয়েনরা সৃষ্টি করেছে। এরকম অনেক মতবাদ রয়েছে এগুলো নিয়ে। ২০১৪ সালে এই গর্তগুলি আবিষ্কারের পর থেকেই এই রহস্যের জন্ম।

সেই থেকে গর্ত গুলো বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। আকার আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি কেন ঘটছে তাও বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করতে পারেননি। আমাদের পৃথিবীর অনেক অমীমাংসিত রহস্য এর মধ্যে এটি অন্যতম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *